AM-ACCOUNTANCY-SERVICES-BBB

বিশ্বনাথে ফরিদের পরিবারে চলছে আহাজারী : স্বামীর মরদেহ দেখে সজ্ঞাহীন স্ত্রী

বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডট কম :: অক্টোবর - ৪ - ২০১৯ | ৬: ০৬ অপরাহ্ণ

এমদাদুর রহমান মিলাদ :: ইউক্রেন থেকে ফ্রান্স যাওয়ার পথে স্লোভাকিয়ায় নিহত বিশ্বনাথের ফরিদ উদ্দিন আহমদ এর পরিবারে চলছে আহাজারী। গ্রামজুড়ে বিরাজ করছে শোকের ছায়া। ফরিদ উদ্দিন আহমদের মরদেহ শেষ বারের মতো একনজর দেখতে ও জানাযায় অংশ নিতে শুক্রবার সকাল থেকে বাড়িতে ভিড় করেন আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী সহ এলাকার মানুষ। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে ফরিদের লাশ বহণকারী গাড়ি বেলা ১২ টা ১৫ মিনিটে উপজেলার কারিকোনা গ্রামে নিহতের বাড়িতে নিয়ে আসা হলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। পরিবারের সকলের কান্নাকাটিতে ভারী হয়ে উঠে আশপাশ পরিবেশ। তাদেরকে শান্তনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেন উপস্থিত লোকজন। অনেকেই নিরবে চোখের জল ফেলেন। একে একে সকলেই একনজর মরদেহ দেখা শেষ হলে স্বামীকে শেষ বারের মতো দেখতে গিয়ে সজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন তার প্রিয়তমা স্ত্রী সেলিনা সুলতানা। তাদের ৩ বছর বয়সী একমাত্র কন্যা ইরা তাসফিয়াকে বাবার মরদেহ দেখানো হয়নি। কিন্ত সে সবার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকাচ্ছে। সে এখনও বুঝতে পারছে না, তার প্রিয় বাবা তাকে ছেড়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে।
এদিকে, শুক্রবার (৪ অক্টোবর) বেলা ২টা ১০ মিনিটের সময় কারিকোনা জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে মরহুমের জানাযার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। জানাযায় ঢল নামে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের।
বিশ্বনাথ উপজেলার কারিকোনা গ্রামের সমশাদ আলীর পুত্র ও ইস্টান ব্যাংক বিশ্বনাথ শাখার সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন আহমদ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত ফুটবল বিশ্বকাপ দেখতে যান রাশিয়া। খেলা শেষ হওয়ার মাস খানেক পর তিনি রাশিয়া থেকে ইউক্রেন যান এবং সেখান থেকে গত ২৮ আগস্ট দালালের মাধ্যমে ৫জন সঙ্গীর সাথে ইউক্রেন থেকে ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে পায়ে হেঁটে যাত্রা করেন ফরিদ। এরপর ২ সেপ্টেম্বর ফরিদের সঙ্গীরা ফ্রান্স পৌঁছলেও নিখোঁজ হয়ে যান ফরিদ। পরিবারের পক্ষ থেকে দালাল ও সঙ্গীদের সাথে যোগাযোগ করা হলে পরিবারের সাথে তারা নানান টালবাহানা করতে থাকে। একপর্যায়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর স্লোভাকিয়ার স্টারিনার এলাকার একটি পর্যটন স্পট থেকে ফরিদের মরহেদ উদ্ধার করে সেদেশের পুলিশ। ওই দিন অজ্ঞাতনামা যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে ‘জওজে টিভি’র বরাত দিয়ে সেদেশের ‘নোভেনী ডট এসকে’ নামের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদটি প্রচার করে। প্রকাশিত সেই সংবাদের সূত্র ধরে বৃটিশ সরকারের অনুমতি নিয়ে ফরিদের ছাত্র জীবনের সহপাঠি ব্রিটেনের সরকারি কর্মকর্তা সুর্যা শহিদ মনি ও তার স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে ১২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্য থেকে স্লোভাকিয়া যান ফরিদের চাচা আলকাছ আলী (আওলাদ)। তারা সেখানে গিয়ে স্লোভাকিয়ার কৌচি শহরের একটি মর্গে রাখা ফরিদ উদ্দিন আহমদের লাশ সনাক্ত করেন। এসময় লাশ বাংলাদেশে নিয়ে আসার অনুমতি চাইলে সেদেশের স্থানীয় সিটির মেয়র তাতে অপারগতা প্রকাশ করলে তারা যুক্তরাজ্য ফিরে যান এবং আইনী লড়াই চালিয়ে অব্যাহত রাখেন। অন্যদিকে ফরিদের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা প্রহনে পরিবারের আবেদন নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপির কাছেও ছুটে যান সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ শফিকুর রহমান চৌধুরী। আইনী লড়াই ও দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর একপর্যায়ে অনুমতি দিতে বাধ্য হন স্লোভাকিয়ার ওই শহরের মেয়র। এরপর লাশ বাংলাদেশে নিয়ে আসতে আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘রোলান্ড ব্রাদার্স’ এর সাথে চুক্তি করেন নিহতের স্বজনরা এবং ‘রোলান্ড ব্রাদার্স’র সহযোগীতায় গত ১ অক্টোবর স্লোভাকিয়া থেকে ফরিদের লাশ নিয়ে যাওয়া হয় পার্শ্ববর্তী দেশ ভিয়েনায় সেখান থেকে যুক্তরাজ্য। পরদিন ২ অক্টোবর আলকাছ আলী (আওলাদ) যুক্তরাজ্যের হিথ্রো বিমান বন্দর থেকে ফরিদের লাশ নিয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন এবং ৩ অক্টোবর সকাল ১০টায় সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এসে পৌছেন। এরপর মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত করতে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে। সেখানে সুরতহাল শেষে ময়না তদন্ত সম্পন্ন করা হয়।
৬ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে সবার বড় ফরিদ উদ্দিন আহমদ। তার স্ত্রী সেলিনা সুলতানা বিশ্বনাথ উপজেলার রামধানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত আছেন।

আরো সংবাদ