Search
Close this search box.

গরীবরা ত্রাণ পায়, মধ্যবিত্তরা আড়ালে ফেলে চোখের জল

Facebook
Twitter
WhatsApp

এমদাদুর রহমান মিলাদ :: করোনাভাইরাসের মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলছে মৃত্যুর মিছিল। ইউরোপ আমেরিকার মতো বাংলাদেশে এখনও সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলেও প্রায় পুরো দেশেই ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাস। আক্রান্তও হয়ে মারা গেছেন শতাধিক লোক। ফলে আতংকিত রয়েছেন পুরো দেশবাসী। ইতিমধ্যে সিলেট সহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। মানুষ রয়েছেন ঘরবন্দী। এতে কর্মহীনতায় চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।

এমন পরিস্থিতিতে কর্মহীন অসহায় ও দরিদ্র পরিবারগুলোতে চলছে তীব্র খাবার সংকট। অসহায়-দরিদ্র পরিবারগুলোর পাশাপাশি আয় রোজগার থেমে যাওয়ায় অর্থ ও খাদ্য সঙ্কটে অনেক মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং প্রবাসী পরিবারের লোকজনও খেয়ে না খেয়ে দিন যাবন করছেন। তবে সরকারের পাশাপাশি অনেক বিত্তবান ও প্রবাসীরা নিজ নিজ এলাকার অসহায় ও দরিদ্র মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন। প্রতিদিনই কোন না কোন এলাকায় বিতরণ করা হচ্ছে ত্রাণ। বিতরণকারীদের অধিকাংশের দৃষ্টি গরীবদের প্রতি থাকায় গরীবরা ত্রাণ থেকে বঞ্চিত না হলেও বিতরণকারীদের চোখের আড়ালে রয়েছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা। দরিদ্র মানুষেরা বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের হাত পাতলেও লোকলজ্জা ও সামাজিক মর্যাদাহানির ভয়ে কাউকে কিছু বলতে কিংবা হাত পাততে পারছেন না অনেক মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা। বর্তমান এই করুণ অবস্থায় অসহায় হয়ে তারা নীরবে আড়ালে ফেলছেন চোখের জল। শুধু মধ্য ও নিম্ন মধ্যবিত্তরাই নন, এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত কোন কোন প্রবাসীর পরিবারের লোকজনকেও খেয়ে না খেয়ে কাটাতে হচ্ছে দিন।

তবে কোন কোন এলাকায় এসব পরিবার বাছাই করে ও খবর পেয়ে রাতের আঁধারে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্যসামগ্রী-নগদ টাকা পৌঁছে দিচ্ছেন বিত্তবানদের কেউ কেউ। গোপনে খাবার নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। তাদেরই একজন সৈয়দ মুহিবুর রহমান মিছলু।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিল সিলেট জেলা শাখার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপশহর ব্যবসায়ী সমিতি ইএফ এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মুহিবুর রহমান মিছলু ‘বিপদের বন্ধু’ হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন অসহায় মানুষের কল্যাণে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে লকডাউনে থাকা সাময়িক অসহায় শ্রমজীবী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও প্রবাসী মানুষের খবর পেলে তাদের ঠিকানা নিশ্চিত হয়ে বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির পরিচয় গোপন রেখে রাতের আঁধারে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন অসহায় হয়ে পড়া মানুষের দরজায়।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে চলতি বছরের ১৫ মার্চ থেকে সচেতনতা মূলক স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন সৈয়দ মুহিবুর রহমান মিছলু। তার চলমান কাজ নিয়ে বেশ কয়েকটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে তুলে ধরা হয় সৈয়দ মুহিবুর রহমান মিছলুর বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা। সম্প্রতি মিছলুর ফেইসবুক ম্যাসেঞ্জারে হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং গ্রামের একজন কুয়েত প্রবাসী ‘‘ভাই আমি কি বিপদগ্রস্ত এক পরিবারের জন্যে সহায়তা ও সহযোগিতার অনুরোধ করতে পারি?’’ বলে একটি মেসেজ দেন। জবাবে মিছলু লিখেন ‘জ্বি ইনশা আল্লাহ’। এরপর মিছলুকে বিপদগস্ত পরিবারের ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার দেন ওই প্রবাসী। প্রবাসীর দেওয়া নাম্বারে ফোনে কথোপকথনের একপর্যায়ে মিছলু জানতে পারেন বিপদগ্রস্ত পরিবারটি উনার (প্রবাসীর) নিজের তখন আমার গাঁ শিউরে উঠল মিছলুর, হতবাক হয়ে গেলেন তিনি। সাথে সাথেই রাতের আঁধারে সিলেট নগরীর পূর্ব মিরা বাজারস্থ ঐ প্রবাসীর বাসায় খাদ্যসামগ্রী উপহার পৌঁছে দেন তিনি।

সৈয়দ মুহিবুর রহমান মিছলু জানান, তিনি সামর্থবান নন, ব্যবসা বাণিজ্য করে কোনমতে পরিবার নিয়ে চলছেন। আজ প্রায় দুই মাস যাবত তার ব্যবসা বন্ধ রয়েছে। মানুষের সেবা করতে পদ পদবির প্রয়োজন নেই, বঙ্গবন্ধুর আদর্শই যথেষ্ট। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের যেটুকু আছে তা নিয়ে করোনা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নগরীর শাহজালাল উপশহরের বিভিন্ন পয়েন্টে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, জীবণু নাশক স্প্রে এবং ধারাবাহিক ভাবে অসহাদের ঘরে ঘরে খাদ্যসামগ্রী উপহার পৌঁছে দিচ্ছেন। তার এই কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী তারেক আলী এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে ইতিমধ্যে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন দেশ-বিদেশে থাকা বন্ধু-বান্ধবও।

ওই কুয়েত প্রবাসীর মতো বর্তমানে অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের অবস্থা নিম্ন আয়ের মানুষের চেয়েও খারাপ। দরিদ্রদের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি সাহায্য সহযোগিতা পৌঁছলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মধ্যবিত্তরা সহায়তার হিসেবের বাহিরে রয়েছেন। আবার অনেকের ঘরে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছলেও রয়েছে আর্থিক সঙ্কট। অনেক অসুস্থ রোগী টাকার অভাবে ঔষধ ক্রয় করে খেতে পারছেন না। এই বিষয়টিও সহায়তাকারি বিত্তবানদের নজরে থাকা প্রয়োজন।

আসুন, আমরা বর্তমান এই সঙ্কটময় মুহুর্তে দরিদ্রদের সাহায্যের পাশাপাশি, আমাদের চারিপাশে দৃষ্টির আড়ালে থাকা লোকলজ্জা ও সামাজিক মর্যাদাহানির ভয়ে যেসকল মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন কারো কাছে হাত পেতে চাইতে লজ্জাবোধ করছেন, খেয়ে না খেয়ে দিনযাপন করছেন, তাদেরকে খোঁজে বের করে আমরা সকেলই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই।

বিশ্বনাথনিউজ২৪ডটকম / বিএন২৪

আরও খবর