AM-ACCOUNTANCY-SERVICES-BBB

বিশ্বনাথে বীরবিক্রমের নামে নির্মিত যাত্রী ছাউনি পড়ে আছে অযত্নে-অবহেলায়

বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডট কম :: অক্টোবর - ২৫ - ২০১৯ | ১১: ০৪ পূর্বাহ্ণ

এমদাদুর রহমান মিলাদ :: মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য খেতাবপ্রাপ্ত বিশ্বনাথ উপজেলার একমাত্র বীরবিক্রম সুবেদার (অবঃ) আব্দুল মালেক (প্রয়াত)। তাঁর সম্মানে স্বাধীনতার ৩৬বছর পর ২০০৭ সালে নিজ জন্মভূমি বিশ্বনাথ উপজেলা সদরের নতুন বাজারের নির্মিত যাত্রী ছাউনিটি রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে পড়ে আছে অযত্নে-অবহেলায়। ব্যবহারে অনুপযোগী পুরো যাত্রী ছাউনিটি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিলবোর্ড-পোস্টারে ছেয়ে আছে। এমনকি ছাউনিতে বীরবিক্রম সুবেদার (অবঃ) আব্দুল মালেক’র নামটিও মুছে গেছে কয়েক বছর আগেই। ফলে বীরবিক্রম সুবেদার (অবঃ) আব্দুল মালেক’র সম্মানহানী হচ্ছে এমনটাই মন্তব্য করেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান।
বিশ্বনাথ উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের মরহুম মোঃ আব্দুর রহমান তালুকদার ও মরহুমা মোছাম্মৎ আলতা বিবি দম্পতির জ্যেষ্ট সন্তান বীরবিক্রম সুবেদার (অবঃ) আব্দুল মালেক ১৯৩০ সালের ১লা জানুয়ারী জন্মগ্রহন করেন। শিক্ষা জীবনে তিনি গ্রামের মক্তব, ছহিফাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিলেটস্থ রাজা জি.সি হাই স্কুলে লেখাপড়া করে কর্মজীবনে যোগদান করেন। ১৯৫০ সালে আব্দুল মালেক পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে সিপাহী পদে যোগদেন এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত একনাগাড়ে ২০ বছর সেখানে কর্মরত ছিলেন। ১৯৫৯ সালে আব্দুল মালেক একই ইউনিয়নের শিমুলতলা গ্রামের দলিল লেখক মরহুম আছদ্দর আলীর সর্বকনিষ্ঠা কন্যা মোছাম্মৎ রেনু বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে অসামান্য অবদার রাখার জন্য তিনি গৌরবপূর্ণ “বীরবিক্রম” খেতাবে ভূষিত হন। তিনিই একমাত্র বিশ্বনাথী হিসেবে মর্যাদাপূণ ওই খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে দীর্ঘ ২৮ বছরের চাকুরী জীবনে আব্দুল মালেক “সুবেদার” পদে অধিষ্ঠিত হয়ে ছিলেন। ১৯৯৩ সালে পাগলা মহিষের আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গু হন তিনি এবং ২০১১ সালের ২৫ এপ্রিল তিনি ইন্তেকাল করেন।
জাতির গর্বিত সন্তান বীরবিক্রম সুবেদার (অবঃ) আব্দুল মালেক এর সম্মানে ২০০৭ সালে বিশ্বনাথ উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ও বিশ্বনাথ ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে তাঁর নামে একটি যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হয়। উপজেলা সদরের নতুন বাজারস্থ লাইটেস স্ট্যান্ডের পাশে নির্মিত এই যাত্রী ছাউনি ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে বীরবিক্রম সুবেদার (অবঃ) আব্দুল মালেকের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে শুভ উদ্বোধন করেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব। কিন্ত উদ্বোধনের পর থেকেই অযতেœ অবহেলায় পড়ে আছে যাত্রী ছাউনিটি। ছাউনিতে লেখা বীরবিক্রমের নামটি একেবারেই মুছে গেছে। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিলবোর্ড ও পোস্টারে ঢেকে গেছে পুরো ছাউনিটি। ছাউনিতে কোন যাত্রী বসার মতো নেই পরিবেশ। এছাড়া দক্ষিণ পার্শ্বে লাইটেস স্ট্যান্ড ও উত্তর পার্শ্বে মিনি ট্রাক (পিকআপ) স্ট্যান্ড হওয়ায় ছাউনির সম্মুখে প্রায় সময়ই রাখা থাকে বিভিন্ন গাড়ি। বীরবিক্রমের প্রতি সম্মান জানিয়ে নির্মাণ করা ছাউনির এমন পরিস্থিতিতে বীরবিক্রমের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করা হচ্ছে এমনটাই মনে করছেন সচেতন মহল। তাই অবৈধভাবে লাগানো ব্যানার ও বিলবোর্ডগুলো দ্রুত অপসারণ করে ছাউনিটি সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন উপজেলাবাসী।
এব্যাপারে বিশ্বনাথ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছয়ফুল হক বিশ্বনাথ নিউজ টুয়েন্টিফোর-কে বলেন, স্বাধীনতার ৩৬ বছর পরে হলেও আমরা এই বীরসন্তানকে সম্মান জানিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে স্থানীয় ফান্ড থেকে যাত্রী ছাউনিটি নির্মাণ করেছিলাম। রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে বর্তমানে যে অবস্থায় ছাউনিটি পড়ে আছে তাতে বীরবিক্রমের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করা হচ্ছে। আমরা ইতিমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছি আগামী ডিসেম্বর মাসে ছাউনি সংস্কার করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বর্ণালী পাল বলেন, ছাউনিটি দ্রুত সংস্কার করে রক্ষনাবেক্ষনের জন্য আমি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে বলবো।

আরো সংবাদ