AM-ACCOUNTANCY-SERVICES-BBB

সিলেট-২ আসনের ইতিহাসে এমপি ছিলেন যারা…

বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডট কম :: জুন - ১১ - ২০১৯ | ১২: ১১ পূর্বাহ্ণ

এমদাদুর রহমান মিলাদ :: পূন্যভূমি সিলেটের এক আলোচিত নির্বাচনী সংসদীয় ২৩০ নং আসন সিলেট-২। এর মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনাবলির কারণে বিগত সময়ে বিশ্বনাথের রাজনৈতিক মাঠ উত্তপ্ত থাকে বলে এই জনপদের প্রতি দেশ বিদেশের মিডিয়ার স্পট লাইট সব সময় দৃষ্টি পড়ে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ৪৭ বছরে পদার্পণ করেছে। ঐতিহ্যবাহী এই নির্বাচনী আসনে যেমন নির্বাচিত হয়েছেন অনেক রথি মহারথি, ঠিক তেমনি এখানে নির্বাচিত হয়েছেন অনেক অপরিচিত ও অখ্যাত ব্যক্তি। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই হয়তো জানেন না এই নির্বাচনী আসনে বিগত কারা এমপি ছিলেন। ভবিষ্যতের প্রয়োজনে ঐতিহ্যবাহী এই নির্বাচনী আসনে বিগত ১০টি সংসদে বিশ্বনাথ থেকে কতজন ও বালাগঞ্জ থেকে কতজন এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচিত নিয়ে পবিত্র ঈদ-উল ফিতর-২০১৯ উপলক্ষে বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডটকম কর্তৃক ষষ্ঠ বারের মতো প্রকাশিত ‘উৎসব’ ম‌্যাগাজিনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। উক্ত প্রতিবেদনটি নিউজ পোর্টালের সম্মানিত পাঠকদের জন‌্য প্রকাশ করা হলো। এখানে প্রসঙ্গত ১০টি সংসদ নির্বাচনে বিশ্বনাথের ৫জন ৬বার এবং বালাগঞ্জ-ওসমানীনগরের ৩জন ৪বার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তার মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে সর্বোচ্চ ৪বার এবং বিএনপি ও জাতীয় পার্টি থেকে ৩বার করে এমপি নির্বাচিত হন।

এডভোকেট নুরুল ইসলাম খান : ১৯৭৩ সালে ১ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নিয়ে বিশ্বনাথ-দক্ষিন সুরমা নির্বাচনী আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এডভোকেট নুরুল ইসলাম খান। সেই জাতীয় সংসদে সর্বকনিষ্ট সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার গৌরব অর্জন করেন মুক্তিযোদ্ধের অন্যতম এই সংগঠক।
বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের শ্রীধরপুর গ্রামে ১৯৪৬ সালের ১৬ই জানুয়ারী জন্মগ্রহন করেন বিশ্বনাথের ইতিহাসের প্রথম বিশ্বনাথী সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম খান। রামসুন্দর অগ্রগামী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র নুরুল ইসলাম খান এর পিতার নাম মুহাম্মদ ফিরুজ খান ও মাতার নাম নুরুন নেছা খানম। বাবা ছিলেন ব্রিটিশ সিটিজেন। ইতিহাসের বরপুত্র নুরুল ইসলাম খান মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক মরহুম জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন ও তাঁর হাতে গড়া সংগঠন জাতীয় জনতা পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান। তিনি বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি ছিলেন। আইনপেশায় নিয়োজিত নুরুল ইসলাম খান ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত এবং ৪ সন্তানের জনক। তার ১ম কন্যা চিকিৎসা পেশায় এবং ১ম পুত্র আইন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন।

দেওয়ান তৈমুর রাজা চৌধুরী : ১৯৭৯ সালে জাতীয় পরিষদ (২য় সংসদ নির্বাচন) নির্বাচনে দেওয়ান তৈমুর রাজা চৌধুরী বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিশ্বনাথ-দক্ষিন সুরমা নির্বাচনী আসনে প্রথমবারের মত জাতীয় পরিষদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন। ঐ বছর তিনি রেলওয়ে, সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের রামপাশা গ্রামে ১৯১৭ সালে মরমী কবি হাছন রাজার পরিবারে জন্মগ্রহন করেন বিশ্বনাথের প্রথম মন্ত্রী দেওয়ান তৈমুর রাজা চৌধুরী। তাঁর পিতার নাম দেওয়ান একলিমুর রাজা চৌধুরীর ও মাতার মেহেরজানবানু চৌধুরী। দেওয়ান তৈমুর রাজা চৌধুরী ছিলেন কাব্যবিশারদ, আসাম পাদেশিক পরিষদ সদস্য ও গীতিকার। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ৫ সন্তানের জনক ছিলেন। তার প্রথম পুত্র দেওয়ান শমসের রাজা চৌধুরী ১৯৯০ সালে প্রথম বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সিলেট-২ আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্য ১৯৯৭ সালের ১৪ই ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।

বীর প্রতীক ইনামুল হক চৌধুরী : ১৯৮৫ সালে ৩য় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সিলেট-২ (বালাগঞ্জ-বিশ্বনাথ) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ইনামুল হক চৌধুরী (বীর প্রতীক)। তাঁর পৈতৃক আদি নিবাস বালাগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর গ্রামে তিনি ১৯৪৮ সালে জন্মগ্রহন করেন। বসবাস করতেন সিলেট শহরের চৌহাট্টায় পৈত্রিক বাড়িতে। তাঁর পিতার নাম বশিরুল হক চৌধুরী ও মাতার নাম সাবেরা খানম চৌধুরী।
ইনামুল হক চৌধুরীর শিক্ষা জীবন শুরু সিলেটের সরকারী পাইলট স্কুল থেকে। সেখান থেকে মেট্রিক পাশ করার পর তিনি ভর্তি হন সিলেট এমসি কলেজে। পরে স্নাতকত্তোর পড়ার জন্য তিনি ভর্তি হন মদনমোহন কলেজে। সেখানে তার ছাত্ররাজনীতি পূর্ণাঙ্গতা পায়। তিনি মদনমোহন কলেজে (১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত) পর পর দুইবার ভিপি নির্বাচিত হন। ৬৯’র গণ-অভ্যুত্থানে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
ইনামুল হক চৌধুরী ১৯৭১ সালে ছিলেন টগবগে যুবক। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন প্রতিরোধ যুদ্ধে, ভারতে গিয়ে যোগ দেন মুক্তিবাহিনীতে। পাঁচ নম্বর সেক্টরের বালাট সাব-সেক্টর এলাকায় যুদ্ধ করেন। মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য ইনামুল হক চৌধুরীকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী ইনামুল হক চৌধুরী মহান মুক্তিযুদ্ধ সহ সকল আন্দোলন সংগ্রামে সিলেট বাসির খুব কাছের মানুষ ছিলেন। ১৯৮৫ সালে সিলেট-২ বালাগঞ্জ ও বিশ্বনাথ (বর্তমান বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর) আসনে বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ, সৎ ও জনপ্রিয় নেতা। রাজনীতি মানেই তাঁর কাছে ছিল জনগনের সেবা। জীবনের শেষের দিকে তিনি সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সিলেট বিভাগীয় চেয়ারপারসন ছিলেন। বিবাহিত জীবনে তিনি চার ছেলে ও দুই মেয়ে সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম মারিয়াম চৌধুরী। জটিল রোগের জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ২০১১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন ইনামুল হক চৌধুরী (বীর প্রতীক)।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মকসুদ ইবনে আজিজ লামা : ১৯৮৮ সালে ৪র্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ১৯৯১ সালে ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে সিলেট-২ (বালাগঞ্জ-বিশ্বনাথ) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বীর মুক্তিযোদ্ধা মকসুদ ইবনে আজিজ লামা। তাঁর পৈতৃক আদি নিবাস ওসমানীনগর উপজেলার উছমানপুর ইউনিয়নের কাইমদাড়া গ্রামে ১৯৫০ সালের ৪মার্চ জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম আজিজুর রহমান ও মাতার নাম লুৎফুন নেছা খাতুন।
মকসুদ ইবনে আজিজ লামা ১৯৬৬ সালে সিলেটের এইডেড হাই স্কুল থেকে এস.এস.সি, ১৯৬৮ সালে সিলেট মদন মোহন কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাশ করে ভর্তি হন এমসি কলেজে। সেখান থেকে ১৯৭০ সালে স্নাতক ও ১৯৭২ সালে স্নাতকত্তোর ডিগ্রী অর্জন করেন।
১৯৭১ সালে তিনি ছিলেন টগবগে যুবক। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন প্রতিরোধ যুদ্ধে, চার নম্বর সেক্টর এলাকায় যুদ্ধ করেন। তিনি একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের ৭ এপ্রিল পাক হানার বাহিনীর আক্রমনে তিনি আহত হয়ে দীর্ঘ ১মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে তিনি রাজনীতিতে পা রাখেন। ১৯৬৮-৬৭ সালে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তখন সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ নিয়ে ছিল সিলেট জেলা। পরবর্তীতে কিছুদিন জাসদ সিলেট সদরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮২ সালে বিকেন্দ্রীকরণে অংশগহনের মাধ্যমে হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে যুক্ত হন। তিনি জাতীয় ফ্রন্টের সিলেট জেলা শাখার সদস্য সচিব ও জন দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি জেলা জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৯০ সাল থেকে ৯৪ সাল পর্যন্ত জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধ সহ সকল আন্দোলন সংগ্রামে সিলেট বাসির খুব কাছের মানুষ ছিলেন মকসুদ ইবনে আজিজ লামা। ১৯৮৮ সালে সিলেট-২ বালাগঞ্জ ও বিশ্বনাথ (বর্তমান বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর) আসনে বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত হন এবং পরবর্তী ১৯৯১ সালের নির্বাচনে তিনি ২য় বারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে ১পুত্র ও ২কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম সবিতা জাহান চৌধুরী। প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ মকসুদ ইবনে আজিজ লামা বর্তমানে স্বপরিবারের যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ আজিজুর রহমান : ১৯৯৬ সালে ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ আজিজুর রহমান। তাঁর পৈত্রিক বাড়ি ওসমানীনগর উপজেলার উমরপুর ইউনিয়নের খুজগীপুর গ্রামে।
শাহ আজিজুর রহমান ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানে সিলেটের ছাত্র গণজাগরণের অবিসংবাদিত নেতা, যার সাহস ও ত্যাগের রাজনীতি আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনকে গোটা পূর্বপাকিস্তানে বেগবান করেছিলেন। পাকিস্তানি দানব আইয়ুব খানের মঞ্চে ছুড়ে দিয়েছিলেন পায়ের জুতো। তখন তিনি সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। ওই সময় তিনি কারাবরণ করে সিলেটের আন্দোলনকারীদের গর্বিত করে ছিলেন, আর সৃষ্টি হয়েছিল ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়। তিনি ছয় দফা আন্দোলন ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার মহান দায়িত্ব অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে পালন করেছিলেন। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি ছিলেন শীর্ষদের মধ্যে অন্যতম।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর প্রতিশোধ নিতে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে যোগ দেন। জাতীয় প্রতিটি দুঃসময়ে অগ্রভাগে থেকে সিলেটের অন্যতম কিংবদন্তিতে পরিণত হন। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা, সংগঠক ও আওয়ামী লীগের একজন ত্যাগী নেতার পাশাপাশি ১৯৮৯ সালে বিপুল ভোটে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হয়ে সিলেট-২ আসনে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। শাহ আজিজুর রহমান ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন, সৎ ও নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদ। বিবাহিত জীবনে তিনি এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। ২০১৮ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।

এম ইলিয়াস আলী : ১৯৯৬ সালে সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ) আসনে ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে প্রথম বারের মত এবং ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয় বারের এমপি নির্বাচিত হন এম ইলিয়াস আলী। এম ইলিয়াস আলী বাংলাদেশের একজন আলোচিত রাজনীতিবিদ। তিনি ১৯৬১ সালের ১ জানুয়ারী বিশ্বনাথ উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের রামধানা গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম আলহাজ্ব মো. ওয়াছিব উল্লাহ ও মাতার নাম সূর্যবান বিবি। তিনি রামধানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ভর্তি হন বিশ্বনাথের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রামসুন্দর অগ্রগামী উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে এস.এস.সি পাশ করেন এবং সিলেট সরকারী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সমাপ্ত করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ১৯৮৬ সালে মার্কেটিং এর উপর এম.কম ডিগ্রী সম্পন্ন করেন।
১৯৮১ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত হন। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এম. ইলিয়াস আলী ছাত্রদলের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়ার পর তিনি রাজনীতির সব কঠিন ও দুঃসময়ে দু:সাহসীকতার পরিচয় ও বলিষ্ট নেতৃত্ব দিয়ে ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের এক কিংবদন্তি ছাত্রনেতা হিসেবে ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম স্বর্নাক্ষরে লিখেছেন এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচনে সর্বাধিক ভোটের মাধ্যমে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
বিশ্বনাথের ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে তিনিই প্রথম ছাত্রনেতা হিসেবে কোন ছাত্রসংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির অসীম সাহসী এই ছাত্রনেতা ছাত্ররাজনীতির কারণে একাধিক বার কারাবরণ করেন ।
এম ইলিয়াস আলী এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর অল্পদিনের ব্যবধানে জাতীয়ভাবে নিজের একটি সম্মানজনক স্থান অর্জন করতে সক্ষম হন। বিশ্বনাথের এই কৃতি সন্তান ২০১২ সালের ১৭ই এপ্রিল রাতে ঢাকার বনানী এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। নিখোঁজ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। তার সহধর্মিনী তাহসিনা রুশদীর লুনা বিএনপির চেয়ারপার্সনে উপদেষ্ঠা। এম ইলিয়াস আলী দুই পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক।

আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধূরী : ২০০৮ সালে অনুষ্টিত ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে সিলেট-২ আসনে (বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ) এমপি নির্বাচিত হন আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরী।
সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন শফিকুর রহমান চৌধুরী বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর ইউনিয়নের চান্দভরাং গ্রামে ১৯৫৭ সালের ১৮ই আগষ্ট জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল মতলিব চৌধূরী ও মাতার নাম লতিফুন নেসা চৌধূরী । শফিকুর রহমান চৌধুরী রায়খেলী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ১৯৭২ সালে চান্দভরাং উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি পাশ করেন। এরপর সিলেট এমসি কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এইচ.এস.সি এবং ১৯৭৯ সালে বি.এ ডিগ্রী লাভ করেন। শফিুকুর রহমান চৌধূরী হাইস্কুলের ছাত্র থাকাবস্থায় ১৯৬৯ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত হন। যুক্তরাজ্যে গমনের পূর্ব পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। ব্রিটেনে যাওয়ার কিছুদিন পর তিনি লন্ডনে একটি কলেজে কিছুদিন অধ্যয়ন করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পর শফিকুর রহমান চৌধূরী আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত হন এবং অল্প দিনের মধ্যে একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে বিলেতের মাটিতে নিজের স্বতন্ত্র পরিচয় অর্জন করতে সক্ষম হন। তিনি যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংগঠনের গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব পালন করেন।
শফিকুর রহমান চৌধুরীর পিতা আব্দুল মতলিব চৌধুরী ছিলেন একজন বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা। প্রবাসী এই বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ একসময় বিলাতের মায়া ত্যাগ করে বাংলাদেশের স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ২০০৮ সালে অনুষ্টিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসনে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিএনপির রানিং এমপি প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ইলিয়াস আলীকে অল্প ভোটের ব্যাবধানে হারিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে দারুণ এক চমক দেখান। স্থানীয় রাজনীতিতে অভাবনীয় এই সাফল্য পাওয়ায় দলও তাকে যথাযথ মূল্যায়ন করে। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থেকে তিনি সরাসরি সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ব্যাক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত ও তিন কন্যা সন্তানের জনক।

ইয়াহ্‌ইয়া চৌধুরী এহিয়া : বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত তরুণ রাজনীতিবিদ ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া বিশ্বনাথ উপজেলার দেওকলস ইউনিয়নের দেওকলস গ্রামে ১৯৭৪ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহন করেন। পিতার এডভোকেট আব্দুল হাই ও মাতা মোছাঃ দিলোয়ারা বেগম চৌধুরী। ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী দেওকলস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ভর্তি হন সিলেট নগরীর মিরাবাজার শাহজালাল জামেয়া স্কুল এন্ড কলেজে। সেখান থেকে ১৯৯৯ সালে এস.এস.সি পাশ করেন। এরপর তিনি চলে যান যুক্তরাজ্যে। সেখানে ডিপ্লোমা ইন এলএলবি অধ্যয়ন শেষে লিভারপুল কলেজ থেকে এমবিএ ডিগ্রী সম্পন্ন করেন।
ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া ৯ম শ্রেণীতে অধ্যয়ন থাকাবস্থায় ছাত্র সামজের রাজনীতির সাথে জড়িত হন। তিনি ২০০৩ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সালে সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক ও ২০০৯ সালে যুগ্ম সম্পাদকের নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০১১ সালে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ২০১৫ সালে যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও সিলেট মহানগর জাতীয় পার্টির আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
২০১৪ সালে অনুষ্টিত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসনে মহাজোটের মনোনয়ন পেয়ে জাতীয় পার্টির ‘লঙ্গল’ প্রতীক নিয়ে এমপি নির্বাচিত হন। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে স্থানীয় উন্নয়নে তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত এবং দুই পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক।

আরো সংবাদ