AM-ACCOUNTANCY-SERVICES-BBB

সাংবাদিকদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও কটুক্তি করলেন মন্ত্রী

বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডট কম :: আগস্ট - ১০ - ২০১৪ | ১২: ১৪ পূর্বাহ্ণ

35910_mohsin

সাংবাদিকদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও কটুক্তিপূর্ণ মন্তব্য করায় সিলেটে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর অনুষ্ঠান বর্জন করে বিক্ষোভ করেছেন সাংবাদিকরা। শনিবার বিকেলে নগরীর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আদিবাসী দিবসের আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের উপর চড়াও হন সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী।

তিনি বলেন সাংবাদিকরা অশিক্ষিত, টাকা খেয়ে অন্যের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করে। এজন্যই সম্প্রচার নীতিমালা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন ‘সেদিন আমি কেবিনেটে উপস্থিত ছিলামনা। থাকলে আরো শক্ত করে টুটি চেপে ধরার ব্যবস্থা করতাম।’ সাংবাদিকদের সংশোধন হয়ে যাওয়ার আহবান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন অন্যথায় কোমর ভেঙ্গে দেয়া হবে।
অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক নারী ও শিশুর উপস্থিতিতে সমাজকল্যাণমন্ত্রী কুরুচিপূর্ণ ভাষায় সাংবাদিকদের গালিগালাজ করেন।
এদিকে,মন্ত্রীর এসব বক্তব্যের এক পর্যায়ে উপস্থিত সাংবাদিকরা প্রতিবাদ জানালে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। এসময় মন্ত্রীর এপিএসসহ দলীয় ক্যাডাররা সাংবাদিকদের নাজেহাল করে। পরে অনুষ্ঠান বয়কট করে বেরিয়ে আসেন সাংবাদিকরা। তারা এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্য মন্ত্রীকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহবান জানান। অন্যথায় ভবিষ্যতে সিলেটে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর সকল অনুষ্ঠান বর্জনেরও ঘোষনা দেন।
সিলেট বিভাগীয় আদিবাসী উদযাপন কমিটি আয়োজিত আদিবাসী দিবসের আলোচনা সভা শুরু হয় বিকেলে। অনুষ্ঠানে সিলেটের সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সাংসদ শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ বিশেষ অতিথি ছিলেন। বিশেষ অতিথিদের বক্তৃতা পর্ব শেষে ছয়টার দিকে সমাজকল্যাণমন্ত্রী বক্তৃতা শুরু করেন। বিষয়বস্তু আদিবাসী নিয়ে হলেও প্রায় ৪০ মিনিট বক্তৃতায় তিনি ঘুরে ফিরে সাংবাদিকদের নানা রকম অশ্লীল শব্দ প্রয়োগ আক্রমনাÍক বক্তৃতা দেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বক্তৃতা দেওয়ার জন্য তাঁকে আহবান করা মাত্র তিনি মাইক্রোফোনের সামনে এসে সাংবাদিকদের সরে যেতে বলেন। এ সময় তিনি ‘সর সর…’ বলেন। এক পর্যায়ে ‘তোমাদের মুখ দেখতে আসি নাই…’ বলে সাংবাদিকদের মাইক্রোফোনের সামনে থেকে ক্যামেরা নিয়ে চলে যেতে বলেন। সাংবাদিকেরা যা ইচ্ছে তাই লিখে জানিয়ে বলেন, ‘এরা কেউ জার্নালিজম পড়ে সাংবাদিক হয়নি। একমাত্র আমার মেয়ে জার্নালিজমে এমএ করেছে। আর এরা কলেজে ঘোরাঘুরি করে সাংবাদিক বনে গেছে।’

বক্তব্যের শুরুতে সাংবাদিকদের ছবি তুলে অনুষ্ঠানস্থল থেকে চলে যেতে বলে সমাজকল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘যতদিন দুনিয়া থাকবে ততোদিন ফজরের নামাজের পর মসজিদে কোরআন শরীফ পাঠ হবে। মাদরাসা শিক্ষায় আরবীর পাশাপাশি বাংলা-ইংরেজি শিক্ষা না দিলে তারা পিছিয়ে পড়বে। আমি একটি অনুষ্ঠানে এ রকম কথা বলেছিলাম, কিন্তু সাংবাদিকরা আমার বক্তব্য বিকৃত করে প্রকাশ করেছে।’

একটি জাতীয় দৈনিকের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজ ওই পত্রিকা লিখেছে তারা আমাকে লাল পানি খাওয়াবে। আমি বলি একটা, তারা লিখে আরেকটা। আমার শ্বশুর বাড়ি সিলেটে। সাংবাদিকদের পেছনে সিলেটের মানুষ লেলিয়ে দিতে আমার সময় লাগবে না।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আমার নেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ডেকে বলেছেন হাসানুল হক ইনু ১৪ দলের নেতা, আর তুমি আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা। সাংবাদিকরা যা ইচ্ছে লেখুক, তাতে কিছু যায় আসে না। তুমি চালিয়ে যাও।’
মন্ত্রী বক্তৃতার এক পর্যায়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রতি অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে বলেন, ‘এরা সবটা খবিশ, চরিত্রহীন! স্বাধীন কমিশন হলে পরে দেখ নেবÑতোমরা (সাংবাদিকেরা) কতটুকু যেতে পার!’

‘খবিশ’ ও ‘চরিত্রহীন’ বলে মন্তব্য করার পর মিলনায়তনে উপস্থিত সাংবাদিকেরা প্রতিক্রয়া দেখান। সাংবাদিক গ্যালারিতে থাকা সকল সাংবাদিক নিরবে বের হয়ে যাওয়ার সময়ও তিনি খবিশ ও চরিত্রহীন বলে গালি দেন। এক পর্যায়ে সাংবাদিকেরাও তার ওপর চড়াও হলে মন্ত্রী বক্তৃতা বন্ধ করে নিরব থাকেন। তখন মিলনায়তজুড়ে হট্টগোল সৃষ্টি হলে মঞ্চে বসা জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী ও আদিবাসী নেতারা সাংবাদিকদের মিলনায়তন থেকে নিরবে বের হয়ে যেতে সহায়তা করেন।

সাংবাদিকেরা মিলনায়তন থেকে চলে যাওয়ার পাঁচ মিনিট বিরতি দিয়ে মন্ত্রী ফের মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়ান বক্তৃতা শেষ করতে। বক্তৃতা শেষ করতে গিয়ে ফের সাংবাদিকদের ভর্ৎসনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি যুদ্ধ করেছি, তাই তোমাদের (সাংবাদিক) বিরুদ্ধে বলার সাহস আছে। তোমাদের কার কী চরিত্র আমার জানা আছে। ডিএসবি দিয়ে চারিত্রিক ডাটা বের করতে সময় লাগবে না।’ এ কথা বলে মন্ত্রী বক্তৃতা শেষ করেন। পরে পুলিশ পাহারায় গাড়ি দিয়ে সার্কিট হাউসে চলে যান।

অনুষ্ঠান কাভার করতে যাওয়া সাংবাদিকেরা এর আগে জেলা পরিষদ মিলনায়তনের সামনে সংক্ষিপ্ত বিক্ষোভ করে পরে মিলনায়তন এলাকা ছেড়ে চলে যান। মন্ত্রীর বক্তৃতায় বিপাকে পড়েন আদিবাসী নেতৃবৃন্দ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আদিবাসী নেতা বলেন, ‘আমরা তো সাংবাদিকদের দাওয়াত করে এনেছিলাম। অনেক সাংবাদিক আমাদের ফোন করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আমরা সাংবাদিকদের আসলে বলার মতো কিছুই পায়নি। বিষয়টি মন্ত্রী যদি সরাসরি এ ব্যাপারে উদ্যোগী হন, তাহলে আদিবাসীদের জন্য মঙ্গল।’

সমাজকল্যাণমন্ত্রী যখন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছিলেন, পেছনে অনেকটা বিব্রত ভাব নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মন্ত্রীর এপিএস সাইফুল ইসলাম খান। অনুষ্ঠান শেষে জানতে চাইলে মন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রীর বক্তৃতাকে বিকৃত করে ইতিপূর্বে কয়েকটি পত্রিকা রিপোর্ট করায় মন্ত্রী ক্ষুব্ধ ছিলেন। সাংবাদিকেরা সামনে দেখে সেই ক্ষোভে মন্ত্রী কিছু কথা বলে ফেলেছেন। বিষয়টি আসলেই দুঃখজনক!’

আরো সংবাদ