AM-ACCOUNTANCY-SERVICES-BBB

চার দশকে বাংলাদেশ থেকে ২ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে

বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডট কম :: জুন - ২৫ - ২০১৪ | ৭: ০৪ পূর্বাহ্ণ

29477_taka

বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ : গত চার দশকে বাংলাদেশ থেকে ২ লাখ কোটি টাকার বেশি অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে,    পৃষ্ঠা ৭ কলাম ১
উন্নয়নশীল আট দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হওয়া দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। প্রথম স্থানে রয়েছে আইভরি কোস্ট। জরিপের আওতায় থাকা অন্য দেশগুলো হচ্ছে নেপাল, বলিভিয়া, গিনি, সিয়েরালিওন, তানজানিয়া ও জাম্বিয়া। ইউএনডিপির এ গবেষণায় দেখা গেছে, পাচারকৃত অর্থের বেশিরভাগই আমদানিতে মূল্য দেখিয়ে ও এজেন্টের কাছে অর্থ পাচারের মাধ্যমে হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পাচার হওয়া এই টাকার পরিমাণ ২০১০ সালের মোট জিডিপির ৩০ শতাংশের বেশি। যদিও কারা অর্থ পাচারে যুক্ত তা উল্লেখ করা হয়নি গবেষণা প্রতিবেদনে। তবে বিনিয়োগের পরিবেশ না থাকায় অর্থ পাচারের মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের বর্তমান মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পরিমাণ ১২ লাখ কোটি টাকা। পাচার হয়ে যাওয়া বিপুল পরিমাণের অর্থ দেশে থাকলে জিডিপি’র আকার হতো ১৪ লাখ কোটি টাকা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাথাপিছু পাচার হয়েছে ২০৫ ডলার। বর্তমান মাথাপিছু আয় ১ হাজার ১৯০ ডলার। এই হিসেবে অর্থ পাচার না হলে মাথাপিছু আয় দাঁড়াতো ১ হাজার ৩৯৫ ডলার। পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ বর্তমান (২০১৪) জিডিপি’র ১৮ শতাংশ। এই অর্থ দেশে থাকলে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতো প্রায় ৭ দশমিক ২২ শতাংশ। এই বছর সম্ভাব্য জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ১২ শতাংশ। বর্তমান বিনিময় হারে, গত চারদশকে (১৯৭০-২০১০) পাচার হয়েছে ২ লাখ ৯ হাজার  কোটি টাকা। আর বাংলাদেশে বর্তমান বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ১ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ, বিদেশি ঋণের চেয়ে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ বেশি।
ইউএনডিপি’র প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং পাচারকৃত দেশে বেশি মুনাফার সুযোগ থাকার কারণে অর্থ পাচার হয়েছে। সরকারি সম্পত্তি তছরুপ, চুরি, দুর্নীতি ও বাণিজ্যে মিথ্যা মূল্য দেখানোর মাধ্যমে অর্জিত অর্থ পাচার হচ্ছে। এসব অর্থ কখনোই দেশে ফিরে আসে না বলেও গবেষণায় বলা হয়ছে।
অর্থ পাচারের মূল উপায় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যালেন্স অব পেমেন্টের (বাণিজ্য ভারসাম্য) দুর্বলতা, রপ্তানিতে কম মূল্য দেখানো, আমদানিতে বেশি মূল্য দেখানো, অবৈধ চ্যানেলে রেমিটেন্স আসা। বাণিজ্যের পরিসংখ্যান সংগ্রহে দুর্বলতা আছে যা ব্যালেন্স অব পেমেন্টের  উপাত্তকে প্রভাবিত করে। ৫৮ শতাংশ পাচার আমদানি রপ্তানিতে অবমূল্যয়ন ও অতি মূল্যয়নের মাধ্যমে হয় বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
ইউএনডিপি প্রকাশিত প্রতিবেদনে অর্থ পাচারের বেশকিছু কারণও উল্লেখ করা হয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে উৎসাহী নন।  দেখা গেছে, বাংলাদেশ গত এক দশক ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। ২০০৮ সালে এটা ১০ শতাংশের ওপরে চলে গিয়েছিল। বর্তমানে তা ৭ শতাংশের ওপরে। সাধারণত, বিনিয়োগকারীরা ৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতিতে স্বস্তিবোধ করেন। উচ্চ বাজেট ঘাটতি ও উচ্চ করকেও দায়ী করা হয়েছে পাচারের জন্য। বিনিয়োগে বেশি লাভ না হওয়াকেও কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে ব্যক্তি বিনিয়োগ করলে অন্য অনেক দেশের তুলনায় কম লাভ করতে পারে। এজন্য বেশি লাভের আশায় অর্থ পাচার করে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
রাজনৈতিক এবং সুশাসনের পরিবেশকেও বড়ভাবে দায়ী করা হয়েছে অর্থ পাচারের জন্য। প্রায় সময়েই রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিনিয়োগ জটিলতা বাংলাদেশে বিদ্যমান থাকায় অর্থ পাচার হয়ে যায়। সামপ্রতিক সময়ে অর্থপাচার কয়েকগুণ বেড়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুইস ব্যাংকের সহযোগিতা চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠি
সুইস ব্যাংকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) পক্ষ থেকে গতকাল অর্থপাচার সংক্রান্ত একটি চিঠি দেয়া হয় বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র নিশ্চিত করেছে। তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর এ নিয়ে দ্বিতীয়বার চিঠি পেলো সুইজারল্যান্ড। চিঠিতে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের এমওইউ (সমঝোতা স্মারক) সইয়ের আবেদন করা হয়। যা বাংলাদেশীদের গচ্ছিত অর্থ প্রকৃতপক্ষে দেশ থেকে পাচার হওয়া কিংবা কোন ধরনের অবৈধতার আলামত মিলে কিনা তা খতিয়ে দেখার প্রাথমিক ধাপ বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান মানবজমিনকে জানান, বাংলাদেশ এগমন্ট গ্রুপের সদস্য হলেও অন্য দেশের ব্যাংক থেকে তথ্য পেতে কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। সুইস সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের কোন এমওইউ (সমঝোতা স্মারক) সই নেই। তাদের কাছ থেকে তথ্য পেতে হলে আগে এমওইউ স্বাক্ষর করতে হবে। সে কারণে এমওইউ সই চেয়ে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। এর আগেও একটি চিঠি দেয়া হয়। ওই চিঠিতে কোন সাড়া না পেয়ে আবারও চিঠি দেয়া হয়। উল্লেখ্য, এগমন্ট গ্রুপ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে গঠিত বিভিন্ন দেশের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটগুলোর একটি ফোরাম। উল্লেখ্য, সমপ্রতি সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) কর্তৃক প্রকাশিত ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড ২০১৩’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০১৩ সাল শেষে সুইস ব্যাংকগুলোয় বাংলাদেশীদের অন্তত ৩৭ কোটি ১৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ গচ্ছিত রয়েছে, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ৩১৬২ কোটি ৩৭ লাখ টাকার সমান। এই অর্থ ২০১২ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের গচ্ছিত অর্থের চেয়ে ৬২% বেশি। ওই বছর সুইস ব্যাংকগুলোয় বাংলাদেশী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অন্তত ২২ কোটি ৮৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ জমা ছিল, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ১৯০৮ কোটি টাকার সমান।

সূত্র : মানবজমিন

আরো সংবাদ