জাতীয় ডেস্ক: শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর কাফরুল থানার অন্তর্গত ঢাকা মডেল ডিগ্রি কলেজের এক শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। নিহত শিক্ষার্থীর নাম ফয়জুল ইসলাম রাজন (১৮)।
বুধবার ( ১৪ আগষ্ট ) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আহম্মেদ হুমায়ুন কবিরের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন নিহত রাজনের ভাই, রাজিব (৩২)। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে কাফরুল থানাকে এটি এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য মইনুল হোসেন খান নিখিল, ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ মান্নান কচি, স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি গাজি মেজবাউল হক সাচ্ছু, সাবেক সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত আইজিপি ও র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক হারুন অর রশিদ, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপি ডিবির সাবেক প্রধান হারুন আর রশিদ, সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, স্থানীয় আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন, উত্তর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর জামাল মোস্তফা, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগ নেতা সালামত উল্লাহ সাগর, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সদস্য দীপংকর বাছার দিপ্ত। এছাড়াও মামলায় আওয়ামী লীগের আরও ৫০০ থেকে ৬০০ নেতাকর্মীকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন :: শেখ হাসিনা ও কাদেরসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণের নির্দেশ
মামলার অভিযোগ অনুযায়ীবাদী উল্লেখ করেন, তার ছোট ভাই ফয়জুল ইসলাম রাজন ঢাকা মডেল ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছিল এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। ১নং আসামি শেখ হাসিনা গত ১৪ জুলাই এক প্রেস কনফারেন্সে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকরের বাচ্চা’ বলে অভিহিত করেন, যা আন্দোলনকে আরও উত্তেজিত করে তোলে।
এরপর, ২নং আসামি ওবায়দুল কাদের ১৫ জুলাই ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ‘আন্দোলনকারীদের মোকাবিলা করার জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট’ বলে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের গণহত্যার নির্দেশ প্রদান করেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, আসামি আসাদুজ্জামান খান কামাল, আনিসুল হক, হাসান মাহমুদ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মাইনুল হোসেন খান নিখিল, শেখ ফজলে শামস পরশ, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ও খসরু চৌধুরীর পরিকল্পনা ও প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় আন্দোলনকারীদের কঠোরভাবে দমনের জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলনরত নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের দেখামাত্র গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়।
অভিযোগ অনুযায়ী, বিভিন্ন শীর্ষ নেতাদের বেআইনি নির্দেশনা অনুযায়ী, পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক মো. হারুন অর রশিদ এবং ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান তাদের বাহিনীর সদস্যদের নিরস্ত্র ছাত্রদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানোর নির্দেশ দেন।
বাদী আরও অভিযোগ করেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হত্যার ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনার বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ অজ্ঞাতনামা ৫০০ থেকে ৬০০ নেতাকর্মীর সরাসরি অংশগ্রহণের ফলে ১৯ জুলাই, শুক্রবার, মিরপুর-১০ গোলচত্বর সংলগ্ন ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনে গুলিতে ফয়জুল ইসলাম রাজন নিহত হন। সেই দিন আরও অনেক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত ও নিহত হয়।