Search
Close this search box.

বিশ্বনাথ আলীয়া মাদ্রাসার শিক্ষক অপদস্তকারীদের বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টার বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান

বিশ্বনাথ আলীয়া মাদ্রাসার শিক্ষক অপদস্তকারীদের বিরুদ্ধে
লন্ডনের হাইকমিশনে হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিমের হাতে এ স্মারকলিপি তুলে দেন প্রবাসী বিশ্বনাথবাসীদের প্রতিনিধিদল
Facebook
Twitter
WhatsApp

সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা সদরের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘বিশ্বনাথ দারুল উলুম ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা’ বর্তমানে গুরুতর সংকটে রয়েছে। শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্টকারী এবং শিক্ষক অপদস্তকারী দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিশ্বনাথ প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে লন্ডনের হাইকমিশনে হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিমের হাতে এ স্মারকলিপি তুলে দেন প্রবাসী বিশ্বনাথবাসীদের একটি প্রতিনিধিদল।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় যে, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ নু’মান আহমদ পারিবারিক অসুবিধার কারণে গত ২৫ আগস্ট থেকে ছুটিতে। তার এ অনুপস্থিতির সময়ে জুলাই ও আগস্ট মাসে ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সুযোগে পূর্ব থেকে উঁৎ পেতে থাকা কতিপয় চিহ্নিত দুষ্কৃতিকারী পরিকল্পিতভাবে সাবেক ও বর্তমান কিছু শিক্ষার্থী ও স্বার্থাস্বেষীরা অভিভাবকদের বিভ্রান্ত করে এলাকাবাসীর নামে গত ১ সেপ্টেম্বর রবিবার সকালে মাদরাসা ঘেরাও করে।

এ সময় তারা মাদরাসার সুনামধন্য অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ নু’মান আহমদসহ মাদরাসা ও মাদ্রাসার শিক্ষক কর্মচারীদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে নানারূপ মিথ্যা অপবাদ, অপপ্রচার ও কুৎসা রটনা করে অধ্যক্ষের ‘পদত্যাগ’ চায়। তারা সশস্ত্র অবস্থায় জোরপূর্বক মাদরাসায় ঢুকে অবকাঠামো ভাঙচুর ও আসবাবপত্র তছনছ করে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে তখন ছুটিতে থাকলেও বাধ্য হয়ে অধ্যক্ষ মাদরাসার উপাধ্যক্ষের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের একটি পত্র দেন।

কিন্তু দুষ্কৃতিকারীরা এটি গ্রহণ না করে তারা অন্যায়ভাবে পদত্যাগের দাবিতে মাদরাসা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিশৃঙ্খল ও আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে রাখে। পরবর্তীতে তারা মাদরাসার অফিস ও শ্রেণিকক্ষ তালাবদ্ধ করে। এ সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ সম্প্রচারে এসে দুষ্কৃতিকারীরা সাধারণ ছাত্র/ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রাণে হত্যার হুমকি দেয়, যা আমরা প্রবাস থেকে সরাসরি প্রত্যক্ষ করি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভে তাদের কথা অমান্য করে মাদরাসায় প্রবেশ করলে বা তালা খোলার চেষ্টা করা হলে প্রাণে হত্যা করে উচিত শিক্ষা এবং বাড়াবাড়ি করলে মাদরাসা ও তাদের বসতবাড়ি জ্বালিয়ে ধ্বংস, হামলা ও লুটপাট করার হুমকি প্রদান করা হয়। যদিও কয়েকদিন পরে তাদের বোধদয় হলে তারা মাদরাসার তালা খুলে দেয়। তবে তারা অধ্যক্ষ এবং আরও কয়েকজন শিক্ষক ‘পদত্যাগ’ না করলে তারা পাঠদানের সুযোগ দেবে না বলে হুমকি রাখে। তারা বর্তমানে স্বশরীরে মাদরাসায় এসে এবং স্থানীয় মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হুমকি অব্যাহত রেখে মাদরাসার অফিস কিংবা পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করতে দিচ্ছে না।

আমরা প্রবাস থেকে ইতোমধ্যে জ্ঞাত হয়েছি যে, দুষ্কৃতিকারীদের অপকর্মের বিষয়টি মাদরাসার গভর্নিং বডির সদস্যবৃন্দ ও অধ্যক্ষ মহোদয় বিশ্বনাথ উপজেলার সকল শ্রেণী-পেশার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের অবহিত করেছেন। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ অদ্যাবধি এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী, স্বার্থান্বেষী দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

এ অবস্থার মধ্যে গত ১৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বিশ্বনাথ দারুল উলুম ইসলামিয়া কামিল মাদরাসার গভর্নিং বডির সভাপতিসহ ৩ জনকে পদত্যাগে বাধ্য করেছে এই চক্রটি। যে চক্রটি মাদরাসাকে ধ্বংস করতে চাইছে, পড়ার পরিবেশ বিঘ্নিত করতে চাইছে তারা তাদেরকে জিম্মি করে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর নিয়েছে।

সহকারী অধ্যাপক মাওলানা নাজিম উদ্দিনের আহবানে শিক্ষকদের বেতন ব্যাংক থেকে ছাড় করাতে গভর্নিং বডির সভাপতি মাওলানা শফিকুর রহমান, সদস্য ফয়জুল ইসলাম, মো. শামসুল ইসলাম মাদ্রাসায় গেলে শরিষপুর গ্রামের আব্দুল হান্নান, মো. শাহজাহান, আব্দুল খালিকসহ ৩০/৩৫ জন এসে তাদের অফিস কক্ষে তালাবদ্ধ করে ফেলেন। তাদের সাথে যোগ দেন মাদরাসার সহকারী অধ্যাপক মাওলানা নাজিম উদ্দিনও। তিনি ‘ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য তাকে স্বীকৃতি দেয়ার সংক্রান্ত একটি রেজুলেশন বের করে সেখানে স্বাক্ষর করতে চাপ প্রয়োগ করেন। কিন্তু তারা স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানালে তাদেরকে শারীরিকভাবে অফিসে নাজেহাল করা হয়। এক পর্যায়ে বাধ্য করা হয় মাদরাসার সাদা প্যাডে স্বাক্ষর করতে। পরে আমরা দেখেছি সেটিতে তাদের পদত্যাগের কথা লেখা হয়েছে এবং যে ৩টি পদত্যাগ পত্রের কথা বলা হচ্ছে সেখানে একই হাতের লেখা।

আরও পড়ুন :: বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবে সাম্প্রতিক বাংলাদেশ প্রবাসীদের প্রত্যাশা শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক

দুষ্কৃতিকারীরা এভাবে নির্বিগ্নে তাদের অকপকর্ম চালাতে থাকায় স্থানীয় জনমনে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। ফলে যে কোনো সময় দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি হয়ে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও জানমালের চরম ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এ নিয়ে বিশ্বনাথের অধিবাসী প্রবাসী হিসেবে আমরা চরম উদ্বিগ্ন। অনতিবিলম্বে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান “বিশ্বনাথ দারুল উলূম ইসলামিয়া কামিল মাদরাসার শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্টকারী, সাধারণ ছাত্র/ছাত্রী ও তাদের অভিভাবক এবং শিক্ষক অপদস্তকারী, মাদরাসা ও মাদ্রাসার শিক্ষক কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ অপপ্রচারকারী সুযোগ সন্ধানী দুষ্কৃতিকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জোরদাবী জানানো হয়।

বিশ্বনাথনিউজ২৪ডটকম / বিএন২৪

আরও খবর

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত