হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী :: সিলেটে এবার শীত নেমেছে দেরিতে। তবে শীত নামতে না নামতেই হাকালুকিসহ সিলেটের হাওরগুলো মুখর হয়ে উঠেছে পরিযায়ী পাখির কল-কাকলীতে। সুদূর সাইবেরিয়া থেকে নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখি সিলেটের বিখ্যাত হাকালুকি, টাঙ্গুয়া, বাইক্কা বিল, পাকনা হাওর, হালির হাওর, ধারাম হাওর, ধানকুনিয়া, কাউওয়া দীঘিসহ বিভিন্ন জলাশয়-হাওর মুখর করে রেখেছে। এলাকাবাসী জানান, চোর শিকারীদের কারণে এখন আগের মতো পাখি আসে না। শিকারীরা নানা রকম ফাঁদ পেতে পাখি ধরে। পাখির অভয়াশ্রমগুলো দিনে দিনে যেন সংকুচিত হয়ে আসছে।এবছর অবশ্য হাকালুকির অতিথি পাখি রক্ষায় হাওরবাসীই এগিয়ে এসেছেন। হাকালুকিতে পরিযায়ী পাখির নিরাপদ অভয়ারণ্য গড়ে তুলতে হাওর পাড়ের ৫ উপজেলা ফেঞ্চুগঞ্জ, কুলাউড়া, বড়লেখা, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারের সচেতন লোকজন একজোট হয়েছেন। প্রশাসনের সহযোগিতায় তারা গঠন করেছেন কমিটি। এই কমিটির মাধ্যমেই হাওরবাসী নিরাপত্তা দেবেন অতিথি পাখিদের। তাদের এ কাজে সহযোগিতা করবে ইউএসআইডির ক্রেল প্রকল্প। সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে হাওর এলাকায় শিকারিরা ফাঁদে পেতে পাখি ধরছে। কিছুদিন ধরে সেখানে পরিযায়ী পাখি বিক্রি করতে দেখা গেছে। পারিযায়ী পাখি প্রতি জোড়া ৬-৭শ টাকায় বিক্রি হয়। স্থানীয়রা জানান, সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে পাগনার হাওর, হালির হাওর, ধারাম হাওরে পাখি আসতে শুরু করে। আর এ সময় থেকেই কিছু মানুষের শিকার তত্পরতা বেড়ে যায়। পরিবেশবাদী সংস্থা সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজ (সিএনআরএস) প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে জামালগঞ্জে বনায়ন, বৃক্ষরোপণ, পাখির বাসা নির্মাণসহ পরিবেশ সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছে। তারা পরিবেশ সংরক্ষণের পাশাপাশি এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করছে। শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সিলেট অঞ্চলে অতিথি পাখি আসা শুরু করে। এসব পাখি যাতে শিকারিদের কবল থেকে মুক্ত থাকে এ ব্যাপারে সংস্থটি কাজ করে। সিএনআরএসের জেলা টিম লিডার শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, পাখি শিকার আইনত অপরাধ। যারা এমন কাজ করছে আমরা জানতে পারলে প্রশাসনের মাধ্যমে তা রোধ করার ব্যবস্থা নেই। স্থানীয়রা জানান, শীত যত বাড়বে পাখিও বাড়বে। তবে এ ক্ষেত্রে পাখি শিকারীদের প্রতিহত কারার আন্দোলন জোরদার করতে হবে। সূত্র জানায়, হাকালুকি হাওরে অতিথি পাখির অবাধ বিচরণের জন্য পরিবেশ অধিদফতরের বাস্তবায়নাধীন কোস্টাল ওয়েটল্যান্ড অ্যান্ড বায়োডাইভারসিটি ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট হাওরে ১৪টি পাখির অভয়াশ্রম তৈরি করে; কিন্তু এই প্রজেক্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে অরক্ষিত হয়ে পড়ে পাখির অভয়াশ্রম।