বিশ্বনাথনিজস্ব২৪ :: প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার দাবিতে সমর্থকদের নিয়ে মানববন্ধন করেছেন সিলেট-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমান। বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন তিনি। পরে জেলা প্রশাসকের অনুরোধে কার্যালয় প্রাঙ্গণ ছেড়ে সড়কে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। প্রায় দুই ঘণ্টা এ কর্মসূচি পালনের পর বিশ্বনাথ পৌরশহরে এসে মানববন্ধন করেন মুহিব ও তাঁর কর্মী-সমর্থকরা।
এসময় ওই প্রার্থীর সমর্থকদের হাতে প্রতীক বরাদ্দের দাবি লেখা সংবলিত বিভিন্ন ধরণের প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। ওই মানববন্ধন থেকে বর্তমান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগও দাবি করা হয়। বলা হয়, ‘নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে না।’
মুহিবুরের সমর্থকদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা রয়েছে- ‘জেলা প্রশাসকের অবৈধ হস্তক্ষেপ বন্ধ কর’, ‘হাইকোর্টের আদেশ মানতে হবে’, ‘অযোগ্য নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ চাই’, ‘২৪ শে ডিসেম্বর হাইকোর্ট প্রার্থীতা বহালের রায় দিলেও এখন পর্যন্ত প্রতীক বরাদ্দ না দেওয়া ষড়যন্ত্র নয় কি?’, ‘নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নয়’ ইত্যাদি।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে মুহিবুর রহমানের সমর্থকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, সমর কুমার দাস, মহিবুর রহমান, আব্দুস শহীদ, জাহেদ আহমেদ, মাসুক মিয়া, ফজলু মিয়া, রফিক মিয়া, গিয়াস উদ্দিনসহ আরও অনেকেই।
মানববন্ধনে বক্তব্যে মুহিবুর রহমান বলেন, ‘এই নির্বাচণে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ১০% ভোটও পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই আমার বিজয় নিশ্চিত বুঝতে পেরে আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকার প্রার্থী আমাকে নির্বাচন থেকে দুরে রাখতেই ষঢ়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশন প্রতীক বরাদ্দ না দিলে এলাকার জনগণকে সাথে নিয়ে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করা করবে।’
গত বছরের ২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত পৌরনির্বাচনে সিলেটের বিশ্বানাথে প্রথম পৌরমেয়র নির্বাচিত হন সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ও দুইবারের উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জগ প্রতীক নিয়ে ৮ হাজার ৪৭৪ ভোট পেয়েছিলেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বষ›দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফারুক আহমদ নৌকা প্রতীক নিয়ে পান ৩ হাজার ২৬৩ ভোট।
পৌরমেয়র নির্বাচিত হওয়ার ১ বছরের মাথায় তিনি সংসদ সদস্য প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। তবে ইলেকশন কমিশনের ‘স্থানীয় সরকারে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা পদ ছেড়ে প্রার্থী হতে হবে’ এই নির্দেশনাকে অমান্য করে মেয়র পদে বহাল থেকে মুহিব মনোনয়ন কিনেন। ফলে যাচাই-বাছাইয়ে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান। তবে নাছোড়বান্দা মুহিব প্রার্থিতা ফিরে পেতে ইলেকশন কমিশনে গত ১০ ডিসেম্বর আপিল করেন। পাঁচ দিন পর আপিলটি খারিজ করে দেয় ইসি।
এরপর প্রার্থিতা ফেরাতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন মুহিবুর রহমান। তার দায়েরকৃত রিটের শুনানির ধার্য্য তারিখে (২০ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রপক্ষের অ্যাটর্নি জেনারেল আমীর উদ্দিন অংশ নিয়ে এর বিরোধিতা করেন। পরে বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথ ও ইকবাল করিম’র যৌথ বেঞ্চ রিটের আদেশের জন্যে ২৭ ডিসেম্বর পরবর্তী তারিখ ধার্য্য করেন। কিন্তু এর দুইদিন আগে রবিবার (২৪ ডিসেম্বর) রিটের আদেশ দেন হাইকোর্ট। আদেশে বিচারপতি মো. ইকবাল কবির এবং বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ মুহিবের প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। হাইকোর্ট মুহিবের প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দিলেও ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেটি লিখিত আকারে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসে পৌঁছেনি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। ফলে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়নি মুহিবকে।
এদিকে, প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রার্থীকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় নামার সুযোগ না থাকলেও ২৫ ডিসেম্বর থেকে বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগরের বিভিন্ন স্থানে ‘ট্রাক’ প্রতীক সম্বলিত মুহিবুর রহমানের নির্বাচনি প্রচারণার পোস্টার সাটানো দেখা যায়। এছাড়া বিভিন্ন গাড়িতেও লাগানো দেখা যায় এমন পোস্টার। এই নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে ২৬ ডিসেম্বর বিকালে বিশ্বনাথ উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মুহিবকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
প্রতীক বরাদ্দ না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালতের ওই নির্দেশনার বিপরীতে আপিল করা হবে। এরজন্য ইতোমধ্যে আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে ইলেকশন কমিশন। বিষয়টি আদালতকেন্দ্রীক তাই এর বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না।’