Search
Close this search box.

মৃত্যুর যন্ত্রণার কঠিন বাস্তবতা – মুমিনের জীবনের এক অবধারিত সত্য

মৃত্যুর যন্ত্রণার কঠিন বাস্তবতা - মুমিনের জীবনের এক অবধারিত সত্য
মৃত্যুর যন্ত্রণার কঠিন বাস্তবতা - মুমিনের জীবনের এক অবধারিত সত্য
মৃত্যুর যন্ত্রণার কঠিন বাস্তবতা - মুমিনের জীবনের এক অবধারিত সত্য
মৃত্যুর যন্ত্রণার কঠিন বাস্তবতা - মুমিনের জীবনের এক অবধারিত সত্য
Facebook
Twitter
WhatsApp

মৃত্যু এক অবধারিত সত্য। মৃত্যু থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার কোনো উপায় নেই। আমরা যেখানেই থাকি না কেন, মৃত্যু আমাদের দুয়ারে উপস্থিত হবেই। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘তোমরা যেখানেই থাকো, মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই; চাই তোমরা সুরক্ষিত কোনো দুর্গেই থাকো না কেন।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৭৮)।

মৃত্যু যেমন অবধারিত, মৃত্যুযন্ত্রণাও তেমনি অনিবার্য। তবে ঈমানের হালত ও অবস্থা ভেদে মৃত্যুযন্ত্রণা কম-বেশি হয়। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘মৃত্যুর যন্ত্রণা সত্যিই আসবে। হে মানুষ! এটাই সেই জিনিস, যা থেকে তুমি পালাতে চাইতে।’ (সুরা : ক্বফ, আয়াত : ১৯)।

আরেকটি আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হায়! তুমি যদি ওই জালিমদের দেখতে, যারা মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করবে।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৯৩)।

মহানবী (সা.)-এর চোখে মৃত্যুযন্ত্রণা

হিজরি ১১তম বছর। রবিউল আউয়াল মাসের শুরু থেকেই প্রিয়তম রাসুল (সা.) অসুস্থ ছিলেন। প্রচণ্ড জ্বর ও মাথা ব্যথা, যা দিন দিন বেড়েই চলছিল। জ্বরের প্রকোপ ছিল সাধারণ মানুষের চেয়ে বহুগুণ বেশি। ১২ রবিউল আউয়াল, সোমবার। প্রিয়তম রাসুল (সা.) আম্মাজান আয়েশা (রা.)-এর কোলে মাথা রেখে শুয়ে ছিলেন।

তাঁর তীব্র কষ্ট হচ্ছিল। একটি পানির পাত্রে হাত ভিজিয়ে সেই ভেজা হাত তিনি চেহারায় বোলাচ্ছিলেন এবং বলছিলেন—‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ইন্না লিল মাউতি সাকারাত।’ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, নিশ্চয়ই মৃত্যুর কঠিন যন্ত্রণা আছে। তারপর তিনি হাত প্রসারিত করে বলতে লাগলেন, ‘আল্লাহুম্মা বির রফিকিল আলা।’ এরই মধ্যে তাঁর মৃত্যু হলো এবং তাঁর হাত নুয়ে পড়ল।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০২৯)

প্রিয়তম রাসুল (সা.)-এর মৃত্যুযন্ত্রণা স্বচক্ষে দেখে আম্মাজান আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) আমার গলা ও বুকের মাঝে মৃত্যুবরণ করেন। আর তাঁর মৃত্যুযন্ত্রণা দেখার পর আমি অন্য কারো মৃত্যুর কষ্টকে কখনো অপছন্দ করি না।’ (বুখারি, হাদিস : ২১৩৮)

আরও পড়ুন: জানা গেল রমজান শুরুর সম্ভাব্য তারিখ

শাদ্দাদ বিন আওস (রা.)-এর চোখে মৃত্যুযন্ত্রণা

শাদ্দাদ বিন আওস (রা.) ছিলেন একজন মুহাদ্দিস সাহাবি। তাঁর থেকে রাসুল (সা.)-এর ৫০টিরও বেশি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। ৫৮ হিজরিতে ৭৫ বছর বয়সে তিনি ফিলিস্তিনে ইন্তেকাল করেন। বাইতুল মাকদিসে বাবুর রহমতের পাশে তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

মৃত্যুযন্ত্রণার ভয়াবহতা প্রসঙ্গে বিখ্যাত এই সাহাবি বলেন, ‘দুনিয়া ও আখিরাতে মৃত্যুই মুমিনের জন্য সবচেয়ে কঠিন। মুমিনের জন্য মৃত্যুর চেয়ে কঠিনতর কিছু নেই। এটি করাত দিয়ে চিরার চেয়ে কঠিন, কাঁচি দিয়ে কাটার চেয়ে যন্ত্রণাদায়ক এবং ফুটন্ত ডেগে সিদ্ধ হওয়ার চেয়েও তীব্র কষ্টকর। যদি মৃত কোনো মানুষকে জীবিত করা হতো, আর সে যদি দুনিয়াবাসীকে মৃত্যুযন্ত্রণা কেমন তা জানিয়ে দিত, তাহলে মানুষ কখনো জীবনে সুখ খুঁজে পেত না এবং ঘুমেও স্বাদ অনুভব করতে পারত না।’ (আল ইহয়া : ৪/৪৬৩)।

আমর ইবনুল আস (রা.)-এর চোখে মৃত্যুযন্ত্রণা

প্রখ্যাত মিসর বিজয়ী সাহাবি আমর ইবনুল আস (রা.) মৃত্যুযন্ত্রণা সম্পর্কে বলেছেন, ‘আল্লাহর কসম করে বলছি, মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব পর্বত যেন আমার বুকের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর আমি যেন নিঃশ্বাস নিচ্ছি সুইয়ের ছিদ্রের মধ্য দিয়ে। আমার মাথার খুলি থেকে পায়ের তালু পর্যন্ত যেন কাঁটাদার বৃক্ষশাখা দিয়ে জর্জরিত করা হচ্ছে।’ (বয়ান বিশ্বকোষ : ১৫/৬৪)।

কাব আহবার (রহ.)-এর চোখে মৃত্যুযন্ত্রণা

আমিরুল মুমিনিন উমর (রা.) কাব আহবার (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে কাব! তুমি আমার সামনে মৃত্যুর বিবরণ তুলে ধরো। তখন কাব বলেন, ‘অবশ্যই বলব, হে আমিরুল মুমিনিন! মৃত্যু যেন কারো পেটে অগণিত কাঁটাযুক্ত একটি গাছের ডাল, যার প্রতিটি কাঁটা একেকটি শিরায় বিদ্ধ হয়ে আছে, আর একজন শক্তিশালী লোক সেই ডালটি সজোরে টেনে বের করছে। ফলে যা বের হওয়ার বের হয়ে যাচ্ছে, আর যা থাকার তা থেকে যাচ্ছে।’ (বয়ান বিশ্বকোষ : ১৫/৬৫)

মহান আল্লাহ আমাদের জীবন-মৃত্যু সহজ করে দিন। আমিন।

লেখক : আলেম, শিক্ষক।

বিশ্বনাথনিউজ২৪ডটকম / বিএন২৪