‘বাবা’ শব্দটি শুনলেই কারো মনে ভেসে উঠে একজন বন্ধু ভাবাপন্ন মানুষ। আবার কারো মনে ভেসে উঠে গভীর একটি ভাবমূর্তি। তবে বাবা যেমনই হোক না কেন বাবাকে পাঁচশত কিংবা হাজারো শব্দে আঁকা সম্ভব নয়। বাবা হলেন সম্পূর্ণ একটি উপন্যাস, যার প্রতিটি পাতায় পাতায় থাকে নানা ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা, পরিবারের জন্য সর্বস্ব বিসর্জন,আক্ষেপ, বুকে কষ্টের পাহাড় চেপে সন্তানের ‘বাবা’ ডাক শুনে হাঁসি দেওয়ার ক্ষমতা। শরীরের রক্ত বিক্রি করেও পরিবারের সুখ যে নিঃস্বার্থভাবে কামনা করে তিনি হলেন বাবা।
এই বাবা নামক উপন্যাসটির সারাংশ হলো, আমার পরিবার ও আপনজনেরা ভালো থাকুক। তাদের জন্য আমি সর্বস্ব দিতে প্রস্তুত। বাবা হলেন সন্তানের সাহস দাতা, স্বপ্ন পুরনের সোনালী হাতিয়ার। অনেকেই বলে বাবা বটবৃক্ষ, আবার অনেকে বলে ঝুম বৃষ্টিতে বাবাই মাথার উপর ছাতা। যে যাই বলুক আমার বাবাই আমাদের অনুপ্রেরণার বাতিঘর। বাবারাই হলেন ঘর্মাক্ত শরীরে বাড়ী ফিরে ক্লান্তি মাখা হাঁসিতে কষ্ট লুকানো মানুষ। বাবার শাসনে সূর্যের প্রখরতা থাকলেও বাবা হচ্ছেন সেই সূর্য। তিনি না থাকলে অন্ধকারে ছেয়ে যায় সবকিছু।
আমার বাবা আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় ও আদর্শ মানুষ। আমরা পাঁচ ভাই দুই বোনের ছোট বড় কোন ইচ্ছা অপূর্ণ রাখেননি।ছোটবেলা থেকে যেমন আদর যত্নে আমাদের আগলে বড় করেছেন ঠিক তেমনি ন্যায় নীতিতে আমার বাবা ছিলেন অবিচল। বাবার আদর্শ এবং অনুপ্রেরনায় আমাদের পথচলা। কিভাবে মানুষের সাথে কথা বলতে হয়, কিভাবে মানুষকে সম্মান করতে হয় আমার বাবার কাছে শেখা। মোটকথা আমার বাবা আমাদের সর্বপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। তার সাথের স্মৃতিগুলো সব সময়ই আনন্দময়, সুমধুর এবং শিক্ষনীয়। বাবা শুধু পথপ্রদর্শকই নন, তিনি পরম বন্ধুও বটে। আজ বাবা নেই কিন্তু সেই মমতা ভরা হাতের স্পর্শ এখনও আমার ও আমাদের পরিবারের সকলের মনে সতেজ হয়ে আছে। বাবা শিখিয়েছেন কিভাবে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে সৎ এবং নিষ্ঠাবান থাকতে হয়। কখনও হয়তো মুখ ফুটে বলা হয়নি, বাবা তোমাকে অনেক ভালবাসি। সত্যি বলতে কি বাবাকে কতটা ভালবাসি তা ছোট্ট পরিসরে বলে শেষ করা যাবেনা। বাবা এমন একটা শব্দ, যেখানে প্রাপ্তির কোনো শেষ নেই। আর যাদের বাবা নেই তারাই জানে বাস্তবতা কতটা কঠিন। চলার পথে হোঁচট খেলে টেনে তোলার যখন কেউ থাকেনা তখন বাবাই সেই টেনে তোলার হাতিয়ার। পৃথিবীর সবকিছু একদিকে আমাদের বাবা অন্যদিকে। আমার জীবনের প্রতিটা পদে পদে আমি বাবার সাপোর্ট পেয়েছি। যা বলে শেষ করা যাবেনা।
বাবা আমাদের শিখিয়েছেন বিত্তবান মানুষ হওয়ার চেয়ে চিত্তবান মানুষ হওয়া অনেক জরুরী। আমিও সেই চিত্তবান মানুষ হয়ে বেঁচে থাকতে চাই। বাবার সততা আর নৈতিকতা পুঁজি করেই পথ চলছি। আজ তিন সপ্তাহ হয়ে গেলো আমার বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। বাবার অভাব আজ প্রতি মূহুর্ত আমাকে কষ্ট দেয়। কিন্তু তার স্মৃতি আজ মানুষের তরে হাত বাড়ানোর শক্তি যোগায়। আমার আদর্শবান বাবার প্রতি রহিল শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। বাবার কর্ম, মানবতার প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা, গরীব অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিতের পাশে দাঁড়িয়ে তাদেরকে শক্তি যোগানসহ সকল নেক কর্মকান্ড ইতিহাস কখনও অস্বীকার করবেনা।
আমার বাবা (মরহুম আলহাজ্ব আব্দুল হান্নান ) গত ১২ই অক্টোবর রাতে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে পাড়ি দিয়েছেন। তিনি জীবনের কৈশোর, যৌবন ও শেষ বয়সটাও মানবতার সেবায় কাটিয়েছেন। গ্রামে অবস্থিত বায়তুল আমান জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠা, প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ একাধিক শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ছিল বাবার সম্পৃক্ততা মানুষের প্রতি ছিল অগাধ বিশ্বাস। ছিল ভালবাসা। আমার বড় ভাইকে কাছে এনে বলেছিলেন ‘আমার অবর্তমানে তুমিই এ পরিবারের কর্তা। ভালবাসার জালে তুমি সকলকে আগলে রেখো চিরদিন। আমার রেখে যাওয়া প্রতিষ্ঠান খাজাঞ্চী একাডেমির প্রতি নজর রাখিও। আমাকে যারা ভালবাসতো এবং যারা ভালবাসেনি তাদের সকলকে স্নেহের বাঁধনে রাখিও’। আজ বাবা নেই কিন্ত একটি মুহূর্তের জন্য বাবাকে ভুলতে পারিনি। মনে পড়ে অবিরত। বাবার স্মৃতিগুলো বুকে ধারণ করে বেঁচে থাকবো আজীবন। বাবা বেঁচে থাকবেন আমাদের সকলের প্রানের মণিকোঠায়। আল্লাহ বাবাকে জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম দান করুক, এই প্রত্যাশা মহান মাবুদের দরবারে