বিশ্বনাথের যুবতীকে গণধর্ষণের দায় স্বীকার করে আদালতে দুই আসামির জবানবন্দি
বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডট কম :: অক্টোবর - ২৫ - ২০১৯ | ২: ৫৮ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক :: বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হয়ে যুবতী আত্মহত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামীর প্রধান আসামী জাহাঙ্গীর আলম ও তার সহযোগী বারিক মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) বিকেলে সিলেটের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়ার আদালতে আসামিরা জবানবন্দি দেয়। জাহাঙ্গীর আলম (৩৫) দক্ষিণ সুরমা উপজেলার তেতলী চেরাগী গ্রামের আজিজুর রহমানের ছেলে ও বারিক মিয়া (৩৭) একই গ্রামের আব্দুল মনাফের ছেলে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিশ্বনাথ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রমা প্রসাদ চক্রবর্তি বলেন, গণধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি জাহাঙ্গীরকে গত ১৭ অক্টোবর র্যাব-৯ গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে থানায় হস্তান্তর করে র্যাব। গত ১৮ অক্টোবর জাহাঙ্গীরকে আদালতে হাজির করে তার ৭দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত ৫দিনের রিমান্ড মঞ্জর করেন। ৫দিনের রিমান্ডে শেষে ফের তাকে আরো ৩দিনের রিমান্ডে আনে পুলিশ। মামলার অপর আসামি বারিক গত ২০অক্টোবর আদালতে আত্মসমর্পণ করে। পরদিন আদালতে তার ৩দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর গত ২২ অক্টোবর তাকেও রিমান্ডে আনা হয়। ৩দিনের রিমান্ডের মধ্যে দুইদিনের মাথায় তারা ধর্ষণের কথা স্বীকার করে। গত বৃহস্পতিবার তাদেরকে আদালতে হাজির করা হলে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। মামলার অপর দুই আসামি তেতলী চেরাগী গ্রামের মৃত আব্দুল মন্নানের পুত্র ফয়জুল ইসলাম (২৮) একই গ্রামের মৃত মতছির আলীর ছেলে জাহেদ (২২) জেল হাজতে রয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিশ্বনাথের লালটেক গ্রামের শুকুর আলীর মেয়ে পপি বেগম (২১) গত ৯ অক্টোবর দিবাগত রাতে তার বোনের বাড়ি দক্ষিণ সুরমা উপজেলার তেতলী চেরাগী গ্রামে গণধর্ষণের শিকার হয়। পরদিন সকালে সে বোনের বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে ফিরে গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করে। তাকে দাফনের দুইদিন পর তার ব্যবহৃত ভ্যানেটি ব্যাগে নিজ হাতে লেখা একটি চিরকুট (সুইসাইড নোট) পায় পরিবার। ওই চিরকুটে পপি উল্লেখ করেছে ৯ অক্টোবর দিবাগত রাতে বোনের বাড়িতে অবস্থানকালে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে সে ঘরের বাহিরে যায়। তখন পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা বারিক ও জাহেদ তার (পপির) মুখ চেপে ধরে তাকে জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে যায় বাড়ির পাশ্ববর্তী জঙ্গলে। তখন তাদের পায়ে ধরে কান্না কাটি করতে থাকলে বারিক-জাহেদ ও তাদের সহযোগীরা মারধর করে পপিকে পাশবিক নির্যাতন করে। নির্যাতনের পর পপিকে বোনের বাড়িতে (যেখান থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়, সেই স্থানে) ফেলে রেখে যায় জাহাঙ্গীর। আর গণধর্ষণের লজ্জা সইতে না পেরে সে আত্মহত্যা করে। এঘটনায় গত ১৪ অক্টোবর পপির বাবা শুকুর আলী বাদি হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, গণধর্ষণ করত: আত্মহত্যার প্ররোচনা এবং সাক্ষ্য ঘটনা আড়াল করার অপরাধ আইনে বিশ্বনাথ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলার পর পৃথক পৃথক অভিযান চালিয়ে আসামি জাহাঙ্গীর আলম, জাহেদ মিয়া ও ফয়জুল ইসলামকে র্যাব ও পুলিশ গ্রেপ্তার করে। অপর আসামি বারিক মিয়া আদালতে আত্মসমর্পণ করে।