নিজস্ব প্রতিবেদক :: আজ বুধবার (২রা নভেম্বর) অনুষ্ঠিত হচ্ছে বহুল প্রতিক্ষিত বিশ্বনাথ পৌরসভার প্রথম নির্বাচন। ইতিমধ্যে ভোটগ্রহন সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচনে মেয়র পদে ৭ জন, ৩টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মহিলা কাউন্সিলর পদে ১৪ জন ও ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৬০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কে হচ্ছেন বিশ্বনাথ পৌরসভার প্রথম মেয়র এ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে চলছে নানা হিসেব-নিকেশ ও বিচার-বিশ্লেষণ?
নির্বাচন সুষ্টু ও শান্তিভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন করতে ইতিমধ্যে সকল নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের পক্ষ হতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
প্রথম বিশ্বনাথ পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ‘নৌকা’ প্রতীক নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ, ‘খেজুর গাছ’ প্রতীক নিয়ে উপজেলা জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোহাম্মদ শিব্বির আহমদ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ‘জগ’ প্রতীক নিয়ে উপজেলা পরিষদের দুই বারের সাবেক চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান, ‘হ্যাঙ্গার’ প্রতীক নিয়ে উপজেলা বিএনপির সদ্য বহিস্কৃত সভাপতি ও বিশ্বনাথ ইউনিয়ন পরিষদের দুই বারের সাবেক চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন, ‘মোবাইল ফোন’ প্রতীক নিয়ে যুক্তরাজ্যের নিউহাম বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মুমিন খান মুন্না, ‘নারিকেল গাছ’ প্রতীক নিয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিএনপি নেতা সফিক উদ্দিন এবং ‘চামচ’ প্রতীক নিয়ে উপজেলা আনজুমানে আল-ইসলাহ’র সভাপতি তালুকদার ফয়জুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচনে মেয়র পদে ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও প্রথম পৌর মেয়র হওয়ার দৌঁড়ের শেষ পর্যায়ে মূল আলোচনায় রয়েছেন ‘নৌকা’ প্রতীকের ফারুক আহমদ, ‘জগ’ প্রতীকের মুহিবুর রহমান, ‘হ্যাঙ্গার’ প্রতীকের জালাল উদ্দিন ও ‘মোবাইল ফোন’ প্রতীকের মুমিন খান মুন্না। নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্ধের পর থেকে শুরু হওয়া গণসংযোগ, উঠান বৈঠক ও প্রচার মিছিল শেষে মেয়র পদে চতুর্মুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার আবাস পাওয়া গেছে।
পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রচারণার শেষ মূহূর্ত পর্যন্ত বিরামহীন প্রচারণা চালিয়েছেন মেয়র পদের প্রার্থীরা। নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করেছেন তারা। তবে, ভোটের মাঠে সাত প্রার্থী কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ থাকলেও চার মেয়র প্রার্থীর মধ্যে মূল লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন সাধারণ ভোটাররা।
চার মেয়র প্রার্থীর মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) ফারুক আহমদ একজন ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। তাকে নৌকা প্রতিকে বিজয়ী করতে মাঠে একাট্টা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগি সংগঠন। আওয়ামী ঘরানার ভোট ব্যাংককে পুঁজি করে অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন তিনি। যে কারণে তার নিশ্চিত বিজয় দেখছে আওয়ামী লীগ। অপরদিকে, আওয়ামী লীগের কোনো পদ-পদবীতে বর্তমানে না থাকলেও সাধারণ মানুষের আলোচনার তুঙ্গে রয়েছেন সাবেক দুই বারের উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান। তার স্বতন্ত্র ব্যক্তি ইমেজ ও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এর পাশাপাশি রয়েছে নিজস্ব ভোট ব্যাংকও। আওয়ামী ঘরানার অনেকের পাশাপাশি জাতীয় পার্টি ও বিএনপি ঘরনার অনেকেই রয়েছেন তার পক্ষে। সবমিলিয়ে, বিশ্বনাথের প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমানই হচ্ছেন বিশ্বনাথ পৌরসভার প্রথম মেয়র-এমনটাই মনে করছেন তার কর্মী-সমর্থকেরা।
স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হওয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সদর ইউনিয়নের দুই বারের জনপ্রিয় সাবেক চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন এবং যুক্তরাজ্যের নিউহাম বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মুমিন খান মুন্নাও রয়েছেন শক্তিশালী অবস্থানে। বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ না নিলেও দলীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে তারা দুজন প্রার্থী হওয়ায় যদিও তাদেরকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে, তবুও ইতোমধ্যে এই দুই প্রার্থীকে কেন্দ্র করে দুই ভাগ হয়ে পড়েছে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিভক্ত হলেও দুটি অংশ দুই প্রার্থীর পক্ষে ভোটের মাঠে কৌশলি প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ায় পাল্লা ভারী হয়েছে জালাল-মুন্না দু’জনেরই। ব্যক্তি ইমেজ ও দুইবারের অভিজ্ঞ জনপ্রতিনিধি বিবেচনায় জালাল উদ্দিনকেই ভোটাররা মেয়র নির্বাচিত করবেন বলেন মনে করছেন তার সমর্থকেরা।
অপরদিকে, বিশ্বনাথের ক্রীড়াঙ্গনসহ সামাজিক-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সক্রিয় সংগঠক মুমিন খান মুন্নাই বিজয়ী হবে এমনটাই মনে করছেন তার কর্মী-সমর্থকেরা।
তবে, বিশ্বনাথ পৌরসভা উন্নয়নের জন্য একজন সৎ যোগ্য ও দক্ষ প্রার্থীকে ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করবেন ভোটাররা এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।