AM-ACCOUNTANCY-SERVICES-BBB

বিশ্বনাথে মাটিজুড়া নদীর উপর দুই যুগ ধরে পরিত্যক্ত দু’টি ব্রিজ

বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডট কম :: অক্টোবর - ৩ - ২০১৯ | ৯: ০০ পূর্বাহ্ণ

এমদাদুর রহমান মিলাদ  : বিশ্বনাথের মাটিজুড়া নদীর উপর প্রায় দুই যুগ ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে দুটি ব্রিজ। ব্রিজ দু’টির সাথে নেই কোন সংযোগ রাস্তা। যোগাযোগের সুবিধার্থে সংযোগ রাস্তা করার পরিকল্পনা নিয়ে ব্রিজ নির্মাণ করা হলেও রাস্তা না হওয়ায় নির্মাণের পর থেকে কোন কাজে না আসায় এগুলো রয়েছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে।

দীর্ঘদিন ধরে সেতু দুটির এমন করুণ অবস্থা থাকলেও এনিয়ে যেনো কারো কোন মাথা ব্যথা নেই। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমানের পোস্ট করা একটি ছবির কল্যাণেই তা চলে আসে জনসম্মুখে। এরিই সূত্র ধরে স্থানীয় সাংবাদিকরাও সরেজমিনে সেতু নির্মাণস্থল পরিদর্শন করে সেতু ব্যবহার না করতে পারায় এলাকাবাসীর দূর্ভোগ তুলে ধরেন গণমাধ্যমে।

জানা গেছে, প্রায় ২০ বছর পূর্বে উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের মাটিজুড়া নদীর উত্তর পাশের কালিটেকা, চানপুর (উত্তর পাড়), নদীর দক্ষিণ পাশের মৌলভীরগাঁও, মীরেরগাঁও ও উজাইজুড়ী গ্রামবাসী একত্রে কালিটেকা গ্রামের ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করতেন। তখনকার সময়ে কালিটেকা গ্রামে যাতায়াতের কোন রাস্তা ছিল না। এক পর্যায়ে চানপুর ও উজাইজুড়ী গ্রামবাসী তাদের গ্রামে নিজস্ব ঈদগাহ নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে কালিটেকা, মৌলভীরগাঁও ও মীরেরগাঁও গ্রামবাসী কালিটেকা গ্রামের ঈদগাহে নামাজ আদায়সহ তিন গ্রামবাসীর যাতায়াতের সুবিধার্থে এলাকাবাসী রাস্তা ও মাটিজুড়া নদীতে ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা নেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর ১৯৯৮ সালে মৌলভীরগাঁও গ্রামের কৃতিসন্তান ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি প্রয়াত আ.ন.ম শফিকুল হকের প্রচেষ্টায় তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত আব্দুস সামাদ আজাদের মাধ্যমে মাটিজুড়া নদীর উপর দুটি ব্রিজ’সহ এলাকায় মোট ৬টি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। নদীর উপর দু’টি ব্রিজ নির্মাণের পূর্বে স্থানীয় লোকজন রাস্তার জন্য জায়গা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন। কিন্তু ব্রিজ নির্মাণের পর সংযোগ রাস্তা নির্মাণ করতে সরকার থেকে বরাদ্দ হলেও স্থানীয় লোকজন রাস্তার জন্য নিজেদের জায়গা ছেড়ে না দেওয়ায় নির্মাণ হয়নি রাস্তা। ফলে, এই দু’টি ব্রিজ নির্মাণের পর থেকে অধ্যাবধি এলাকাবাসীর কোন কাজে আসেনি এ দু’টি ব্রিজ। বিগত কয়েক বছর আগে চানপুর গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী সিরাজুল ইসলাম হাজারীর ব্যক্তিগত অর্থায়নে মাটিজুড়া নদীর উপর একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হলে ওই ব্রিজ দিয়েই বর্তমানে যাতায়াত করছেন কালিটেকা গ্রামবাসী।

সরেজমিন বুধবার (২ অক্টোবর) কালিটেকা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাটিজুড়া নদীর উপর প্রায় দুই থেকে আড়াইশ’ গজের ভিতরে দু’টি ব্রিজ পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে কালিটেকা ও মৌলভীরগাঁও গ্রামবাসীর যাতায়াতের জন্য একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছিল। এই ব্রিজটির দু’পার্শ্বেই নেই এপ্রোচ। নদীর মধ্যখানে দাঁড়িয়ে আছে ব্রিজটি। ওই ব্রিজের একটি পশ্চিম পার্শ্বে, কালিটেকা ও মীরেরগাঁও গ্রামবাসীর যাতায়াতের জন্য অপর যে ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছিল, সেই ব্রিজের একপার্শ্বে সংযোগ রাস্তা থাকলে অন্য পাশে রয়েছে কবরস্থান। ফলে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে দু’টি ব্রিজই। কালিটেকা গ্রামবাসী যাতে সহজে মৌলভীরগাঁও ও মীরেরগাঁও গ্রামে যাতায়াত করতে পারেন এজন্য ওই পরিত্যক্ত দু’টি ব্রিজের মধ্যখানে তৈরী করেছেন একটি বাঁশের সাঁকো। ওই সাঁকোটিও রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। কালিটেকা গ্রামে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ওই বাঁশের সাঁকো দিয়েই মৌলভীরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মীরেরগাঁও গ্রামস্থ হযরত বড় পীর (রহ.) দাখিল মাদ্রাসায় যাতায়াত করছে কালিটেকা গ্রামের শিক্ষার্থীরা।

হযরত বড় পীর (রহ.) দাখিল মাদ্রাসার ৩য় শ্রেণির ছাত্রী মাহিমা আক্তার জানায়, চানপুর গ্রাম হয়ে মাদ্রাসায় যেতে অনেক সময় লাগে। ওই রাস্তা দিয়ে গেলে সঠিক সময়ে মাদ্রাসায় উপস্থিত হওয়া যায় না। তাই, দ্রুত সময়ে মাদ্রাসায় যেতে ঝুঁকিপূর্ণ ওই বাঁশের সাঁকো দিয়ে সে প্রতিদিন যাতায়াত করে।

মীরেরগাঁও গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম ও মৌলভীরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, মাটিজুড়া নদীর উত্তর পাড়ে কালিটেকা, চানপুর (উত্তর পাড়) এবং নদীর দক্ষিণ পাশের মৌলভীরগাঁও, মিরগাঁও ও উজাইজুড়ী গ্রামবাসীর যাতায়াতের সুবিধার্থে আমাদের এলাকার কৃতি সন্তান প্রয়াত আ ন ম শফিকুল হকের প্রচেষ্টায় ১৯৯৮ সালে মাটিজুড়া নদীর উপর নির্মিত দু’টি ব্রিজ’সহ এলাকায় মোট ৬টি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে নদীর উপর নির্মিত দু’টি ব্রিজের সংযোগ রাস্তা নির্মাণ করার জন্য স্থানীয় লোকজন প্রথমে জায়গা দিতে রাজি থাকলেও পরবর্তীতে তারা সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে যান। ফলে রাস্তা নির্মাণ না হওয়ায় নির্মিত ব্রিজ দিয়ে এলাকার মানুষ চলাচল করতে পারেননি। তবে, রাস্তাটি সম্পন্ন করার জন্য মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন আ ন ম শফিকুল হক।

বিশ্বনাথ উপজেলা প্রকৌশলী (অ:দা:) হারুনুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন, রাস্তা ছাড়া ব্রিজ কিভাবে হল তা আমার জানা নেই। তবে, বিষয়টি খতিয়ে দেখব।

আরো সংবাদ