AM-ACCOUNTANCY-SERVICES-BBB

বিশ্বনাথের হরিপুর-ছহিফাগঞ্জ রাস্তায় ড. রাগীব আলীর বৃক্ষ রোপন

বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডট কম :: অক্টোবর - ১৩ - ২০১৯ | ৭: ২৭ অপরাহ্ণ

বিশ্বনাথনিউজ২৪ :: দেশবরেণ্য শিল্পপতি, অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ড. রাগীব আলীর উদ্যোগে বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের হরিপুর-ছহিফাগঞ্জ এস ডি মাদরাসা সড়কে কলা ও বিভিন্ন ঔষধী গাছের প্রায় দুই হাজার বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। শনিবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। এ উপলক্ষে ছহিফাগঞ্জ এস ডি মাদরাসা প্রাঙ্গণে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দানবীর ড. রাগীব আলী বলেন, আমি মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে চাই। জীবনের যত অর্জন, নিজের জন্য নয় মানুষের কল্যাণে ব্যয় করেছি। আমি সমাজকে দেয়ার জন্য সব করেছি। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি মানুষের মঙ্গলের জন্য। আরো অনেক কিছু করার ইচ্ছা আছে। এ জন্য সবার দোয়া চাই, যেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষের সেবায় কাজ করে যেতে পারি। তিনি বলেন, মানুষের সাথে গাছের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। গাছ পরিবেশকে মানুষের বাস-উপযোগী করে তুলে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষরোপণের কোনো বিকল্প নেই।

এলাকার মুরুব্বি মনোহর আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেটের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. কামরুজ্জামান চৌধুরী, সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. আ ন ম মেসকাত উদ্দিন, এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য প্রফেসর এম আর কবির, লিডিং ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার মেজর (অবঃ) মো. শাহ আলম এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক ও বৃক্ষপ্রেমিক আফতাব চৌধুরী।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে লিডিং ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, দানবীর ড. রাগীব আলীর জন্ম না হলে লিডিং ইউনিভার্সিটিসহ বাংলাদেশে অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্ম হতো না। শিক্ষার প্রসার এবং বিস্তারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তাঁর এই অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি, এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটি এবং সিলেটের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা, প্রথম বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল-জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ, বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী নার্সিং কলেজসহ বহু স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় তিনি যে অনন্য অবদান রাখছেন, তা সমাজে বিরল। তিনি আরো বলেন, প্রাচীনতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছহিফাগঞ্জ এস. ডি মাদ্রাসা যখন আশির দশকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল, তখন ঝরে যাওয়া প্রতিষ্ঠানটির হাল ধরেছিলেন দানবীর ড. রাগীব আলী। ফলে এ মাদ্রাসা আজ সিলেটের অন্যতম একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠেছে। এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষায়ও প্রতিযোগিতা করার সেই যোগ্যতা রয়েছে। সাফল্য ধরে রেখে মাদ্রাসাটি আরো এগিয়ে যাবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. আ ন ম মেসকাত উদ্দিন তাঁর বক্তব্যে বলেন, দানবীর ড. রাগীব আলী মানুষের কল্যাণে সবকিছু উৎসর্গ করেছেন। দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি অবদান রেখেছেন। বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার প্রসারে গড়ে উঠা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম তিনি। শুধু তাই নয়, তিনি অসংখ্য প্রতিষ্ঠানে উদার হস্তে দান করছেন। এর বাস্তব প্রমাণ এই প্রতিষ্ঠান।

এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য প্রফেসর এম আর কবির বলেন, বেঁচে থাকার জন্য ছায়াবৃক্ষের প্রয়োজন, আর ড. রাগীব আলী একজন ছায়াবৃক্ষ। তিনি অত্যন্ত বড় মনের মানুষ। মরে যাওয়া একটি প্রতিষ্ঠানকে তিনি আলোকিত করেছেন। শিক্ষার এই অর্জন আমাদের ধরে রাখতে হবে।

লিডিং ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার মেজর (অবঃ) মো. শাহ আলম বলেন, ড. রাগীব আলীর যে অবদান রয়েছে, তার উপর ভর করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে ছহিফাগঞ্জ এস ডি মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। তিনি ড. রাগীব আলীর দীর্ঘায়ু কামনা করে বলেন, তাঁর প্রতিষ্ঠিত অসংখ্য প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করে দেশ ও সমাজকে আলোকিত করছে।

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও বৃক্ষপ্রেমিক আফতাব চৌধুরী বলেন, দেশের ১৬ কোটি মানুষের শ্রদ্ধার পাত্র ড. রাগীব আলী। তিনি মানুষের সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করেন। দেশের সর্বত্র তাঁর অবদান রয়েছে। এজন্যই তাকে দানবীর বলা হয়। ছহিফাগঞ্জ মাদরাসার প্রতি তাঁর দরদ আছে বলেই তিনি এখানে ছুটে আসেন। তাঁর স্বার্থে নয়, এই সমাজের কল্যাণের জন্য দানবীর ড. রাগীব আলীকে আরো বহুদিন বেঁচে থাকা দরকার। আমাদের, দেশের ও জনগণের স্বার্থে আল্লাহ যেন তাকে দীর্ঘদিন আমাদের মাঝে বাঁচিয়ে রাখেন।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে ছহিফাগঞ্জ এস ডি মাদরাসার সুপার মাওলানা আব্দুর রউফ বলেন, এই মাদরাসায় দানবীর ড. রাগীব আলীর অনেক অবদান রয়েছে। তিনি মাদরাসায় কোটি টাকার উন্নয়ন করেছেন এবং করে যাচ্ছেন। এজন্য আমরা এলাকাবাসী তাঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ। সিলেটের প্রথম মহিলা কবি ছহিফা বানুর নামে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠান যখন বিলীন হতে চলেছিল, তখন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে এগিয়ে আসেন দানবীর ড. রাগীব আলী ও তাঁর সহধর্মিণী মহীয়সী নারী মরহুমা বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী। তখন এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে মাদরাসার নাম পরিবর্তন করতে চাইলে তাতে রাজি হননি দানবীর ড. রাগীব আলী। বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী বেঁচে থাকলে মাদরাসা আরো এগিয়ে যেতো। তিনি মাদরাসার উন্নয়নে দানবীর ড. রাগীব আলী, তাঁর সহধর্মিণী মরহুমা বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী, ছহিফা বানুর উত্তরসূরি ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি মরহুমা নূর রওশন চৌধুরীসহ সকলের অবদান স্মরণ করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মাদরাসা ছাত্র হাফিজ ওমর ফারুক ও নাতে রাসূল (সাঃ) পরিবেশন করে মুছাদ্দিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠান শেষে মরহুমা বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী ও মরহুমা নূর রওশন চৌধুরীর রুহের মাগফেরাত কামনায় মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন মাদরাসার সহ সুপার মাওলানা তোফায়েল আহমদ।

অনুষ্ঠানে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার গৌছ আহমদ বাবুল, আব্দুল মতিন, এলাকার মুরুব্বি আব্দুল আহাদ, আব্দুল মতিন, নূর রহমান, জবেদুর রহমান, শামছুল আবেদীন কাছা, মনোহর আলী, আব্দুল কাহির, কয়েছ আহমদ, মাদরাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের পূর্বে বৃক্ষরোপণের উদ্বোধন, ঐতিহ্যবাহী ছহিফাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ছহিফাগঞ্জ এস ডি মাদরাসা পরিদর্শন এবং অনুষ্ঠান শেষে এলাকার অসহায় দরিদ্র মানুষের মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ করেন দানবীর ড. সৈয়দ রাগীব আলী।

আরো সংবাদ