নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটের বিশ্বনাথে চাউলধনী হাওরের পানি নিয়ে কৃষকদের সাথে জলমহালের ইজারাদার পক্ষের (সাইফুল ইসলাম গংদের) সংঘর্ষে ছরকুম আলী দয়াল (৭৫) নামের এক কৃষক ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। তিনি উপজেলার চৈতননগর গ্রামের মৃত আকবর আলীর পুত্র। আজ বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে চাউলধনী হাওরের কান্দি কাটার খাল নামক স্থানে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন।
আহতরা হলেন নিহত ছরকুম আলী দয়ালের পুত্র পাবেল মিয়া (২৫), একই গ্রামের মৃত চান্দ আলীর পুত্র ইন্তাজ আলী (৪০), আহমদ আলীর পুত্র জাহাঙ্গীর (২২) ও রেজাউল (১৮)। ইজারাদর পক্ষের আসাম উদ্দিন (২৬) অন্যান্য আহতদের নাম জানা যায়নি।
এদিকে, এঘটনায় ইজারাদার পক্ষের ৩ জনকে আটক করেছে থানা পুলিশ। আটককৃতরা হলেন টিল্লাপাড়া গ্রামের আসাম উদ্দিন (২৬), হাফিজ সায়েদ আহমদ (২০) ও দশপাইকা গ্রামের হুশিয়ার আলী (৩৬)। তাদের মধ্যে আসাম উদ্দিনকে গুরুত্বর আহত অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
নিহতের ভাতিজা আব্দুল করিম জানান, তার চাচা ছরকুম আলী দয়াল বৃহস্পিতিবার দুপুরে চাউলধনী হাওরের জলমহাল থেকে নিজ কৃষি জমিতে পানি সেচ করতে যান। এসময় স্থানীয় প্রভাবশালী সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে জলমহালের ইজাদার পক্ষের সিরাজ, আছকির, দিলোয়ার, মুজিব সহ বেশ কয়েকজন ছরকুম আলীকে মারধর করে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। এসময় ছরকুম আলীকে বাঁচাতে তার পক্ষের লোকজন এগিয়ে আসলে তাদের উপরও হামলা করেন ইজাদার পক্ষের লোকজন। হামলায় ওই ৪জন আহত হয়েছেন। ঘটনার পর ছরকুম আলীকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
একজন নিহতের সত্যতা নিশ্চিত করে বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামীম মুসা বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এঘটনায় ৩জনকে আটক করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিশ্বনাথ উপজেলার সবচেয়ে বড় হাওর চাউলধনী। প্রতি বছর এই হাওরে কয়েক কোটি টাকার ধান উৎপাদন হয়ে থাকে। কিন্ত এবছর শর্ত ভঙ্গ করে ইজারাদার কর্তৃক পাম্প মেশিনের মাধ্যমে পানি সেচ করে হাওরের জলমহালে মাছ ধরায় এবার পুরো হাওরে পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। নিম্নাঞ্চলসহ শুকিয়ে গেছে হাওরের ষোলটি বিল, ত্রিশটি খাল, এবং নালাসহ ছয় শতাধিক পুকুর। পানির অভাবে জমিগুলো ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। রোদে পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে চাষাবাদের জন্য তৈরী করা অধিকাংশ বীজতলা। এতে জীবন-জীবিকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হাওর পাড়ের ২৫টি গ্রামের কয়েক হাজার কৃষক। তাই হাওরের ইজারা বাতিল, সীমানা নির্ধারণ এবং সুইসগেইট নির্মাণসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোল করে আসছেন এলাকাবাসী। ইতিমধ্যে পালিত হয়েছে একাধিক মানববন্ধ ও প্রতিবাদ সভা।