AM-ACCOUNTANCY-SERVICES-BBB

স্লোভাকিয়ায় নিহত বিশ্বনাথের ফরিদের পরিবারের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ

বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডট কম :: অক্টোবর - ৪ - ২০১৯ | ৭: ৫৮ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক :: ইউক্রেন থেকে ফ্রান্স যাওয়ার পথে স্লোভাকিয়ায় নিহত বিশ্বনাথের ফরিদ উদ্দিন আহমদ এর পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতার প্রকাশ করা হয়েছে। ফরিদ উদ্দিন আহমদের মরদেহ দেশে নিয়ে আসতে বিভিন্ন ভাবে সহযোগীতা করেছেন এবং সমবেদনা জানিয়েছেন তাদের সকলের প্রতি ফরিদ উদ্দিন আহমদের পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন নিহতের ছোট ভাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী কাওছার আহমদ।
কাওছার আহমদ বলেন, আমার ভাইয়ের মরদেহ দেশের মাটিতে নিয়ে এসে জানাযা পড়ে নিজ হাতে দাফন করতে পেরেছি এতেই আমরা সুন্তুষ্ট। বিশেষ করে স্লোভাকিয়া গিয়ে শুরু থেকে এপর্যন্ত আইনী লড়াই চালিয়ে অক্লান্ত চেষ্টা করেছেন ভাইয়ের কলেজ জীবনের সহপাঠি যুক্তরাজ‌্য প্রবাসী সুরুজা শহিদ মনি ও উনার স্বামী। তাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় স্লোভাকিয়া থেকে জন্মভূমিতে মরদেহ আনা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া লাশ আনতে চেষ্টা করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি, সাবেক সাংসদ শফিকুর রহমান চৌধুরী ও ভাইয়ের বন্ধু সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডাঃ শামছুল ইসলাম। যারা বিভিন্ন ভাবে আমাদের সহযোগীতা করেছেন এবং সমবেদনা জানিয়েছেন তাদের সকলের কাছে আমরা চির কৃতজ্ঞ। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যেন আমার প্রিয় ভাইকে জান্নাত দান করেন সকলের কাছে এই দোয়াই আমার কামনা করি।

প্রসঙ্গত, বিশ্বনাথ উপজেলার কারিকোনা গ্রামের সমশাদ আলীর পুত্র ও ইস্টান ব্যাংক বিশ্বনাথ শাখার সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন আহমদ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত ফুটবল বিশ্বকাপ দেখতে যান রাশিয়া। খেলা শেষ হওয়ার মাস খানেক পর তিনি রাশিয়া থেকে ইউক্রেন যান এবং সেখান থেকে গত ২৮ আগস্ট দালালের মাধ্যমে ৬জন সঙ্গীর সাথে ইউক্রেন থেকে ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে পায়ে হেঁটে যাত্রা করেন ফরিদ। এরপর ২ সেপ্টেম্বর ফরিদের সঙ্গীরা ফ্রান্স পৌঁছলেও নিখোঁজ হয়ে যান ফরিদ। পরিবারের পক্ষ থেকে দালাল ও সঙ্গীদের সাথে যোগাযোগ করা হলে পরিবারের সাথে তারা নানান টালবাহানা করতে থাকে। একপর্যায়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর স্লোভাকিয়ার স্টারিনার এলাকার একটি পর্যটন স্পট থেকে ফরিদের মরহেদ উদ্ধার করে সেদেশের পুলিশ। ওই দিন অজ্ঞাতনামা যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে ‘জওজে টিভি’র বরাত দিয়ে সেদেশের ‘নোভেনী ডট এসকে’ নামের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদটি প্রচার করে। প্রকাশিত সেই সংবাদের সূত্র ধরে বৃটিশ সরকারের অনুমতি নিয়ে ফরিদের ছাত্র জীবনের সহপাঠি ব্রিটেনের সরকারি কর্মকর্তা সুরুজা শহিদ মনি ও তার স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে ১২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্য থেকে স্লোভাকিয়া যান ফরিদের চাচা আলকাছ আলী (আওলাদ)। তারা সেখানে গিয়ে স্লোভাকিয়ার কৌচি শহরের একটি মর্গে রাখা ফরিদ উদ্দিন আহমদের লাশ সনাক্ত করেন। এসময় লাশ বাংলাদেশে নিয়ে আসার অনুমতি চাইলে সেদেশের স্থানীয় সিটির মেয়র তাতে অপারগতা প্রকাশ করলে তারা যুক্তরাজ্য ফিরে যান এবং আইনী লড়াই চালিয়ে অব্যাহত রাখেন। অন্যদিকে ফরিদের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা প্রহনে পরিবারের আবেদন নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপির কাছেও ছুটে যান সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ শফিকুর রহমান চৌধুরী। আইনী লড়াই ও দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর একপর্যায়ে অনুমতি দিতে বাধ্য হন স্লোভাকিয়ার ওই শহরের মেয়র। এরপর লাশ বাংলাদেশে নিয়ে আসতে আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘রোলান্ড ব্রাদার্স’ এর সাথে চুক্তি করেন নিহতের স্বজনরা এবং ‘রোলান্ড ব্রাদার্স’র সহযোগীতায় গত ১ অক্টোবর স্লোভাকিয়া থেকে ফরিদের লাশ নিয়ে যাওয়া হয় পার্শ্ববর্তী দেশ ভিয়েনায় সেখান থেকে যুক্তরাজ্য। পরদিন ২ অক্টোবর আলকাছ আলী (আওলাদ) যুক্তরাজ্যের হিথ্রো বিমান বন্দর থেকে ফরিদের লাশ নিয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন এবং ৩ অক্টোবর সকাল ১০টায় সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এসে পৌছেন। এরপর মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত করতে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে। সেখানে সুরতহাল শেষে ময়না তদন্ত সম্পন্ন করা হয়। মরদেহ দেশে নিয়ে আসতে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানান নিহতের ছোট ভাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী কাওছার আহমদ। তিনি বলে টাকা ব্যয় হয়েছে সেটা বড় কথা নয়, দেশের মাটিতে জানাযা পড়ে নিজ হাতে আমার ভাইকে দাফন করতে পেরেছি এটাই বড়। প্রয়োজনে আমরা আরো ব্যয় করতে রাজি ছিলাম।

আরো সংবাদ