AM-ACCOUNTANCY-SERVICES-BBB

লন্ডনের ঈদ মানে পারিবারিক মিলন মেলা

বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডট কম :: জুলাই - ২৮ - ২০১৪ | ৪: ০১ পূর্বাহ্ণ

1934679_71677533400_825058_n

জাকির হোসেন কয়েছ :  স্কুল ও কলেজে যখন পড়তাম তখন ঈদের দিনের অপেক্ষার শেষ ছিলনা। ঈদের দিন সিলেটে গিয়ে লুকিয়ে বন্ধুদের নিয়ে সিনামা দেখা যেন ঈদের আনন্দকে বাড়িয়ে দিত। সারাদিন ঘুরাঘুরি। এদিক সেদিক। এবাড়ী ওবাড়ী। পাশের বাড়ীর —-? দিকে তাকিয়ে থাকা।  রমজানের ঈদেই বেশ আনন্দ পাওয়া যেত। এক একটা রোজা যত কমছে ঈদের আনন্দ ততযেন কাছা কাছি চলে আসছে। ঈদের দিনে সিনামা দেখা ছিল রীতিমত প্রতিযোগীতা মূলক। ঈদের দিন কে কয়টা সিনামা দেখিছি তা নিয়ে বন্ধুদের ঈদ পরবর্তী আড্ডা হত। একেক জন এককেটা সিনামার গল্প বলতাম। ঈদের রাতে বাংলাদেশ টেলিভিশনের নাটক, ইত্যাদি, ঈদের ছবিগুলিও মিছ দিতাম না। বন্ধুদের নিয়ে হইচই আজ প্রবাসে বেশ মনে পড়ে। আমার বেশ মনে আছে আজি যখন লন্ডনে আসি তখন ছিল রমজানের ঈদের ঠিক পরের দিন। সেই ঈদের দিন গিয়ে ছিলাম বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তজম্মুল আলী রাজুর বাড়ীতে। পরবর্তীতে জুবায়ের ভাই বাসায়। সেই ঈদের দিনগুলি আজও আমার স্মৃতিতে ভেসে উঠে। তবে বলে রাখা ভাল সিলেট এমসি কলেজ থেকে ডিগ্রী পাশ করার পাশাপাশি যখন সাংবাদিকতায় মনোযোগী হয়ে পড়ী তখন থেকে ঈদে দিন সিনামা দেখা তেমন একটা হত না। তখন বেশিভাগ সময় বন্ধুমহল, কলিগদের নিয়ে আড্ডাই হত বেশি ।
লন্ডনের আসার পর থেকে ঈদের সেই আনন্দ আর নাই। লন্ডনে ঈদ মানেই পারিবারিক মিলন মেলা। ঈদের দিন জামাত আদায় করে কোন নিকট আন্তীয়ের ঘরে যাওয়া। সেখানে দুপুরের খাবার। আন্তীয় স্বজনদের সাথে দীর্ঘদিন পর দেখা সাক্ষাত। খুশ গল্প। দেশ নিয়ে নানান জনের নানান অভিযোগ কিংবা দেশে কে কি করেছেন, নতুন বাড়ী, নতুন ব্যবসা, কিংবা কেউ কেউ কোথায় কোথায় জায়গা জমি রেখেছেন সেগুলিই বেশি আলোচনা হয়। ঈদের জামা, কে কি পড়েছেন এগুলি নিয়ে ততটা আলোচনা হয় না যতটা আলোচনা হয় দেশের দুষ্ট রাজনীতি নিয়ে। তবে মহিলাদের ব্যাপারটা আলদা। তারা দেশ নিয়ে ততটা চিন্তিত নয়। তাদের চিন্তা অন্যরকম। কোন মহিলা কি কাপড় পড়লেন। কাকে কেমন দেখাচ্ছে। মোবাইলে ছবি তুলা। এর পর কার ঘরে যাবে সে চিন্তায় মহিলারা বেশি ভিজি থাকেন। আবার ব্রিটেনে বেড়ে উঠা ছেলে-মেয়েরা তাদের চিন্তা আরেকটু ভিন্ন। তাদের পাটি হয় রাতে। দিনে আন্তীয়-স্বজন, বন্ধু-বন্ধব নিয়ে দামী গাড়ীতে করে লং ড্রাইব। রাতে নামী-দামী রেষ্টুরেন্টে ডিনার। দেরিতে ঘরে ফিরা। কোন কোন পরিবার আবার ছেলে-মেয়েদের ইচ্ছার কাছে নিরুপায়। কোথায় যাচ্ছে কি করছে জানার উপায় নেই। অনেকেই জেনেও নিরব থাকতে হয়।
ঈদের দিন ব্রিটেনের বাঙালী পাড়া থাকে উৎসব আনন্দে। এ দিক দেখা যায় নতুন কাপড় পড়ে একে আন্যের ঘরে যাচ্ছেন। বিশেষ করে মেয়েরা দল বেঁধে রাস্তা দিয়ে আড্ডা দিতে দিতে এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি। ছেলেদের দল মাঝে মধ্যে চোখে পড়ে। তবে  ছেলেরা বেশি করে গাড়ী রেইছ। প্রতি ঈদে দু‘একটা দুঘর্টনাও ঘটে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে প্রানও দিতে হয়েছে। প্রতি ঈদের দিন খুতবায় ইমাম সাহেবরা গাড়ী রেইছিং না করতে বিনীত অনুরোধ জানান। কিন্তু কে শুনে কার কথা। ঈদের সবচেয়ে বড় জামাত হয় ইষ্ট লন্ডন মসজিদে। এখানে নারী পুরুষ এক সাথে জামাত আদায় করতে পারেন। এক সাথে প্রায় ৮ হাজার মুসল্লি জামাত আদায় করেন। তাও আবার ৫টি জামাত হয়। ঈদের জামাতকে কেন্দ্র করে রাস্তায় রাস্তায় যানজটেরও সৃষ্টি হয় মাঝে মুধ্যে। ঈদের জামাতের পর হাজার হাজার বাংলাদেশীদের মিলন মেলা। আমার কাছে এ দৃশ্যটি খুবই ভাল লাগে। আমি অনেক সময় আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ি। লন্ডনে আমরা যারা বন্ধু মহল আছি তারাও ঈদের দিনে এক সাথে জামাত আদায় করতে পারিনা। একেক জনের কাজ একেক টাইমে। অনেকে আবার কোনরকম জামাত আদায় করে কাজে যেতে হয়। ঈদের আনন্দ কাজেই ভাগা ভাগি করে নিতে হয়।
ঈদের দিন দেশে ফোন করা, আন্তীয় স্বজনদের খুজ খবর নেয়া প্রবাসীদের নিয়মিত একটি অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। ঈদের জামাতের আগে ও পরে আমি আমার মাকে ফোন দেই। প্রতি ঈদেই উনার কান্না শুনতে হয়। প্রবাসী ছেলে-মেয়েদের কাছে না পাওয়ার বেদনা সকল মা‘দের যেমন কাঁদায়, ঠিক তেমনি আমাদের মন ভারাক্রান্ত থাকে। সন্তানের দু:খ, কষ্ট, আনন্দ কতটুকু মা-বাবাকে বেঁধে রাখে তা বুঝতে পারলাম যখন আমার ছেলে মিরাজ যেদিন জন্ম নিল। তার বয়স দেড় বছর। অথচ তার সকল সুখ, হাসি, কান্নায় আমি নিজেও যেন ঝড়িয়ে পড়েছি। প্রতিদিন যেমন আমার ফোনের অপেক্ষায় থাকেন আমার মা। ঠিক তেমনি প্রতিদিন আমার ছেলের হাসি মাখা মুখের দিকে থাকি আমি। কাজ থেকে গিয়ে যখন দেখি সে ঘুমিয়ে পড়েছে তখন মনে বিশাল কিছু মিস করছি। এটিই হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত মানুষের প্রতি মানুষের আত্মিক বন্ধন ও ভালবাসার নমুনা। পৃথিবী যত দিন ঠিকে থাকবে ততদিন এই প্রেম প্রীতি ভালবাসা থাকবে। সব শেষে সমগ্র বিশ্বনাথবাসী তথা দেশবাসীকে জানাই পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা। লেখক : সাবেক সভাপতি- বিশ্বনাথ প্রেসক্লাব ও বার্তা সম্পাদক- সাপ্তাহিক বাংলাদেশ (লন্ডন)

আরো সংবাদ