AM-ACCOUNTANCY-SERVICES-BBB

দৃঢ়তা, উন্মাদনা ও স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্য নিয়ে আজ মাঠে নামবে আর্জেন্টিনা

বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডট কম :: জুলাই - ৯ - ২০১৪ | ৮: ৪৯ অপরাহ্ণ

Argentina_team_inner_205629477

বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডেস্ক : দৃঢ়তা, নতুন প্রাণের উন্মাদনা ও স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে নিয়ে ম্যারাডোনার দেশ আর্জেন্টিনা আজ মাঠে নামছে। আর্জেন্টিনার সুপারস্টার লায়নেল মেসি বলেছিলেন, তাদের লক্ষ্য ছিল সেমিফাইনাল। সেই স্বপ্ন তাদের পূরণ হয়েছে। এবার আর একটু সামনে যাওয়া যায় কি না সেই চেষ্টা করবে। ইউরোপের অন্যতম ফুটবল পরাশক্তি হিসেবে পরিচিত নেদারল্যান্ডস তাদের প্রতিপক্ষ। একে একে ২৪ বছর কেটে গেছে। আর্জেন্টিনার সেমিফাইনালে ওঠা সম্ভব হয়নি। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে শিরোপা এবং ১৯৯০ সালে রানার্স আপ জার্মানির কাছে পরাজিত হয়ে। সে সময় ছিলেন ম্যারাডোনা। এবার আছেন লায়নেল মেসি। আর্জেন্টিনার প্রতিটি সমর্থক প্রত্যাশা করছেন সেমিই তাদের বিশ্বকাপ এনে দেবে। নেদারল্যান্ডস তাদের সাথে পেরে উঠবে না। কারণ এবার বিশ্বকাপ তো হচ্ছে ব্রাজিলে। একে তো তাদের প্রতিবেশী। তার ওপর চিরচেনা পরিবেশ। আর্জেন্টিনা টানা পাঁচ ম্যাচ জয়ী হয়ে চলে এসেছে শেষ চারে। সময় যতই গড়িয়েছে তারা ততই কঠিন পরীক্ষার সামনে চলে এসেছে। শেষ ষোলোতে সুইজারল্যান্ড তাদের কম ভোগায়নি। অতিরিক্ত সময়ের শেষ মিনিটে ডি মারিয়া গোল করে আর্জেন্টিনাকে টেনে তোলেন কোয়ার্টার ফাইনালে। এরপর ড্রিম জেনারেশনের বেলজিয়াম। হিগুয়েন যে গোলটি করেন তাই শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেয়। এই ম্যাচে আর্জেন্টিনা ছিল অনেকটাই খোলসবন্দী। তারা রক্ষণাত্মক খেলা খেলেছে। বিদ্যুৎ ঝোলকের মতো তারা আক্রমণ করেছে। এমনকি মেসি বেলজীয় গোলকিপারকে একা পেলেও ব্যর্থ হন। তবে সেই ম্যাচে যত ঘটনাই ঘটুক না কেন আর্জেন্টিনাই বিজয়ের হাসি হাসে।
আর্জেন্টিনার বিপক্ষে সুইজারল্যান্ড এবং বেলজিয়ামকে কখনো আত্মবিশ্বাসী বলে মনে হয়নি। তারা আক্রমণ করেছে। কিন্তু সেগুলো কখনো পূর্ণতা পায়নি। তবে নেদারল্যান্ডস সে রকম নয়। তারা মাঠে দাপট দেখিয়েছে। কোচ বর্ষীয়ান ভ্যান গাল তার দলকে সেই টোটাল ফুটবলের জগতে নিয়ে গেছেন। তাদের গতিময় খেলা ইতোমধ্যে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এমনকি ভ্যান পার্সি এবং আর্জেন রোবেন তো রয়েছেন দুর্দান্ত ফর্মে। তবে তাদের পরাজিত করা সহজ না হলেও কঠিন নয়। বিষয়টি ভালোই জানা রয়েছে আর্জেন্টাইন ফুটবলারদের।
শত সহস্র আনন্দের মধ্যেও একটি বেদনার বারতা রয়েছে আর্জেন্টিনার সামনে। তা হলো মেসি অ্যান্ড কোম্পানির অন্যতম সেরা ফুটবলার ডি মারিয়া সেমিফাইনালে খেলতে পারছেন না। মেসির সাহায্যকারী হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেছিলেন ডি মারিয়া। তিনি দলে না থাকাতে বেশ সমস্যায় পড়ে যাবে আর্জেন্টিনা। কারণ তার বদলীয় হিসাবে নামা পেরেজ তেমনভাবে আকৃষ্ট করতে পারেননি সমর্থকদের। দলের স্ট্রাইকার আগুয়েরো অবশ্য ফিট হয়ে উঠেছেন এবং তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে খেলার জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া বেলজিয়ামের সাথে বিজয়সূচক গোলদাতা হিগুয়েন বলেছেন, ডি মারিয়া হচ্ছেন দলের অন্যতম সেরা ফুটবলার। আমরা আশা করব তিনি যত দ্রুত সম্ভব সুস্থ হয়ে মাঠে ফিরে আসবেন। কোচ আলেসান্দ্রো সাবেলা বলেছেন, ডি মারিয়া আমাদের ভাইটাল ফুটবলার। তবে তিনি কিছুটা দুঃশ্চিন্তামুক্ত হয়েছেন কারণ বেলজিয়ামের বিপক্ষে তার ডিফেন্স খারাপ খেলেনি। এক ম্যাচের বহিষ্কারাদেশ কাটিয়ে দলের ন্যাচারাল ব্যাক রোজো দলে ফিরে এসেছেন। ডেমিচিলিস ছিলেন বেশ উজ্জ্বল। এ ছাড়া জাবালেতা নিজের মতো করেই খেলেছেন। মাঝ মাঠ নিয়ে সাবেলার চিন্তার পরিধি কিছুটা বিস্তৃত। মাশকেরানো কিংবা গাগের তেমন উজ্জ্বল হননি গত পাঁচ ম্যাচে। তারা নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করলে আর্জেন্টিনা তাদের সেরাটা প্রদর্শন করে ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে নেবে।
সেমিফাইনালে মেসিকেরই জ্বলে উঠতে হবে। সুইজারল্যান্ড কিংবা বেলজিয়ামের বিপক্ষে তিনি গোল করেননি ঠিকই। তবে তার কাছে বল যাওয়া মানে আর্জেন্টিনা শিবিরে আশা জেগে ওঠে। তিনি দলের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলেন প্রতি মুহূর্তেই।
নেদারল্যান্ডস দুর্দান্ত খেলছে। যদিও কোয়াটার ফাইনালে তারা কোস্টারিকার শক্ত বাধার সম্মুখীন হয়েছিল এবং পেনাল্টি শুট আউটে জয়ী হয়ে তারা উঠে আসে শেষ চারে। নেদাল্যান্ডস এবার অবশ্য স্বপ্নের মতো তাদের বিশ্বকাপ মিশন শুরু করে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে তারা ৫-১ গোলে উড়িয়ে দেয়। দলের প্রধান থিংক ট্যাংক হচ্ছে কোচ ভ্যান গাল। তিনি মাঠের বাইরে বসে যেসব সিদ্ধান্ত নেন তা নেদারল্যান্ডসকে দুর্দান্ত খেলা উপহার দিতে উদ্বুদ্ধ করে। তিনি দলের প্রাণভোমরা। রোবেন বেশ দ্রুত গতিতে খেলতে পছন্দ করেন। এমনকি গোল করার ক্ষমতার জন্য রোবেন যে কারো কাছে ঈর্ষার পাত্র। দলটি মেক্সিকোর বিপক্ষে যে খেলা উপহার দিয়েছে তাতে প্রমাণিত হয়েছে যে দক্ষিণ আমেরিকার মাটিতেও তারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। ভ্যান পার্সিও আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। নেদারল্যান্ডস, স্পেন, চিলি, মেক্সিকো এবং কোস্টারিকার সাথে সমান তালে লড়াই করেছে। তাদের আক্রমণভাগ খুবই শক্তিশালী। ফলে আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগকে এই ম্যাচে বড় ধরনের পরীক্ষার মোকাবেলা করতে হবে। অন্য দিকে নেদারল্যান্ডসের রক্ষণভাগ মেসিকে টার্গেট করবে। তারা জানে যে সেমিকে আটকে রাখলে আর্জেন্টিনার আক্রমণগুলো হাওয়ায় উড়ে যাবে। তবে পেনাল্টি শুট আউট হলে নেদারল্যান্ডসই এগিয়ে থাকবে।
আর্জেন্টিনা ১৯৯০ সালের পর এই প্রথম সেমিফাইনালে উঠেছে। এবং জার্মানির সাথে পরাজিত হয়ে রানার্স আপ হয় তারা। বিশ্বকাপে এই দুইটি দল চারবার মুখোমুখি হয়েছে। নেদারল্যান্ডস দুইবার এবং আর্জেন্টিনা একবার জয়ী হয়েছে। আর্জেন্টিনা ১৯৭৮ সালে বিশ্বকাপ জয় করে নেদারল্যান্ডসকে পরাজিত করে। নেদারল্যান্ডসকে বিশ্বকাপে ম্যাজিক দল বলা হয়ে থাকে। কারণ তারা এর আগে তিনবার ফাইনালে খেললেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। এমনকি গতবার ফাইনালে তারা স্পেনের কাছে পরাজিত হয়। তাই হয়তো স্পেনকে পেয়ে মধুর প্রতিশোধ নিয়ে নেয় য়ুহান ক্রুয়েফের দল।
এই ম্যাচ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী কম লোক করেনি। কেউ কেউ বলেছেন, এই খেলা ১-১ ড্র হবে এবং পেনাল্টি শুট আউটে ৫-৩ গোলে জয়ী হবে নেদারল্যান্ডস। আবার কেউ কেউ বলেছেন, আর্জেন্টিনা ১-০ গোলে হারিয়ে দেবে নেদারল্যান্ডসকে।

আরো সংবাদ