AM-ACCOUNTANCY-SERVICES-BBB

আত্মহত্যার আগে গণধর্ষণের কথা জানিয়েছিল পপি : তথ্য গোপন করায় দুলাভাই গ্রেফতার

বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডট কম :: অক্টোবর - ১৫ - ২০১৯ | ১১: ৫০ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হয়ে লজ্জা সইতে না পেরে সিলেটের বিশ্বনাথে পপি বেগম (১৯) আত্মহত্যা করেছিল। এঘটনায় তথ্য গোপন করায় তার ভগ্নিপতি (দুলাভাই) ফয়জুল ইসলাম (২৮)’কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার তেতলী চেরাগী গ্রামের মৃত আব্দুল মন্নানের পুত্র। সোমবার (১৪ অক্টোবর) রাতে তাকে গ্রেফতার করে থানা পুলিশ। এঘটনায় সোমবার রাতে নিহত পপি বেগমের পিতা, বিশ্বনাথ উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের লালটেক গ্রামের শুকুর আলী বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, গণধর্ষণ করত:, আত্মহত্যার প্ররোচনা এবং সাক্ষ্য ঘটনা আড়াল করার অপরাধ আইনে বিশ্বনাথ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা-৫। মামলায় ফয়জুল ইসলাম’সহ চার জনকে আসামী করা হয়েছে। অন্যান্য আসামীরা হলো- তেতলী চেরাগী গ্রামের আজিজুর রহমানের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৩৫), একই গ্রামের আব্দুল মনাফের ছেলে বারিক মিয়া (৩৭) ও মৃত মতছির আলীর ছেলে জাহেদ (২২)।
এদিকে নিহত পপি বেগমের মা জোসনা বেগম জানিয়েছেন, তার বড় মেয়ের বাড়িতে গণধর্ষণের শিকার হয়ে বাড়ি ফিরে পপি জানিয়েছিল তাকে কিভাবে তুলে নিয়ে পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছিল। কিন্ত মেয়ের ভবিষ্যৎ ও পরিবারের সম্মানের কথা চিন্তা করে তখন পরিবারের সকলেই ঘটনাটি গোপন করেছিলেন। এরপর মেয়ে পপি বেগমের ব্যবহৃত ভ্যানেটি ব্যাগ গত রবিবার যখন হাতে নিয়ে তিনি মেয়ের রেখে যাওয়া স্মৃতি দেখছিলেন তখন ওই ব্যাগের মধ্যে পপির নিজ হাতে লেখা একটি কাগজ (চিরকুট বা সুইসাইড নোট) দেখতে পান। এসময় তিনি প্রতিবেশী লোকজনকে ওই কাগজটি দেখান। তখন কাগজ পড়ে জানতে পারেন গণধর্ষণের শিকার হয়ে লজ্জা সইতে না পেরে তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।
পপি বেগম (১৯) গত ৬ অক্টোবর বেড়াতে যায় বড় বোন হেপি বেগমের স্বামীর বাড়ি দক্ষিণ সুরমা উপজেলার তেতলী ইউনিয়নের চেরাগী গ্রামে। সেখানে গত বুধবার দিবাগত রাতে গণধর্ষণের শিকার হয়ে পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে বোনের বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে ফিরে পপি এবং ওই দিন দুপুরে ঘরের তীরে সঙ্গে গলায় ওড়না পেছিয়ে সে আত্মহত্যা করে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করে। এরপর ময়না তদন্ত শেষে পরদিন শুক্রবার নিহতের দাফন সম্পন্ন করা হয়। দাফনের দুই দিন পর পপির ব্যবহৃত ভ্যানেটি ব্যাগে চিরকুট বা সুইসাইড নোট পান তার মা।
তিনি জানান, বোনের বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে ফিরে তাকে পপি বলেছিল এবং ওই কাগজে (সুইসাইড নোট) সে উল্লেখ করেছে, বুধবার (৯ অক্টোবর) দিবাগত রাতে বোনের বাড়িতে অবস্থানকালে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে পপি বেগম ঘরের বাহিরে যায়। তখন পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা বারিক ও জাহেদ তার (পপির) মুখ চেপে ধরে তাকে জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে যায় বাড়ির পাশ্ববর্তী জঙ্গলে। তখন তাদের পায়ে ধরে কান্না কাটি করতে থাকলে বারিক-জাহেদ ও তাদের সহযোগীরা মারধর করে পপিকে পাশবিক নির্যাতন করে। নির্যাতনের পর পপিকে বোনের বাড়িতে (যেখান থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়, সেই স্থানে) ফেলে রেখে যায় জাহাঙ্গীর।
এদিকে, একই রুমে বোন ও ভগ্নিপতির সাথে ঘুমিয়ে থাকা পপি রাতে বাহিরে গিয়ে পাশবিকতার শিকার হয়ে দীর্ঘক্ষণ পর ঘরে ফিরে আসা, গণধর্ষণের বিষয়টি আত্মহত্যার পূর্বে জানতে পেরে, এমনকি আত্মহত্যার পরও বিষয়টি গোপন রাখা এবং বোনের বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে ফেরার কিছুক্ষণ পর বাড়িতে এসে পপির সঙ্গে একান্তে ফয়জুল ইসলামের বড় ভাইয়ের কথা বলা নিয়ে রয়েছে নানান গুঞ্জন। তবে মূল আসামীরা গ্রেফতার হলে ওই দিন রাতে কিভাবে ঘটনা ঘটেছিল এবং এর সাথে আর কারা জড়িত রয়েছে তা উদঘাটন হবে এমনটাই আশাবাদী পুলিশ।
মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করে বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) শামীম মূসা বলেন, তথ্য গোপন করায় গ্রেফতারকৃত নিহতের ভগ্নিপতি ফয়জুল ইসলামকে মঙ্গলবার আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। মূল অভিযুক্তদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আরো সংবাদ