AM-ACCOUNTANCY-SERVICES-BBB

এবার চার ভাগে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব ইজতেমা

বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডট কম :: জানুয়ারি - ৪ - ২০১৬ | ১: ০৫ পূর্বাহ্ণ

file

নিউজ ডেস্ক :: এবারেই প্রথমবারের মতো চার ভাগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা। মুসল্লিদের স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় ২০১১ সাল থেকে দুই পর্বের ইজতেমা শুরুর পর এবার আবারও এ পরিবর্তন আনা হলো। দেশের ৩২টি জেলার মুসল্লিদের নিয়ে টঙ্গী তুরাগ তীরে দুই ধাপে আগামী ৮ জানুয়ারি শুরু হবে এবারের ২০১৬ সালের বিশ্ব ইজতেমা এবং শেষ হবে ১০ জানুয়ারি। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ১৫ জানুয়ারি এবং আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ১৭ জানুয়ারি। এবার প্রথম ধাপে বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেবে দেশের ৩২টি জেলার মুসল্লিরা। বাকি ৩২ জেলার মুসল্লিরা আগামী ২০১৭ সালে দুই ধাপে বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেবে। বিশ্ব ইজতেমার শীর্ষ পর্যায়ের মুরুব্বিরা ইজতেমার এ তারিখ নির্ধারণ করেছেন। তবে বিদেশী মুসল্লিরা প্রতি বছর বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে পারবেন।

টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা মাঠের প্রস্তুতি কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইজতেমা মাঠের ব্যাপক প্রস্তুতিতে স্কুল, কলেজ, মাদরাসার ছাত্র ও আশপাশের জেলা হতে তাবলীগ অনুসারী মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করছেন।

ইজতেমা ময়দান ঘুরে দেখা গেছে, টঙ্গির তুরাগ তীরে ১৬০ একর জায়গার ওপর এজতেমা মাঠের ৯৫ ভাগ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। প্রায় এক বর্গ কিলোমিটারের বিশাল মাঠটিকে বাঁশের খুটির উপর চটের ছাউনি দিয়ে আবৃত করা হয়েছে। তাবলীগ অনুসারী ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এই প্যান্ডেলের নিচে অবস্থান করবেন। বিদেশী মুসল্লিদের জন্য আলাদাভাবে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাধারণ মুসল্লিরা নিজেদের খরচে খাওয়ার ব্যবস্থা করে থাকেন। গোসল ও পয়ঃসিষ্কাষণের জন্য সরকারি পর্যায়ে বিশেষ ব্যবস্তা নেয়া হয়েছে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ ও সেনা বাহিনীর একটি বিশেষ ইঞ্জিনিয়ারিং কোর এজতেমা মাঠের উন্নয়ন ও তুরাগ নদীতে ভাসমান সেতু নির্মাণ করছে।

এদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও বিআরটিসি মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য বিশেষ ট্রেন ও বাস সার্ভিস চলাচলের ব্যবস্থা করেছে। এগুলো ৬ জানুয়ারি থেকে চলাচল শুরু হবে।

বিশ্ব ইজতেমার মুরুব্বি গিয়াস উদ্দিন জানান, ইজতেমার ময়দানে মুসল্লিদের স্থান না হওয়ায় এ বছর থেকে দেশে ৬৪ জেলাকে ৪ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এবারে বিশ্ব ইজতেমায় দুই ধাপে অংশ নেবে দেশে ৩২টি জেলার মুসল্লিরা। বাকি ৩২ জেলার মুসল্লিরা আগামী ২০১৭ সালে দুই ধাপে অংশ নেবে। প্রতিটি জেলার মুসল্লিরা এক বছর পরপর বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে পারবে। যে সব জেলা এ বছর বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিবে সেই জেলাগুলো আগামী ২০১৭ সালে অংশ নিতে পারবে না। এবার যে জেলার মুসল্লিরা ইজতেমায় অংশ নিতে পারবে না সেখানে জেলায় জেলায় ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। তবে বিদেশী মুসল্লিরা প্রতি বছর বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে পারবে।

তিনি আরো জানান, ২০১১ সাল থেকে বিশ্ব ইজতেমা দুই ধাপে করা হয়েছে। দেশের ৬৪ জেলার মুসল্লিরা প্রতিবছর বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে পেরেছে। এবার মুসল্লিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং স্থান সংকুলান না হওয়ায় ৬৪ জেলার মুসল্লিরা অংশ নিতে পারছে না বিশ্ব ইজতেমায়। এবার থেকে প্রতি বছর ৩২ জেলার মুসল্লিরা ইজতেমায় অংশ নেবে। ২০১১ সালের আগে প্রতি বছর এক ধাপে অনুষ্ঠিত হতো বিশ্ব ইজতেমা।

ইজতেমা এক পর্বে অনুষ্ঠানের দাবি
এদিকে শিল্পমালিক, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, অবিভাবক ও সাধারণ তাবলীগ অনুসারী মুসল্লিরা টঙ্গীর বিশ্ব এজতেমা পূর্বের মতো এক পর্বে অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, গত তিন বছর ধরে দু’পর্বে বিশ্ব এজতেমা অনুষ্ঠানের ফলে টঙ্গী শিল্প এলাকার জনজীবন ১৫ দিন ধরে স্থবির হয়ে পড়ে। এছাড়াও ইজতেমা এলাকার মহাসড়কগুলোর দুই পাশের ফুটপাত দখল করে অবৈধ দোকান-পাট বসানোর কারণে যান চলাচল স্থবির হয়ে পরে। এমনকি পায়ে হেটেও চলাচল করা কষ্ট সাধ্য হয়ে যায়। পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হলেও স্থানীয় প্রভাবশালীদের কারণে অবৈধ দোকান-পাট উচ্ছেদ করা সম্ভব হয় না বলে স্থানীয়রা জানায়।

পুলিশের নিরাপত্তা ব্যাবস্থা
গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) হারুন-আর রশীদ বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা বিষয়ে বলেন, প্রতিবারের ন্যায় এবারও থাকছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওয়াচ টাওয়ার, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, মাঠের সব প্রবেশ পথে ও কৌশলগত স্থানে ইলেক্ট্রনিক তল্লাশি (আর্চওয়ে) ব্যবস্থা, ভিডিও ক্যামেরা স্থাপনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পদক্ষেপ।

ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তায় কন্ট্রোল রুম এবং আইন-শৃঙ্খলা উন্নয়নে বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় করে কাজ করা হবে। নিরাপত্তায় পুলিশ-র‌্যাবের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের টিমও থাকবে। নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে আমরা দু’একদিনের মধ্যে মিটিং করবো।

তিনি আরো বলেন, আগত মুসল্লিদের সেবার জন্য ওয়াসা, বিদ্যুৎ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য বিষয়ে ব্যবস্থা থাকছে। এছাড়া ইজতেমা উপলক্ষে তুরাগ নদীর পারে ভাসমান ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা রোধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ইজতেমা এলাকায় অস্থায়ী দোকানপাট, স্থাপনা, বস্তি ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। ইজতেমাস্থল ও আশেপাশে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার বিক্রি মনিটর, খাবারের মূল্য নিয়ন্ত্রণ, ভেজাল ও পঁচা-বাসি খাবার বিক্রির বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। এছাড়া ইজতেমা চলাকালে সংশিশ্লষ্ট এলাকায় অশ্লীল পোস্টার, অবৈধ ও অপ্রয়োজনীয় ব্যানার, ফেস্টুন ও আপত্তিকর ব্যানার অপসারণ করা হবে।

ইজতেমা ময়দানের প্রস্তুতি সম্পর্কে গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে আশ-পাশের এলাকা ও ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করেছে। ইজতেমা কর্তৃপক্ষ তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। মুসল্লিদের জন্য ময়দানে পানির সুবিধা, বিদ্যুতের সুবিধা, নিরাপত্তা এবং বিদেশী মেহমানদের থাকা ও নিরাপত্তা বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

প্রথম ধাপে অংশ নেবে ১৭ জেলার মুসল্লি
এবারে বিশ্ব ইজতেমায় প্রথম ধাপে ১৭টি জেলার মুসল্লিরা অংশ নেবে। জেলা ও খিত্তাগুলো হলো- ঢাকা ১ থেকে ৬নং খিত্তায়, শেরপুর ৭নং খিত্তায়, নারায়ণগঞ্জ ৮ ও ১১নং খিত্তায়, নীলফামারী ৯নং খিত্তায়, সিরাজগঞ্জ ১০নং খিত্তায়, নাটোর ১২নং খিত্তায়, গাইবান্ধা ১৩নং খিত্তায়, লক্ষ্মীপুর ১৪ ও ১৫নং খিত্তায়, সিলেট ১৬ ও ১৭নং খিত্তায়, চট্টগ্রাম ১৮ ও ১৯নং খিত্তায়, নড়াইল ২০নং খিত্তায়, মাদারীপুর ২১নং খিত্তায়, ভোলা ২২ ও ২৩নং খিত্তায়, মাগুড়া ২৪নং খিত্তায়, পটুয়াখালী ২৫নং খিত্তায়, ঝালকাঠি ২৬নং খিত্তায় এবং পঞ্চগড় ২৭নং খিত্তায়।

দ্বিতীয় ধাপে ১৫ জেলার
দ্বিতীয় ধাপে অংশ নেবে ১৫টি জেলার মুসল্লিরা। ওইসব জেলা ও খিত্তাগুলো হলো- ঝিনাইদহ ৮নং খিত্তায়, জামালপুর ৯ ও ১১নং খিত্তায়, ফরিদপুর ১০নং খিত্তায়, নেত্রকোনা ১২ ও ১৩নং খিত্তায়, নরসিংদী ১৪ ও ১৫নং খিত্তায়, কুমিল্লা ১৬ ও ১৮নং খিত্তায়, কুড়িগ্রাম ১৭নং খিত্তায়, রাজশাহী ১৯ ও ২০নং খিত্তায়, ফেনী ২১নং খিত্তায়, ঠাকুরগাঁও ২২নং খিত্তায়, সুনামগঞ্জ ২৩নং খিত্তায়, বগুড়া ২৪ ও ২৫নং খিত্তায়, খুলনা ২৬ ও ২৭নং খিত্তায়, চুয়াডাঙ্গা ২৮নং খিত্তায় এবং পিরোজপুর ২৯নং খিত্তায়।

আরো সংবাদ