AM-ACCOUNTANCY-SERVICES-BBB

স্থানীয় উন্নয়নে এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান’র কাছে বিশ্বনাথবাসীর প্রত্যাশা

বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডট কম :: জুন - ১১ - ২০১৯ | ১১: ৪৮ পূর্বাহ্ণ

তজম্মুল আলী রাজু :: বাংলাদেশের রাজনীতির এক আলোচিত জনপদ বিশ্বনাথ। বিগত দুই দশকে বিশ্বনাথের অনেক রাজনৈতিক ঘটনাবলি বিশ্ব দরবারে প্রবাসী অধ্যুষিত এই অঞ্চলকে ব্যাপকভাবে পরিচিতি দিয়েছে। এই আলোচিত জনপদে বিশেষ করে গত এক দশক ধরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে কাংখিত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এ এলাকার মানুষ। এনিয়ে মানুষের মনে ক্ষোভের অন্ত নেই। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিশ্বনাথের প্রথম অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিশ্বনাথ নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম কর্তৃক প্রকাশিত বিশেষ ম্যাগাজিন ‘উৎসব’ -এ এমপি ও উপজেলা চেয়ারম‌্যানকে নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন করা হয়। উক্ত প্রতিবেদনটি নিউজ পোর্টালের সম্মানিত পাঠকদের জন‌্য প্রকাশ করা হলো।

প্রবাসী অধ্যুষিত বিশ্বনাথ উপজেলায় স্বাধীনতার পর থেকে উন্নয়নের সূচনা হলেও বিগত ১০ বছরে কেবলমাত্র স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে প্রত্যাশিত অনেক উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়নি। ২০০৮ সালে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রভাবশালী নেতা সাবেক এমপি এম. ইলিয়াস আলীকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগের প্রবাসী শফিকুর রহমান চৌধুরী এমপি হয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে দারুণ এক চমক দেখান। উক্ত সংসদ নির্বাচনের পর পরই অনুষ্ঠিত ৩য় বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী পংকি খানকে হারিয়ে ২য় বারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের বিদ্রেুাহী প্রার্থী মুহিবুর রহমান। শফিকুর রহমান চৌধুরী ও মুহিবুর রহমান দুজনেই আওয়ামী লীগ ঘরানার নেতা হলেও তাদের মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ চরম আকার ধারণ করেছিল। যার কারণে তারা ক্ষমতায় থাকা নিজ দল আওয়ামী লীগের হয়েও দু’জনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ না করায় কাংখিত অনেক উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হন বিশ্বনাথবাসী। বিশ্বনাথের স্থানীয় আওয়ামী লীগ তখন দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। দুই গ্রুপই একাধিকবার রাজপথে মুখোমুখি অবস্থানে চলে আসে। শুধু তাই নয়, উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমানের সাথে ভাইস চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানদের মুখোমুখি অবস্থানে দেখা যায়। তথাপি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও মুহিবুর রহমান নিজ নিজ অবস্থান থেকে ক্ষমতা অনুযায়ী এলাকার উন্নয়নে প্রচেষ্ঠা চালান।

পরবর্তীতে ২০১৪ সালে ১০ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমানকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া। ঐ সংসদ নির্বাচনের পর অনুষ্ঠিত ৪র্থ বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীগ সমর্থিত প্রার্থী পংকি খানকে হারিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বিএনপির সুহেল আহমদ চৌধুরী। আর ক্ষমতায় তখন আওয়ামী লীগ। নিজেদের মধ্যে প্রকাশ্যে কোন বিরোধ না থাকলেও স্থানীয় উন্নয়নে দু’জনকে ঐক্যবদ্ধভাবে কোন প্রচেষ্টা চালাতে দেখেনি এই এলাকার জনগণ। এছাড়া একই দলের (বিএনপি) হয়েও উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের প্রকাশ্যে দ্বন্দ ছিল চরম পর্যায়ে।

গত ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ জতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফন্ট্র এর সমর্থন নিয়ে রানিং এমপি জাতীয় পার্টির ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়াকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন গণফোরামের মোকাব্বির খান। সংসদ নির্বাচনের পর গত ১৮ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় ৫ম বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে রানিং চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরীকে হারিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এস এম নুনু মিয়া। এক সময় বর্তমান এমপি মোকাব্বির খান ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা। শপথের পর থেকে এপর্যন্ত তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তব্যে বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বাস্তবায়নে ও দল মতের উর্ধ্বে উঠে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এখন পর্যন্ত কোন সরকারি বা সামাজিক অনুষ্টানে নব-নির্বাচিত এমপি এবং উপজেলা চেয়ারম্যানকে একত্রে দেখা যায়নি। আদৌ তাদের মধ্যে দেখা, সাক্ষাৎ কিংবা কথা হবে কি হবে না তা নিয়ে মানুষের মনে চলছে নানান জল্পনা কল্পনা! নিজ নিজ অবস্থান থেকে তারা নিজেরা এগিয়ে আসতে চাইলেও পারবেন কি রাজনৈতিক প্রাচীর ভেদ করে বেরিয়ে আসতে? সময়েই বলে দিবে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কে কতটুকু চেষ্ঠা চালিয়েছেন।
বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতায় আছে দেশের প্রাচীণতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম নুনু মিয়া এবং উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরাও হচ্ছেন আওয়ামী লীগের। আর এমপি মোকাব্বির খানও ছিলেন এক সময়ে আওয়ামী ঘরনার রাজনীতিবিদ। স্বাভাবিক কারণে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের চাইতে তাদের মধ্যে পারস্পরিক কাছে আসা অনেকটা সহজ। এ কারণে তাদের কাছে বিশ্বনাথবাসীর প্রত্যাশাও ব্যাপক। কিন্ত বিশ্বনাথের রাজনৈতিক অতীত ইতিহাসের ন্যায় স্থানীয় উন্নয়নে এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্ঠা না চালালে একদিন তাদেরকে জনতার আদালতে দাঁড়াতে হবে।

আরো সংবাদ