AM-ACCOUNTANCY-SERVICES-BBB

‘‘আব্বুর অপেক্ষায় শিশু চাঁদনী”

বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডট কম :: আগস্ট - ১ - ২০১৪ | ৬: ১০ অপরাহ্ণ

Biswanath (Sylhet) Pic 20.04.14 - Copy

মোহাম্মদ আলী শিপন : চাকুরী করতেন ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক,সাবেক সাংসদ ও সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে। সুযোগ পেলেই ছুটে আসতেন গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথে গমরাগুল গ্রামে। একমাত্র সন্তান চাঁদনীকে (৫) দেখার জন্য। বাবা এখন আর আসেন না। অপহরণ,নিখোঁজ বা গুম-হত্যার অর্থ চাঁদনী বুঝতে না পারলেও ছোট চাঁদনী ঠিকই বুঝতে পারে তার বাবা আসছেন না। তবুও চাঁদনী তার আব্বু ফিরে আসবেন ভেবে প্রতিদিন পথ চেয়ে থাকে। পাঁচটি ঈদ কেটে চাঁদনি পিতা আনসার আলীকে ছাড়াই। এবারেও ঈদের আনন্দ ছিলনা নিখোঁজ ইলিয়াস আলী পরিবারের মতোই তাঁর গাড়ি চালক আনসার আলীর পরিবারে। পরিবারের একমাত্র উর্পাজনকারি স্বামীকে হারিয়ে স্ত্রী মুক্তা বেগম এখন নির্বাক হয়ে পড়েছেন। পরিবারের সদস্যরা আছেন কবে ফিরে আসবেন আনসার সেই অপেক্ষায়।
২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে রাজধানীর বনানী থেকে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হন। ইলিয়াস আলীর গাড়ির ড্রাইভার ছিলেন আনসার আলী। গাড়িটি বনানী থেকে উদ্ধার হলেও ঘটনার পর থেকে আনসার আলীও নিখোঁজ। নিখোঁজের দীর্ঘ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো  তাদের কোন সন্ধান মিলেনি।
সূত্র জানায়, গত ২০ বছর ধরে আনসার আলী ইলিয়াস আলীর বাসায় কাজ করে আসছিলেন। কয়েক বছর থেকে তিনি ইলিয়াস আলীর গাড়ি চালাতেন। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আনছার দ্বিতীয়। বাবা মরহুম ইছব আলী। স্থায়ী ঠিকানা বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের গমরাগুল গ্রামে। ঢাকায় ইলিয়াস আলীর বাসাতেই আনসার বসবাস করতেন। ইলিয়াস আলীর সাথে তাদের আত্মীয়তার সর্ম্পক ছিল। তিনি ছিলেন ইলিয়াসের খুব বিশ্বস্ত। আনসারের উপার্জিত অর্থ দিয়েই চলত সংসার। আনসার আলীর যে রাতে নিখোঁজ হয়েছেন ওই রাত ১১টার দিকে পরিবারের সদস্যদের সাথে আনসার আলীর সর্বশেষ কথা হয়। রাতেই তারা জানতে পেরেছেন ইলিয়াস আলীর সাথে আনসার আলীও নিখোঁজ হয়েছেন। এরপর থেকে আনসারের পরিবারের ভর করে অন্ধকার। কি করবেন দিশেহারা হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা।
আনসার আলী বাড়িতে আসলেই ছোট্র চাঁদনীকে নিয়েই কাটত তার সময়। ‘আব্বু’ ডাকটি শুনতে আনসার ছিলেন ব্যাকুল। মোবাইল করেও এ ডাকটি শোনার জন্য তিনি দীর্ঘক্ষণ ফোন কানে ধরে রাখতেন। পাঁচ বছরের চাঁদনীর মুখে ফুঁটেছে কথা। এখন বাবার কথা জিজ্ঞেস করলেই চাঁদনী বলে ‘আব্বু আমার লাগি মজা লইয়া আইবা’। তবে নিখোঁজের পর থেকে ইলিয়াস আলীর পরিবারের পক্ষ থেকে প্রতি মাসে আনসারের পরিবারকে সাত হাজার টাকা দেওয়া হয়। সম্প্রতি একটি কিন্ডার গার্ডেনে শিক্ষকতার চাকুরী নিয়েছেন আনসার আলী স্ত্রী মুক্তা বেগম। বাড়ি থেকে প্রায় ৫কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ঐ স্কুলে প্রতিদিন পড়াতে যান মুক্তা বেগম। কখনো কখনো শিশু চাঁদনীকেও সাথে নিয়ে যান। ঐ স্কুলে শিক্ষকতার বিনিময়ে কিছু সম্মানি পান তিনি। কিন্ত সবমিলিয়ে এইসব টাকা দিয়েই কোনো রকম চলছে নিখোঁজ আনসারের সংসার।
দিন রাত বিলাপ করছেন আনসারের মা নুরজাহান বেগম। সেই ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত তার কান্না এক মুহুর্তেও জন্যও থামেনি। ঘুমের ঘোরে চিৎকার করে ওঠেন আনসারের নাম ধরে। নুরজাহান জানান, আনছার হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে তার চিসিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে। ওষুধ কেনার টাকা নেই। প্রতি সপ্তাহে তার ডাক্তার দেখানোর কথা। তা এখন বন্ধ। টাকা নেই, কী দিয়ে ডাক্তার দেখাবেন। এক দিকে সন্তানের শোক অন্য দিকে ওষুধ-পথ্যের অভাবে তিনি এখন শয্যাশায়ী।
তিনি জানান, ইলিয়াস আলী সে (আনসার) মনে প্রাণে ভালবাসতো, আর ইলিয়াস আলীও আনসারকে তার পরিবারের সদস্যের মতো দেখতেন, স্নেহ করতেন। আমার ছেলে (আনসার) কে তার বন্ধুরা লন্ডন নিতে চেয়েছিল কিন্ত ইলিয়াস আলীকে ছেড়ে যেতে সে (আনসার) রাজি হয়নি। সেই স্পনসরের কাগজপত্র আজো ঘরে পড়ে আছে।
নুরজাহান বেগম বলেন, ‘আর কত অপেক্ষা ! মন তো মানছে না।’ এখনো তিনি অপেক্ষা করে আছেন হয়তো তার ছেলে আনসার ফিরে আসবে। আবারো মা বলে ডাকবে। আনছার আলীর স্ত্রী মুক্তা বেগমেরও দৃঢ় বিশ্বাস তার স্বামী একদিন ফিরে আসবেন।
আনসারের স্ত্রী মুক্তা বেগম বলেন, আমাদের আবার কিসের ঈদ। ছোট মেয়ে চাঁদনি প্রতিদিন তার পিতাকে এনে দেওয়ার কথা বলে। শিশু কন্যা চাঁদনীকে কিছুতেই সান্তনা দিতে পারছেন না। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস ইলিয়া আলী ও আনসার আলী আবারও ফিরে আসবেন।
তিনি বলেন, ইলিয়াস আলীর পরিবারের সাথে আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। তবে দলীয় নেতাকর্মীরা আগের মতো আমাদের সাথে তেমন কোন যোগাযোগ নেই। মাঝে মাঝে কিছু নেতাকর্মী ফোন করে আমাদের খোঁজ খবর নেন।

আরো সংবাদ