Search
Close this search box.

ইন্টারনেটের সেই ভয়ঙ্কর জগৎ যা ঈমানকে ধ্বংস করে

ইন্টারনেটের সেই ভয়ঙ্কর জগৎ যা ঈমানকে ধ্বংস করে
ইন্টারনেটের সেই ভয়ঙ্কর জগৎ যা ঈমানকে ধ্বংস করে
ইন্টারনেটের সেই ভয়ঙ্কর জগৎ যা ঈমানকে ধ্বংস করে
ইন্টারনেটের সেই ভয়ঙ্কর জগৎ যা ঈমানকে ধ্বংস করে
Facebook
Twitter
WhatsApp

সময়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দিন দিন ইন্টারনেটজগতে মানুষের বিচরণ বাড়ছে। সব বয়সী ও প্রায় সব পেশার মানুষই কমবেশি ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। স্ট্যাটিস্টার তথ্য মতে, বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৫.৪৫ বিলিয়ন। বাংলাদেশেও দিন দিন বাড়ছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা।

গণমাধ্যমের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ১৩ কোটি এক লাখ। ২০২৪-এর শেষ দিকে এসে এটি আরো বেড়ে যাওয়ার আশা করা হচ্ছে। ইন্টারনেট ব্যবহার যেমন দিন দিন বাড়ছে, তেমনি ইন্টারনেটকেন্দ্রিক অপরাধও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভার্চুয়ালজগতে তৈরি হয়েছে ভয়ংকর সব অপরাধের গলি।

এমন পরিস্থিতিতে একজন মানুষ চার দেয়ালের ভেতর থেকেও বড় বড় অপরাধে লিপ্ত হতে পারে। তাই আমাদের উচিত সতর্ক থাকা যেন আমাদের সন্তানরা ইন্টারনেটজগতের এসব গলিতে প্রবেশ না করে। কেননা হাদিস শরিফে এসেছে, “তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক (দায়িত্বশীল) এবং তোমরা প্রত্যেকেই জিজ্ঞাসিত হবে… একজন পুরুষ তার পরিবারের রক্ষক, সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।” (বুখারি, হাদিস : ৫১৮৮)

বর্তমানে উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা ইন্টারনেটের প্রতি বেশি আসক্ত। ভার্চুয়াল দুনিয়ার মরীচিকা তাদের বেশি আকর্ষণ করে। বিকৃত বিনোদন, ফ্রিতে দামি ডিজিটাল প্রডাক্ট হাতিয়ে নেওয়া কিংবা শর্টকাটে বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন তাদের কখনো কখনো ইন্টারনেটের অন্ধকার জগতে নিয়ে যায়, যা তাদের ঈমান ও জীবন দুটিকেই হুমকিতে ফেলে দেয়। ইন্টারনেটের একটি ভয়ংকর জগৎ হলো ডার্ক ওয়েব।

ডার্ক ওয়েব হল অনলাইনভিত্তিক ভয়ংকর অপরাধ জগত, যা মানুষের কল্পনার চেয়েও ভয়ংকর। ডার্ক ওয়েব ব্যবহারকারীরা নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রেখে নানা ধরনের বেআইনি কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে, যেমন—হ্যাকিং, মাদক বিক্রি, অস্ত্র বিক্রি, কপিরাইট লঙ্ঘন, চোরাচালান, গুপ্তহত্যা, পর্নোগ্রাফি, মানবপাচার ইত্যাদি ভয়াবহ অপরাধ।

ডার্ক ওয়েবে বেশিরভাগ উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা যায় মূলত বিভিন্ন মূল্যবান ডিজিটাল পণ্য, যেমন—দামি সফটওয়্যার, বেস্ট সেলার বই, সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা, গান ইত্যাদির পাইরেটেড কপি পেতে। যেহেতু এসব কপিরাইট লঙ্ঘন করা হয় এবং পরিচয় গোপন রাখা হয়, তাই দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয় না। অথচ ডিজিটাল পণ্যের স্বত্ব সেই পণ্যের নির্মাতার হক। তা পাইরেসি লঙ্ঘন করে ব্যবহার কিংবা বাজারজাত করা অন্যের হক নষ্ট করার শামিল। রাসুল (সা.) বলেছেন, “কারো সম্পদ তার মনোতুষ্টি ছাড়া অন্যের জন্য হালাল নয়।” (বায়হাকি)

ডার্ক ওয়েবের জগতে এটি তো সবচেয়ে ছোট একটি অপরাধ। যেহেতু এটি অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য, তাই আস্তে আস্তে অনেকে বড় বড় অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এখানে ভয়ংকর সব মাদক সস্তায় পাওয়া যায় এবং দুর্ধর্ষ সামরিক অস্ত্র পরিচয় গোপন রেখে কেনা যায়। ক্ষতিকর এসিড, নকল গহনা, নকল চেক, নকল ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি সহ ক্ষতিকর সব কিছুই পাওয়া যায় এখানে। আর এই ব্ল্যাক মার্কেটগুলো এতটাই সুরক্ষিত যে এখানকার ক্রেতা-বিক্রেতাকে চিহ্নিত করা প্রায় অসম্ভব।

সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো, এখানে পেশাদার খুনি পর্যন্ত ভাড়া করা যায়, যারা ক্রিপ্টোকারেন্সির বিনিময়ে মানুষ খুন করে। এ ছাড়া সন্ত্রাসীরা কীভাবে নানা অপরাধের ছক আঁটবে, অবৈধ বিস্ফোরক বাড়িতে বসে কিভাবে তৈরি করবে, এমন অপরাধমূলক কাজের টিউটোরিয়ালও এখানে পাওয়া যায়। এটি বিকৃত রুচির বিনোদনের বিশাল ভাণ্ডার, যার প্রতিটি কাজই জঘন্য, হারাম ও শয়তানের কর্ম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের শয়তানের যাবতীয় কর্ম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, “হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তি ও ভাগ্য নির্ধারক তীর ঘৃণিত শয়তানি কাজ, তোমরা তা বর্জন করো, যাতে তোমরা সাফল্যমণ্ডিত হতে পারো।” (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৯০)

আরও পড়ুন: মৃত্যুর যন্ত্রণার কঠিন বাস্তবতা – মুমিনের জীবনের এক অবধারিত সত্য

আরেকটি বিপদের কথা হলো, ডার্ক ওয়েবের পরতে পরতে বহু হ্যাকার ওত পেতে বসে থাকে। ফলে ব্যবহারকারী যখন কোনো লিংকে ক্লিক করে তখন তার ডিভাইস ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়। অনেক ক্ষেত্রে হ্যাকাররা ব্যবহারকারীর ডিভাইসের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়, এমনকি তার ডিভাইসের ক্যামেরা অ্যাক্সেসও তাদের দখলে থাকে, যা ব্যবহারকারী টেরও পায় না। ফলে তার অজান্তেই তার অনেক স্পর্শকাতর বিষয় ডার্ক ওয়েবের বাজারে বিক্রি হতে থাকে। অথবা তার ডিভাইস ব্যবহার করে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার কারণে তাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর রোষানলে পড়তে হতে পারে। এজন্যই মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে তাঁর বান্দাদের সতর্ক করেছেন, “তোমরা জালিমদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না, তাহলে আগুন তোমাদের স্পর্শ করবে, আর তখন আল্লাহ ছাড়া কেউ তোমাদের অভিভাবক হবে না, অতঃপর তোমাদেরকে সাহায্যও করা হবে না।” (সুরা : হুদ, আয়াত : ১১৩)

কেননা জালিমদের সাহচর্য ও তাদের অনুকরণ মানুষকে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেয়। তাই শুধু দেখার জন্যও এই জগতে যাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত, কারণ এখানকার একটি ভুল পদক্ষেপের জন্য চরম মূল্য দিতে হতে পারে। প্রত্যেক মুমিনের উচিত এ রকম সর্বনাশা কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের ও নিজেদের স্বজনদের দূরে রাখা।

বিশ্বনাথনিউজ২৪ডটকম / বিএন২৪