AM-ACCOUNTANCY-SERVICES-BBB

বিশ্বনাথে কিশোরীকে জোরপূর্বক বিয়ে : বর গ্রেফতার

বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডট কম :: ডিসেম্বর - ১৯ - ২০১৯ | ৬: ১৯ অপরাহ্ণ

বিশ্বনাথনিউজ২৪ :: সিলেটের বিশ্বনাথে সুমাইয়া আক্তার রানী নামের ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরীকে তার লন্ডনি পিতাকর্তৃক জোরপূর্বক যুবকের সঙ্গে বিয়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এঘটনায় সুমাইয়া আক্তার রানী নিজেই বাদী হয়ে তার পিতা বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের মাঝগাঁও (সিংগেরকাছ) গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী আবদুল ওয়াজির বাবুল (৫০) ও একই গ্রামের মুক্তার আলীর ছেলে বর বদরুল আলম (২৯) সহ ৪জনের নাম উল্লেখ ও আরো ৩/৪জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। বুধবার রাতে অভিযুক্ত বদরুল আলমকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়েরকৃত মামলা নং ২৭, তাং- ১৯.১২.১৯ইং।

মামলার অপর দুই অভিযুক্তরা হলেন- সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানার কিজিরপুর গ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে রাজিব (৩০) ও সিলেট নগরীর হাওয়াপাড়া এলাকার বিদেশী-৩ এর বাসিন্দা মৃত করিম উল্লার ছেলে দিলোয়ার হোসেন (৪৪)।

থানায় দায়েরকৃত এজাহারে সুমাইয়া আক্তার রানী উল্লেখ করেন, তিনি সিলেট মদন মোহন কলেজের ব্যবসায়ী বিভাগের একাদশ শ্রেণীর ১ম বর্ষের ছাত্রী। প্রধান অভিযুক্ত তার (সুমাইয়া) পিতা যুক্তরাজ্য প্রবাসী আবদুল ওয়াজির বাবুল ৬/৭টি বিয়ে করেছেন। তিনি বাবুলের দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান। বিয়ের পর সুমাইয়ার মা’কে তার পিতা কোনো দিনে বাড়িতে নিয়ে যাননি। ফলে ছাতক উপজেলার পাইগাঁও গ্রামের নানার বাড়িতে তার জন্ম হয়। সুমাইয়ার বয়স যখন ৫/৬ বছর, তখন তার মায়ের সঙ্গে পিতার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর পর থেকে সুমাইয়ার সঙ্গে মোবাইল ফোনে মাঝে মধ্যে যোগাযোগ করেন তার পিতা বাবুল। গত ৩১ অক্টোবর লন্ডন থেকে দেশে ফিরে সিলেট নগরীর হাওয়াপাড়া এলাকার একটি ভাড়া বাসায় উঠেন বাবুল এবং ওই দিন সকালে তিনি ফোন করে মেয়ে সুমাইয়াকে বলেন তিনি তাকে (সুমাইয়াকে) তার নানার বাড়ি থেকে বাসায় নিয়ে আসতে চান।

এরপর ওই দিন সন্ধ্যায় বাবুল অভিযুক্ত রাজিবসহ অজ্ঞাত আরও ৩জন একটি নোহা গাড়ি নিয়ে সুমাইয়ার নানার বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক থানার পাইগাঁও গ্রামে গিয়ে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে সুমাইয়ার নানা-নানীকে বুঝিয়ে এবং তাকে লন্ডন নিয়ে যেতে কিছু কাগজপত্র প্রস্তুত করার আশ্বাস দিয়ে মেয়ে সুমাইয়াকে বাসায় নিয়ে যান বাবুল। গত ৫ নভেম্বর সকালে সুমাইয়াকে বাবুল বলেন ‘তোমার লন্ডন যাওয়ার সময় হয়ে গেছে, কিছু কেনা কাটার প্রয়োজন, তুমি আমার সঙ্গে মার্কেটে যাবে।’ এরপর পিতার সাথে মার্কেটে গিয়ে কিছু কাপড় কেনা কাটা করেন সুমাইয়া। পরবর্তীতে গত ১০নভেম্বর দুপুরে আত্বীয়-স্বজন ও সহযোগি লোকজনসহ অভিযুক্ত বদরুল আলম সুমাইয়ার পিতার বাসায় যান। এসময় মেয়ে সুমাইয়াকে বদরুল আলমের সঙ্গে বিয়ের পিড়িতে বসার কথা বলেন বাবুল। তখন সুমাইয়া তার বিয়ের বয়স হয়নি বলে জানালে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন পিতা বাবুল। একপর্যায়ে তাকে (সুমাইয়া) অবরুদ্ধ করে বদরুল আলমসহ অভিযুক্তরা প্রলোভন দেখিয়ে ও চাপ প্রয়োগ করে সুমাইয়াকে বিবাহ করতে বাধ্য করা হয় এবং ওই দিন সিলেট নগরীর একটি হোটেলে কাজী ডেকে এনে অভিযুক্ত বদরুল আলমের সঙ্গে সুমাইয়াকে জোরপূর্বক বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের পর ওই রাতে সুমাইয়াকে বদরুল আলম তার বাড়ি বিশ্বনাথের মাঝঁগাও (সিংগেরকাছ) গ্রামের বসত ঘরে নিয়ে যান এবং ১১ নভেম্বর থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত তাকে ঘরের রুমে আটকে রেখে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে একাধিকবার জোরপূর্বক শারীরিক মেলামেশা করেন বদরুল আলম। বিষয়টি সামাইয়া তার নানা-নানীকে মোবাইল ফোনে জানালে তারা অভিযুক্ত বদরুল আলমের বাড়িতে ছুটে আসেন এবং তারা সুমাইয়ার সঙ্গে দেখা করলেও তাদের তাৎক্ষনিক বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়।

একপর্যায়ে সুমাইয়ার নানা-নানী গত বুধবার বিশ্বনাথ থানা পুলিশকে খবর দিলে ওই রাতেই পুলিশ অভিযুক্ত বদরুল আলমকে তার নিজ বসত ঘর থেকে আটক এবং সুমাইয়াকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। সুমাইয়া অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া স্বত্ত্বেও তা জেনে শুনে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোর করে বিয়ে দেওয়া এবং তাকে আটকে রেখে জোরপূর্বক পাশবিক নির্যাতনের অভিযোগে বৃহস্পতিবার তার পিতা ও বর বদরুল আলম সহ ৪জনকে আসামী করে বিশ্বনাথ থানায় মামলা দায়ের করেন সুমাইয়া।

মামলা দায়েরের সত্যতা স্বীকার করে বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) শামীম মুসা বলেন, বদরুল আলমকে বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

আরো সংবাদ