নিজস্ব প্রতিবেদক :: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র ঈদ উপহার পেয়েছেন বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের ৪৬১টি প্রতিবন্ধী পরিবার। বৃহস্পতিবার (৩০ জুলাই) সকালে রামপাশা ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বিভাগীয় কমিশনার মশিউর রহমান এনডিসি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বাধীন সরকার প্রতিবন্ধী বান্ধব সরকার। এজন্যই প্রতিবন্ধীদের কল্যাণের জন্য সরকার নানান প্রদক্ষেপ গ্রহন করছেন। প্রতিবন্ধীদের বুঝা ভাবলে চলবে না, তারা আমাদের সমাজেরই অংশ। তাই প্রতিবন্ধীদের স্কুলে ভর্তি করা বাধ্যতামূলক করাসহ নতুন আইন প্রনয়ন করেছেন সরকার। আর কেউ প্রতিবন্ধীদেরকে স্কুলে ভর্তি না করলে কিংবা কেউ ভর্তি করতে বাঁধা দিলে তার বা তাদের বিরুদ্ধে সাথে সাথেই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মাকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত চেকআপ করালে প্রতিবন্ধী সন্তান জন্মগ্রহনের ঝুঁকি কম থাকে।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক এম. কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, এক এলাকায় ৪৬১জন প্রতিবন্ধি আছেন সংবাদ মাধ্যমগুলোতে সংবাদ প্রচারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসে। তিনিই এইসব প্রতিবন্ধীদের খোজখবর নিতে বলেন এবং ঈদ উপহার দেওয়ার নির্দেশ দেন। জেলা প্রশাসক আরও বলেন, শুধু রামপাশা ইউনিয়নের নয়, বিশ্বনাথ উপজেলায় সকল প্রতিবন্ধিদের কার্ড করে প্রতিবন্ধী সেবার আওতায় আনা হবে। তিনি সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সাংবাদিকদের লেখনিতেই আজ প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেল রামপাশার ৪৬১জন প্রতিবন্ধী।
অনুষ্ঠানে প্রত্যেকটি প্রতিবন্ধী পরিবারকে নগদ আড়াই হাজার টাকা, ১টি করে শাড়ী ও লুঙ্গি, ১ ব্যাগ খাদ্যসামগ্রী প্রদান করা হয়। খাদ্যসামগ্রীর তালিকায় ছিল ১০ কেজি চাল, ১ কেজি চিনি, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি লবন, ২ কেজি চিড়া, ১ প্যাকেট নুডলস, ১ লিটার তেল।
রামপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলমগীরের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব পংকি খান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম নুনু মিয়া।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক মীর মাহবুবুর রহমান, এনডিসি এরশাদ মিয়া, ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মিজবাহুল হক, হাসিবুর রহমান, শামীম আরা অর্ণব, বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) শামীম মুসা, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ, যুগ্ম সম্পাদক আমির আলী চেয়ারম্যান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আজিজ সুমন, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক আবদুল মতিন, প্রচার সম্পাদক নিখিল পাল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান লিলু, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক শামীম আহমদ, রামপাশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম,
উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক আলতাব হোসেন, যুবলীগ নেতা মোহন মিয়া, মুহিবুর রহমান সুইট, রাজু আহমদ খান, জমির আলী, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সম্পাদক আতিকুর রহমান আতিক, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মাহফুজুর রহমান দুলু, সাঈদ মিয়া, উপজেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি পার্থ সারথি দাশ পাপ্পু, সাংগঠনিক সম্পাদক কামরান হোসেন, মাসুদ আহমদ, ছাত্রলীগ নেতা আরব শাহ, দুদু মিয়া, হিমেল আহমদ, মুজিবুর রহমান খান, জেলা ধ্রুবতারার সভাপতি আবদুল বাতিন প্রমুখসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, সিলেটের সামগ্রিক হারের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি প্রতিবন্ধী রয়েছেন রামপাশা ইউনিয়নে। এর মধ্যে সিংহভাগই আমতৈল গ্রামের। এ নিয়ে দৈনিক সিলেটের ডাক’সহ স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকগুলোতে অনেক সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। মানবিক এ বিষয়টি বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা তাঁর বড় বোন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিতে আনেন। তিনি তাৎক্ষণিক বিষয়টি আমলে নিয়ে শুধুমাত্র রামপাশা ইউনিয়নের ৪৬১ জন প্রতিবন্ধীদের মাঝে এ উপহার সামগ্রী বিতরণ করেন। উপহার পাঠানো ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী প্রতিবন্ধী শিশুদের সুস্থতা এবং ভবিষ্যতে সুস্থ প্রজন্ম নিশ্চিত করতে বেশ কিছু নির্দেশনা দেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো হলো:
১. গ্রামের সব প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সমস্যা যথাযথভাবে চিহ্নিত করে বিশেষ প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় আনতে হবে।
২. সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাউন্সেলিং করা।
৩. নিজ বাসস্থানসহ আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
৪. খাদ্যের সব পুষ্টিমান নিশ্চিত করতে ভিটামিন সাপ্লিমেন্টারি ওষুধ সরবরাহ এবং সুপেয় পানির সুব্যবস্থা করা।
৫. গ্রামে প্রয়োজনীয় মাটি ভরাট, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ড্রেনেজ সিস্টেম চালু এবং অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে।
৬. প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাহিদা মোতাবেক বহুমাত্রিক শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করে বিশেষ স্কুল স্থাপন ও প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ করা।
৭. চাহিদামাফিক প্রয়োজনীয় সহায়ক উপকরণ, যেমন- হুইলচেয়ার, ট্রাইসাইকেল, হেয়ারিং ডিভাইস ও দৃষ্টি সহায়ক উপকরণ সরবরাহ করতে হবে।