AM-ACCOUNTANCY-SERVICES-BBB

এক বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ বিশ্বনাথের আ ন ম শফিকুল হক

বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডট কম :: জুন - ১২ - ২০১৯ | ২: ৩৯ অপরাহ্ণ

নূর উদ্দিন :: সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের মৌলভীরগাঁও গ্রামের কৃতি সন্তান বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ বিশ্বনাথের আ ন ম শফিকুল হক। পবিত্র ঈদ-উল ফিতর-২০১৯ উপলক্ষে বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডটকম কর্তৃক ষষ্ঠ বারের মতো প্রকাশিত ‘উৎসব’ ম‌্যাগাজিনে বিশ্বনাথের কৃতিসন্তান আ ন ম শফিকুল হকের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। উক্ত প্রতিবেদনটি নিউজ পোর্টালের সম্মানিত পাঠকদের জন‌্য প্রকাশ করা হলো।

মৌলভী তবারক আলী ও মোছাঃ খয়েরুন নেছা দম্পতির সন্তান আ ন ম শফিকুল হক ১৯৪৮ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহন করেন। ১৯৬৫ সালে সিলেট এমসি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পরই সিলেট জেলা ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে রাজনীতিতে পা রাখেন আবু নসর মোহাম্মদ শফিকুল হক। লেখাপড়া-রাজনীতি দুটোই চল ছিলো সমানতালে। ছয় দফা আন্দোলনের সময়ে তিনিও ছিলেন রাজনীতির মাঠে। ছিলেন স্বাধিকারের সকল আন্দোলনেই। স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর হঠাৎ পরিবারে অসচ্ছলতা দেখা দিলে মাঝপথে পড়ালেখায় বিরতি ঘটে সংসারের চাকা গতিশীল রাখতে বাবার মতোই শিক্ষকতার মাধ্যমে তিনি কর্মজীবনের সূত্রপাত ঘটান। সিঙ্গেরকাছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মৌলভীগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনি শিক্ষকতা করেন। পাশাপাশি রাজনীতির মাঠেও সরব ছিলেন তিনি। তখন তাঁর বাবা মৌলভী তবারক আলী ছিলেন পার্শ্ববর্তি দশপাইকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।

আ ন ম শফিকুল হক ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানে সক্রিয় ‍ভূমিকা রাখেন। ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে জনমত নিজের দলের পক্ষে সংগ্রহের জন্য তিনি ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক হিসেবে কাজ করেন। ৫নং সেক্টরে থেকে সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালের কালরাতের পরবর্তী সময়ে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। তবে নির্যাতন করে ছেড়ে দেয়। ১৯৭৭ সালে সিলেট শহরে ঠিকানা গাড়েন আ ন ম শফিকুল হক। ১৯৭৭ সালে নতুন করে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন হলে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটিতে সদস্য হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অভিষিক্ত হন আ ন ম শফিকুল হক। সিলেটে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যাঁরা নিবেদিতপ্রাণ বলে পরিচিত ছিলেন, বিভিন্ন সময়ে দলের দুর্দিনে যাঁরা ত্যাগী নেতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন তাদের মধ্যে আ ন ম শফিকুল হক অন্যতম।

এরই ফল হিসেবে ১৯৮৬ সালে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান আ ন ম শফিক। রাজনীতির রোষানলে পড়ে ১৯৮৭ সালে। তখন এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করার কারণে গণতন্ত্রের স্বার্থে দীর্ঘ ৫ মাস তিনি কারাবরণ করেন। তাকে ওই সময় অনেক লোভনীয় পদের প্রলোভন দেখানো হলেও তিনি আদর্শচ্যুত হন নি। ৯১ ও ৯৭ সালের সম্মেলনেও সাধারণ সম্পাদকের পদে বহাল থাকেন তিনি। ১৬ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করায় ২০০২ সালের সম্মেলনে তাকে দেওয়া হয় সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব। ১০ বছর সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকার পর পরবর্তীতে তাঁকে আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়। তিনি ২০০০ সালে জাতিসংঘ মিলেনিয়াম শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা ও সাধারণ পরিষদে যোগদান করেন। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের উপরোক্ত দুই গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকাকালীন সময়ে তার দল ক্ষমতায় থাকায় সিলেটের উন্নয়নের ব্যাপারে তিনি ছিলেন খুবই আন্তরিক ও নিবেদিতপ্রান ব্যক্তি। বিভিন্ন স্কুুল-কলেজ, মাদ্রাসা, সড়ক ও ব্রীজ-কালভার্ট নির্মাণে এবং এর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখেন। রাজনীতিচর্চার পাশাপাশি তিনি সামাজিক বিভিন্ন কর্মকান্ডে সব সময় নিজেকে সম্পৃক্ত রাখেন। সকল প্রতিক‚লতার মধ্যেও আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে এক পাও পিছু হটেননি প্রবীন এই নেতা। সকল দুঃসময়ে সিলেটের আওয়ামী লীগের হাল শক্ত হাতে ধরে ছিলেন বিচক্ষণ এই রাজনীতিবিদ।

সিলেটের পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে যাদের সুনাম রয়েছে, তিনি তাদের অন্যতম একজন। একজন সৎ, বিনয়ী ও সদালাপী রাজনীতিবিদ হিসেবে সব মহলে তার একটি আলাদা ইমেজ রয়েছে। সিলেটের রাজনীতির প্রবাদ পুরুষ আ ন ম শফিকুল হক লৌকিক, শাস্ত্রিক, সামাজিক, নৈতিক, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে বিশাল জ্ঞান রাখেন। রাজনীতিতে তিনি যেমন বিজ্ঞ, ঠিক তেনমি ভাবে লেখা-লেখিতে অভিজ্ঞ। রাজনীতিতে প্রবেশের পূর্বে একসময় তিনি সাংবাদিকতাও করেছেন। ষাটের দশকে সাপ্তাহিক বাংলার বাণী পত্রিকায়, ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে সাপ্তাহিক খবর ও দৈনিক খবরে সিলেট বিভাগীয় প্রতিনিধির দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে কাজ করেছেন। সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছে তিনি। এছাড়া তিনি ছিলেন আবাহনী ক্রীড়া চক্র সিলেটের অন্যতম প্রতিষ্টাতা।
আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ নেতা দলের প্রভাব কাটিয়ে অট্টালিকা বাড়ি-ঘর করেনি। নিজের সততায় অটল ছিলেন তিনি। তাই এখনো তিনি পরিবারকে নিয়ে সিলেট শহরের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন। বর্তমানে তাঁর দুটি কিডনী নষ্ঠ হয়ে গেছে। ফলে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যে পরিবারের লোকজন তাঁর চিকিৎসায় প্রায় কোটি টাকা খরচ করেছেন। দাম্পত্য জীবনে আ.ন.ম শফিকু হক তিন কন্যা ও দুই পুত্র সন্তানের জনক। রয়েছেন বেশ কয়েকজন নাতি-নাতনীও।

আরো সংবাদ