AM-ACCOUNTANCY-SERVICES-BBB

পবিত্র রমজানে গাজায় ইসরাঈলি গণহত্যা

বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডট কম :: জুলাই - ২৭ - ২০১৪ | ১২: ৫৪ পূর্বাহ্ণ

Pic

কাজী মুহাম্মদ জামাল উদ্দিন  : মধ্যপ্রাচ্যে বিষফোঁড়া খ্যাত অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাঈল কর্তৃক ফিলিস্তিনের গাজায় নিরস্ত্র, নিরিহ জনবসতির ওপর নারকীয় হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে এমন এক সময় যখন ফুটবল উম্মাদনায় বিশ্ব নজর ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ ব্রাজিলের দিকে। আর মুসলিম দুনিয়ায় চলছে হাজার মাসের চাইতে উত্তম মাস আর আল্লাহর নৈকট্য লাভের পবিত্র রমজান মাস। হামলার অজুহাত হিসেবে এবার বর্বর ইহুদী জঙ্গী নেতা নেতানিয়াহু বেছে নিয়েছেন যোগসূত্রহীন, তথ্যপ্রমাণ ছাড়া একমাস আগে তিন ইসরাঈলি কিশোর নিখোঁজ হওয়ার একটি কাল্পনিক কাহিনীকে। যদিও ইসরাঈলি সরকার ও তার মিডিয়া তাদের তিন কিশোর নিখোঁজ কিংবা হত্যার সাথে হামাস জড়িত এমন কোন তথ্যপ্রমাণ দিতে পারেনি। তবুুও তারা হামলার ক্ষেত্র তৈরীর জন্য বিকারগ্রস্থ উম্মাদের মতো প্রচারণা চালায় হামাসের বিরুদ্ধে। ইসরাঈল তার নাগরিকদের নিরাপত্তার অজুহাত তুলে বেসামরিক ফিলিস্তিনি নাগরিক তথা শিশু, নারীদের নির্বিচারে হত্যা করছে। মানব সভ্যতার ইতিহাসে ইসরাঈলি জঙ্গীদের এমন বর্বর হিংস্র গণহত্যার উদ্দেশ্য- ফিলিস্তিনি জনসংখ্যা কমিয়ে এনে আগামী প্রজন্মকে ধ্বংস করে দেয়া।
ফিলিস্তিনের গাজায় এখন ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় চলছে। নিরস্ত্র মানুষের উপর হামলার ভয়াবহতা এত ব্যাপক যে, কোন জায়গা এখন আর নিরাপদ নেই। গাজায় ভয়ানক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। সেখানে সর্বত্র আগুন জ্বলছে। এমন একটি জায়গাও নিরাপদ নেই যেখানে কেউ লুকাতে পারে। কোথাও কোন আশ্রয় নেই। গাজাবাসিরা মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বাড়ী থাকছেন আর বাড়ী ছেড়ে রাস্তায় বের হলে সরাসরি আক্রমনে প্রাণ হারাচ্ছেন। অব্যাহত হামলায় সেখানে বিদ্যুত, পানি নিস্কাশন, জ¦ালানী ব্যবস্থা লন্ডভন্ড অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে। হাসপাতালে জ্বালানী ব্যবস্থার অভাবে এখন গুরুতর আহতরা চিকিৎসা না পেয়ে প্রাণ হারাাচ্ছেন। বলা যায়,এক লাখ সত্তর হাজার নাগরিকের শহর পুরো গাজা এখন একটি ধ্বংসস্তুপ মৃত্যুপুরী।
গাজায় বেসামরিক লোকদের উপর ইসরাঈলিদের বর্বরোচিত এ হামলার মাত্রা দিন দিন  বাড়ছে। এখন হাসপাতাল, স্কুল, মসজিদ কোন জায়গাই বাদ যাচ্ছেনা। ইসরাঈলি হামলায় এ পর্যন্ত ৬ শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। যাদের বেশিরভাগ শিশু ও নারী। গাজার রাস্তায় রাস্তায় রক্তস্রোত, লাশের মিছিল। এ যেন গোটা বিশ্বমানবতার  গালে চপেটাঘাত। মানব সভ্যতার ইতিহাসের নিষ্টুর অধ্যায়। রক্তের যে হোলি খেলায় মেতে উঠেছে বর্বর ইহুদি জারজ রাষ্ট্র ইসরাঈল আর এ যুগের নব্য হিটলার যুদ্বাপরাধী নেতানিয়াহু তাকে কেউ থামতে বলছেনা। বরং জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন থেকে শুরু করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পর্যন্ত সবাই জোর দিয়ে বলছেন, ‘হামাসকে অবশ্যই রকেট হামলা বন্ধ করতে হবে’। আর ইসরাঈলের প্রতি সম্মান দেখিয়ে অনুরোধ করেছেন “সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের ”। অথচ নিরস্ত্র গাজাবাসী একটি নিরাপরাধ বেসামরিক সমাজ। যাদের কোন শক্তিশালী সেনাবাহিনী নেই, নেই কোন অস্ত্রশস্ত্র। তাদের উপর চালানো হচ্ছে সামরিক আক্রমণ, দানবীয় হত্যাযজ্ঞ।pic1
পশ্চিমা কুটনৈতিক মহল আর মূল ধারার গণমাধ্যম বরাবরের মতোই এবারও নগ্নভাবে ইসরাঈলের পক্ষ নিয়ে কথা বলছে। বেসামরিক নাগরিকদের উপর ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করা জাতিসংঘ চার্টার অনুযায়ী আগ্রাসন যা আন্তর্জাতিক আইন ও নীতিবিরুধী।  গাজায় এ পর্যন্ত প্রায় ৬ শতাধিক নিরিহ বেসামরিক লোক ইসরাঈলি সৈন্যদের হামলায় নিহত আর হাজার হাজার আহত হয়েছে। প্রতিদিন প্রায় শতাধিক লোক নিহতের খবর আসছে । কিন্ত হামাসের রকেট হামলায় এ পর্যন্ত কোন ইসরাঈলি নাগরিক হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। স্থল হামলায় এ পর্যন্ত ৪২জন ইসরাঈলি সৈন্য নিহতের খবর হামাস দাবি করলেও ইসরাঈল তাদের ২৭জন সৈন্য নিহতের হওয়ার কথা স্বীকার করেছে।  ইসরাঈলের এমন অসমশক্তি প্রয়োগ আর আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি বৃদ্বাঙ্গুলী প্রদর্শন বিশ্বের বিবেকবান মানুষেরা মেনে নিতে পারছেনা। বিশ্বব্যাপী মানুষেরা এমন বর্বরতার বিরুদ্বে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করছেন। ইসরাঈলের বিরুদ্ধে সামরিক অবরোধ আরোপের জন্য ৬ জন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীসহ বিশ্বের বেশ কয়েক জন বিবেকবান সেলিব্রেটি জাতিসংঘসহ সব দেশের সরকারের প্রতি আহব্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন।
গাজায় যখন ইসরাঈলি গণহত্যা চলছে তখন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যাতে কোনভাবেই নিন্দা প্রস্তাব আনতে না পারে  যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাঈল জুটি সেটি নিশ্চিত করেছে। “প্রত্যকটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের নিজেদের রক্ষা করার অধিকার রয়েছে”। এ ধরনের শব্দ চয়ন, লাইন সংযুক্তিও মেনে নিতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। ফলে একটি বিবৃতিও দিতে পারেনি নিরাপত্তা পরিষদ। নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে বক্তৃতাকালে কাঁদলেন ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর। কিন্তু তিনি বিশ্ব সম্প্রদায়য়ের বিবেক নাড়াতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি মহুর্তে এক একজন ফিলিস্তিনি শিশু বা মা-বাবার জীবন নির্মমভাবে কেড়ে নিচ্ছে বেসামরিক এলাকায় ইসরাঈলি স্থল ও বিমান হামলা। এতে পুরো ফিলিস্তিনি বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তা ও অস্তিত্ত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে, মানবাধিকার লঙ্গন করে, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার সবস্তম্ভ ধ্বংস করে বিশ্ববাসীর সামনেই একটি নিরস্ত্র জনগোগোষ্টীর বিরুদ্ধে যুদ্ব চালাচ্ছে ইসরাঈল। ইসরাঈলি সামরিক বাহিনীর বর্বরতায় বেসামরিক লোকদের প্রাণহানীর দায়ভার জাতিসংঘকেই নিতে হবে’।
ইসরাঈল রাষ্ট্রের কোন সীমা নেই। যেখানে ফিলিস্তিনী বসতি সেখানেই ইসরাঈলি সীমানা। ফিলিস্তিন নামক ভূখন্ড এখন চারদিকে ঘিরে রাখা হয়েছে। ফিলিস্তিনিরা যাতে সমুদ্রে মাছ ধরতে না পারে সে জন্য ইসরাঈলি গানবোট সারাক্ষণ পাহারায় রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়  ইসরাঈলের এ পৈশাচিক বর্বরতায় বরাবরের মতোই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। শান্তির জন্য জনকেরী গেছেন মিশরে, অথচ মিশরের আতœসমর্পনমূলক শান্তি প্রস্তাব হামাস আগেই প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা শর্ত দিয়ে বলেছে, গাজায় ইসরাঈলি হামলা বন্ধ, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে হামাস সরকার গঠন করার পর ২০০৬ সাল থেকে চলা অবরোধ তুলে নেয়া, সমুদ্রের ১২ মাইল সিমানা পর্যন্ত মাছ ধরার নিশ্চয়তা দেয়া, আটক নেতাকর্মীদের মুক্তিদেয়া। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, “ইসরাঈলের অবশ্যই আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে।” কিন্ত হামাসের আগ্রাসন মোকাবেলার কোন অধিকারই যেন নেই। আসলে সবাই জানে পরোক্ষভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে ইসরাঈল ফিলিস্তিনের উপর হামলা চালাচ্ছে। এফ-১৬ বিমানগুলো তো মার্কিন যুদ্ধ বিমান। ইসরাঈলের সামরিক ব্যয়ের বেশীরভাগ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সময়কালে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাঈলকে ৩০ বিলিয়ন ডলার সামরিক সাহায্য দিতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সাম্প্রতিক বছর গুলোতে পশ্চিমা দেশগুলো ইসরাঈলে বিলিয়ন বিলিয়ন ইউরো মূল্যের অস্ত্র রফতানী করেছে।
ফিলিস্তিনিদের বেঁচে থাকার অধিকারকে আজ অস্বীকার করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ প্রচার করছে। তারা ঘুরে ফিরে একই কথা প্রকাশ করছে এবং গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত হামাসকে দায়ী করছে। সংবাদ প্রকাশ ও শব্দ চয়নে ইসরাঈলি আগ্রাসনকে যৌক্তিক প্রমাণ করতে চাইছে। তারা ইসরাঈলের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের পক্ষে সাফাই গাইছে। ইসরাঈলিরা মানবতা ও মনুষত্ববোধকে ধ্বংস করে দিবে কিন্ত ফিলিস্তিনি জনগনের  প্রতিরোধ অধিকার যেন নেই। ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতা, স্বাধীকার দেশপ্রেমের লড়াই করার অধিকার নেই। দেশ রক্ষার সংগ্রাম আর মুক্তিযুদ্ধ করার অধিকার যেন তাদের থাকতে নেই। বাস্তবতা হচ্ছে, দেশপ্রেমের লড়াই করতে করতে ফিলিস্তিনিরা বেঁচে আছে। আর এটাই তাদের আতœরক্ষার একমাত্র পথ। তারা হারিয়েছে স্বজন আর ভূখন্ড। ২০ বছর ধরে আলোচনার নামে যা কিছু হারিয়েছে ফিলিস্তিনিরা অর্জন সবই ঐ আগ্রাসীদের। এই চুক্তি, ঐ চুক্তির নামে ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে ফিলিস্তিনি ভূখন্ড। দখলদারিত্ব বাড়ছে । ৫৩ হাজার ইসরাঈলিদের বাড়ী তৈরী করা হয়েছে  ফিলিস্তিনিদের জবর দখল করা জমিতে। ১৫ হাজার ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। সাড়ে ৪ হাজার বাড়ী ধ্বংস করার নির্দেশ দেয়া হয়েছ্ েফিলিস্তিনিদের। এই জমি দখল করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ১৯৪৮ সাল থেকে যা একদিনের জন্য ও থামেনি।
ইসরাঈলি আগ্রাসন আর এহেন অনাচার অবিচারে পরাশক্তি আর তার মিত্রগুলো যখন তাকে সমর্থন দিচ্ছে তখন আরব ও ইসলামী দুনিয়া তথা মুসলিম উম্মাহ চরম দায়িত্বহীন থাকছে। আরবলীগ কোথায়? কোন উদ্বেগ আর উদ্দ্যোগ নেই তাদের। ও.আই.সি নামের মাঝে এখন সার্থকতা খুজে ফিরে নির্যাতিত বনি আদম। তার কথা এখন কেউ বলেনা। মধ্যপ্রাচ্যের  তেল সমদ্ধ দেশগুলো নাকে তেল দিয়ে সজাগ ঘুমায়। আর বাদশাহী আমীরি কি ভাবে টিকিয়ে রাখা যায় সে চিন্তায় তারা অস্থির, বিভোর। এরা তো সেই তারা যারা মিশরের গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের জন্য তাদের নিরাপত্তারক্ষী প্রভূদের কথায় অর্থ আর রশদ যোগায়। তাদের ভয় বিন লাদেন আর সাদ্দামরা যুগে যুগে আসতে পারে। বিশ্বব্যাপী মুসলিম নির্যাতনে এদের প্রতি মুসলিম দুনিয়ার মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। বহু বিবাহে আসক্ত এক বাদশাহ, আমীর ভোগ বিলাশে মাতোয়ারা। এসব ছাগল রাজা, বাদশাহ, আমীর, উমারাহরা অনেক আগেই নিজেদের রাষ্ট্রক্ষমতা ঠিকিয়ে রাখার জন্য পশ্চিমা দেশ আর পরাশক্তির কাছে নতজানু হয়ে আতœসমর্পণ করে আছে। তথা কথিত বিন লাদেন আর মোল্লা ওমরদের উৎখাতের ভয়ে তাদের রাষ্ট্র ক্ষমতার  নিরাপত্তার ব্যবস্থা দখলদার আগ্রাসী, বর্বর বাহিনীর প্রভূদের হাতে দিয়ে তারা দেখেও না দেখার বান করে সজাগ ঘুমাচ্ছে।   -লেখক , সাধারণ সম্পাদক ,বিশ্বনাথ প্রেসক্লাব।

আরো সংবাদ