নিজস্ব প্রতিবেদক :: ইউক্রেন থেকে ফ্রান্স যাওয়ার পথে স্লোভাকিয়ায় নিহত বিশ্বনাথ উপজেলার কারিকোনা গ্রামের সমশাদ আলীর পুত্র ও ইস্টান ব্যাংক বিশ্বনাথ শাখার সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন আহমদ (৩৫) এর দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। শুক্রবার (৪ অক্টোবর) বেলা ২টা ১০ মিনিটের সময় কারিকোনা জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে মরহুমের জানাযার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। জানাযায় ঢল নামে বিভিন্ন শ্রেনী পেশা মানুষের। বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম জুবায়েরের পরিচালনায় জানাযার পূর্বে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ওসামনীনগর সার্কেল) সাইফুল ইসলাম, জেলা দক্ষিণ জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান, বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্ঠা এস এম নুনু মিয়া, বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি সুহেল আহমদ চৌধুরী এবং পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন নিহতের চাচা শুকুর আলী। জানাযার নামাজে ইমামতি করেন নিহতের চাচাতো ভাই মুফতি মাওলানা লুৎফুর রহমান।

জানাযায় দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা লোকমান আহমদ, বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব পংকি খান, বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) শামীম মুসা, বিশ্বনাথ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছয়ফুল হক, সিলেট ওরসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডাঃ শামছুল ইসলাম, আল-হেরা শপিং সিটির এমডি সিরাজ মিয়া, উপজেলা জামায়াতের আমীর আব্দুল কাইয়ূম, নায়েবে আমীর মাস্টার ইমাদ উদ্দিন, উপজেলা খেলাফত মজলিসের সভাপতি কাজী মাওলানা আব্দুল ওয়াদূদ, জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি ফখরুল ইসলাম খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সমাজ কল্যাণ সম্পাদক আব্দুল মতিন, সহ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুর রহমান, আব্দুল জলিল জালাল, উপজেলা আল-ইসলাহর সহ সভাপতি মাওলানা লুৎফুর রহমান প্রমুখ সহ বিভিন্ন শেণী-পেশার মানুষ অংশগ্রহন করেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত ফুটবল বিশ্বকাপ দেখতে রাশিয়া যান ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। খেলা শেষ হওয়ার মাস খানেক পর তিনি রাশিয়া থেকে ইউক্রেন যান এবং সেখান থেকে দালালের মাধ্যমে গত ২৮ আগস্ট ৫জন সঙ্গীর সাথে ইউক্রেন থেকে ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে পায়ে হেঁটে যাত্রা করেন ফরিদ। এরপর ২ সেপ্টেম্বর ফরিদের সঙ্গীরা ফ্রান্স পৌঁছলেও নিখোঁজ হয়ে যান ফরিদ। পরিবারের পক্ষ থেকে দালাল ও সঙ্গীদের সাথে যোগাযোগ করা হলে পরিবারের সাথে তারা নানান তালবাহানা করতে থাকে। একপর্যায়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর স্লোভাকিয়ার স্টারিনার দূর্গম পাহাড়ি এলাকার একটি পর্যটন স্পট থেকে ফরিদের মরহেদ উদ্ধার করে সেদেশের পুলিশ। ওই দিন অজ্ঞাতনামা যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে ‘জওজে টিভি’র বরাত দিয়ে সেদেশের ‘নোভেনী ডট এসকে’ নামের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদটি প্রচার করে। ফরিদের স্বজনরা যুক্তরাজ্য থেকে স্লোভাকিয়ায় গিয়ে সেদেশের একটি মর্গে ফরিদ উদ্দিন আহমদের লাশ সনাক্ত করেন। এরপর লাশ দেশে নিয়ে আসতে তারা অনেক প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। ফরিদের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা প্রহণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপির কাছেও ছুটে যান সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ শফিকুর রহমান চৌধুরী। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর একপর্যায়ে লাশ বাংলাদেশে নিয়ে আসতে আন্তর্জাতিক একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করেন ফরিদের স্বজনরা। এরপর ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অবশেষে স্লোভাকিয়া থেকে ব্রিটেন হয়ে বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) বাংলাদেশে আসে ফরিদ উদ্দিন আহমদের লাশ। এরপর মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত করতে সুরতহাল শেষে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়না তদন্ত সম্পন্ন করা হয়।