AM-ACCOUNTANCY-SERVICES-BBB

৩৫ বছর পর জেলা আ.লীগের নেতৃত্ব হারালো বিশ্বনাথ

বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডট কম :: ডিসেম্বর - ৫ - ২০১৯ | ১০: ১৯ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক :: দীর্ঘ প্রায় ৩৫বছর পর সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের র্শীষ দুটি পদে নেতৃত্বদান থেকে বঞ্চিত হলো বিশ্বনাথ। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ঘোষিত নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বিশ্বনাথে কোন নেতাকে দেওয়া হয়নি দায়িত্ব। এনিয়ে হতাশ বিশ্বনাথ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

সিলেটের রাজনীতি নিয়ে জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর হিসেব-নিকাশও আলাদা থাকে। গত তিন দশক ধরে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদে যারাই ছিলেন তাদের অনেকেরই দীর্ঘ বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ঐতিহ্য রয়েছে। এতে নিজস্ব যোগ্যতা বলেই বিশ্বনাথে জন্ম নেওয়া বেশ ক’জন রাজনীতিবিদ তিন যুগ ধরে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে।

বিশ্বনাথে কৃতি সন্তান প্রায়াত আ ন ম শফিকুল হক ১৯৭৭ সাল থেকে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগে বিভিন্ন পদ পেরিয়ে ১৯৮৪ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ২০০৩ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে। বিশ্বনাথে আরেক কৃতি সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত ইফতেখার হোসেন শামীম জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে দীর্ঘ ১১বছর থাকার পর ২০০৩ সালে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়ে ২০১১ সাল পর্যন্ত নেতৃত্ব দেন। ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান বিশ্বনাথের আরেক কৃতি সন্তান আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরী। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে যদিও আ ন ম শফিকুল হক ৮বছর দায়িত্ব পালন করেন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে একাধারে ১৯৮৪সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত জেলা পর্যায়ক্রমে আ ন ম শফিকুল হক, ইফতেখার হোসেন শামীম ও শফিকুর রহমান চৌধুরী নেতৃত্ব দেন।

এবারের সম্মেলনে সভাপতি পদে মূল আলোচনায় ছিলেন শফিকুর রহমান চৌধুরী। তবে অনেকেই দারণা করেছিলেন শফিকু চৌধুরীকে যদিও সভাপতির দায়িত্ব প্রদান করা না হয়, তাহলে অন্তত সাধারণ সম্পাদক পদেই তাকে বহাল রাখা হবে। অথবা সাধারণ সম্পাদক পদে বিশ্বনাথের এডভোকেট শাহ ফরিদ আহমদকেও দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। কিন্ত নেতাকর্মীদের সব আলোচনা-সমালোচনা, জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটে আজ বৃহস্পতিবার। এবার সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক পদের কোন একটিতেই বিশ্বনাথ উপজেলার কোন নেতাকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। ফলে প্রায় ৩৫ বছর পর এবার জেলা আওয়ামী লীগের এ শীর্ষ দুটি পদের নেতৃত্ব হারালো বিশ্বনাথ।

প্রয়াত আন ন ম শফিকুল হক ও প্রায়াত ইফতেখার হোসেন শামীমের রাজনৈতিক উত্তরসূরী যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগে নেতৃত্ব দানকারী শফিকুর রহমান চৌধুরী বিলাতের মায়া ত্যাগ করে বাংলাদেশের স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসনে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের বাঘা বাঘা প্রার্থীদের পেছনে ফেলে দলীয় মনোনয়ন পান এবং তখনকার রার্নিং এমপি ও বিএনপির জানু রাজনীতিবিদ এম ইলিয়াস আলীকে পরাজিত করে জাতীয় রাজনীতিতে দারুণ এক চমক দেখান শফিকুর রহমান চৌধুরী। স্থানীয় রাজনীতিতে অভাবনীয় এই সাফল্যে দলীয় প্রধানও তাকে যথাযত মূল্যায়ন করে সরাসরি সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব প্রদান করেন।

স্থানীয় উন্নয়ন ও জেলার রাজনীতিতে প্রায় ২৪ঘন্টা সক্রিয় থেকে এবং সরকারি দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও সকল প্রকার লোভ-লালসার উর্ধ্বে থেকে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করায় বৃহত্তর সিলেটে একজন সৎ ও ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন শফিক চৌধুরী। আর বিশেষ করে দলের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন তিনি। দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেতাকর্মীদের চাওয়া স্বত্বেও বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বিরত থেকে আনুগত্যের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনের মাধ্যমে দল ও দলীয় প্রধানের কাছে তিনি আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। দলের জন্য সবসময় কাজ করেন বলে তিনি ‘চব্বিশ ঘন্টার রাজনীতিবিদ’ হিসেবেও পরিচিত। এজন্য এবারের সম্মেলনে সভাপতি হতে শফিক চৌধুরীর ব্যাপক সুযোগ ছিল বলে মনে করেছিলেন বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। কিন্ত তিনি সভাপতি পদে দায়িত্ব কিংবা সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল না থাকায় তার অনুসারী নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে হতাশা। তবুও তারা আশাবাদী দলের জন্য শফিক চৌধুরীর ত্যাগ ও শ্রমের মূল্যায় করবেন দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এব্যাপারে বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আমির আলী চেয়ারম্যান বলেন, আমরা বিশ্বনাথ উপজেলাবাসী জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদে (সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক) ৩৫বছর পর নেতৃত্ব হারালাম। তবুও আমরা আশাবাদী দলের জন্য শফিকুর রহমান চৌধুরীর ত্যাগ ও শ্রমের মূল্যায় করবেন জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আরো সংবাদ