বিএনপির প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতা সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলী কথিত ‘আয়নাঘর’ থেকে ফিরে আসার প্রত্যাশায় মা সূর্যবান বিবি পথ চেয়ে বসেছিলেন। তার আদরের বাচ্ছাসহ প্রিয়তমা স্ত্রী তাহমিনা রুশদীর লুনাও ছিলেন অপেক্ষায়। সিলেটসহ সারাদেশে, বিশেষ করে বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জে চলছিল এক অপেক্ষার পহর। দলের নেতাকর্মীরা তীর্থের কাকের মতো তাকিয়ে ছিলেন, যেন একদিন তারা শুনবেন—নিখোঁজ নেতা ফিরে এসেছেন, মুক্তি পেয়েছেন গুমঘর থেকে। তবে ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকা থেকে নিখোঁজ হওয়ার দীর্ঘ ১২ বছর ধরে সিলেটের রাজনীতিতে আলোচিত এই নেতা তার ফিরে আসার স্বপ্ন আর হলো না পূর্ণ।
সম্প্রতি প্রকাশিত ‘রুপালী বাংলাদেশ’ নামের নতুন একটি জাতীয় সংবাদপত্রে এক প্রতিবেদনে এম ইলিয়াস আলীকে নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে এমন এক নতুন তথ্য। ওই প্রতিবেদনের পর সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে তার নির্বাচনী এলাকায় এ নিয়ে চলছে গুঞ্জন। গুম হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নানা অভিযোগ ও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কথা উঠলেও, ওই প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এবং কয়েকটি বিশেষ সূত্রের বরাত দিয়ে উঠে এসেছে ভয়াবহ একটি তথ্য—গুম হওয়ার পরই তাকে হত্যা করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে দুঃসংবাদটি জানান। এই সংবাদটি সিলেটসহ কেউই আশা করেননি। তাজুল ইসলাম জানান, আটক হওয়া গুমঘরের প্রধান হোতা মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানের বরাতে জিয়াউলের নেতৃত্বে এম ইলিয়াস আলীকে গুমের পর হত্যা করা হয়। জিয়াউল আহসান এই তথ্য জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন এবং আদালতেও এটি জানিয়েছেন।
আরেকটি সূত্রে জানা যায়, অবসরপ্রাপ্ত এক পুলিশ কর্মকর্তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভে এসে দাবি করেন, এম ইলিয়াস আলীকে গুমের কয়েকদিনের মধ্যেই হত্যা করা হয়েছে। তার দাবি অনুযায়ী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এবং জিয়াউল আহসানের মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্র হিসেবে এই তথ্য নিশ্চিত না হওয়ায় সেটি তখন বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি।
এর আগে, গত ২০ আগস্ট রাতে লুনা তার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দেন- ‘… প্রিয় ইলিয়াস আলীর জন্য দোয়া করবেন। …আমরা শুধু পরিবারের পক্ষ থেকে বলছি তার (ইলিয়াস আলী) জন্য দোয়া করতে। আমাদের এখনো দৃঢ় বিশ্বাস- তিনি বেঁচে আছেন। প্রথম থেকেই আমরা এ আশা পোষণ করে আসছি। তাই সব সময় তাঁর সুস্থতার জন্য বিভিন্ন স্থানে দোয়া করিয়েছি বা করাচ্ছি।’
এই পোস্টের পর সিলেটসহ সারা দেশে নতুন করে এম ইলিয়াস আলীর ফিরে আসার আলোচনা শুরু হয়। সিলেট ও তার নির্বাচনী এলাকার বিএনপির নেতাকর্মীরা ফের তাকে ফিরিয়ে আনার দাবিতে সরব হন। তারা মিছিল, মিটিং ও দোয়া মাফিলের মাধ্যমে প্রিয় নেতাকে ফিরে পেতে চান। তাদের এই দাবির সাড়া সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং নেতাকর্মীরা নতুন করে আশার আলো দেখতে শুরু করেন। হয়তো একদিন তাদের প্রিয় নেতা ফিরে আসবেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নিখোঁজের পর দীর্ঘ ১২ বছর ইলিয়াস আলীর পরিবার ও বিএনপি তার ফেরার ব্যাপারে আশাবাদ দেখালেও, তারা জানতেন যে গুমের পরপরই হাসিনা সরকার তাকে হত্যা করেছে।
সর্ম্পকিত খবর: বিশ্বনাথে ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা: ২৯ জনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আদালতে মামলা
এম ইলিয়াস আলীকে গুমের পর থেকেই সিলেটসহ সারা দেশে তার ফিরে আসার আশায় ছিলেন দলের নেতাকর্মীরা এবং তার পরিবার। দীর্ঘ ১২ বছর পর তার গুম হওয়ার ঘটনা নিয়ে নতুন তথ্য প্রকাশিত হলেও, এখনও তার নিখোঁজ হওয়ার রহস্য পরিষ্কার হয়নি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তার মৃত্যু বা গুমের ঘটনা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে। এম ইলিয়াস আলীর পরিবারের এখনও দৃঢ় বিশ্বাস তিনি বেঁচে আছেন। তবে তার ফিরে আসার আশা এখনো এক গভীর প্রশ্ন হয়ে রয়ে গেছে। ভবিষ্যতে তাকে নিয়ে আরও কোন নতুন তথ্য বা তদন্ত আসবে কিনা, তা সময়ই বলে দিবে। সিলেটের রাজনীতিতে তার অভাব এবং তার ফেরার জন্য অপেক্ষার গাঁথা যেন আরও হতে থাকে দীর্ঘ।