AM-ACCOUNTANCY-SERVICES-BBB

বিশ্বনাথে ৬ জন অগ্নিদগ্ধের চাঞ্চল্যকর মামলার চার্জশিট দাখিল

বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডট কম :: এপ্রিল - ৩০ - ২০১৯ | ৫: ১০ অপরাহ্ণ

পরকীয়ায় বাঁধা দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে অগ্নিসংযোগ করে আরশ-রেহেনা

অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত গৃহবধূ চম্পা বেগম ও তার স্বামী-৪সন্তান এবং ঘটনার মূল হোতা ঘাতক আরশ আলী।

বিশ্বনাথনিউজ২৪ :: সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের রহিমপুর (পূর্বপাড়া) গ্রামে একই পরিবারের ৬জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে এক জন নিহতের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আদালতে দাখিল করা হয়েছে। ঘটনার রহস্য উটঘাটন ও তদন্ত শেষে অভিযোগপত্রটি আদালতে দাখিল করেন বিশ্বনাথ থানার এসআই মিজানুর রহমান।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়- ভিকটিম ফারুক মিয়ার সৎ বোনের স্বামী হচ্ছেন গ্রেপ্তারকৃত আরশ আলী ও সৎ ভাইয়ের স্ত্রী রেহেনা বেগম। সেই সুবাদে ফারুক মিয়ার বাড়িতে রেহেনা বেগমের ঘরে সব সময় যাওয়া করতেন ঘটনার মূলহোতা আরশ আলী। স্বামী ফরিদ মিয়া প্রবাসে থাকাকালীন অবস্থায় রেহেনার সাথে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠে তাদের বাড়ির ২/৩ জন পুরুষের। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রেহেনার সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলে আরশ আলী। এরপর থেকে অবাদে রেহেরার সঙ্গে মেলামিশা করতে থাকেন আরশ। ঘটনার ২/৩ মাস পূর্বে জনৈক চান মিয়ার বসত ঘরের একটি কক্ষে অবৈধভাবে মেলামেলা করা অবস্থায় দেখে ফেলেন ভিকটিম চম্পা বেগম। কিন্তু এই অনৈতিক কর্মকান্ড দেখে তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না ফারুক মিয়া, তার স্ত্রী চম্পা বেগম, মেয়ে রিপা বেগম ও পুত্ররা। উক্ত বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ভাবে একাধিকবার শালিস বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। এতে ফারুক মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি চরম ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে আরশ আলী ও রেহেনা বেগম। তারা ফারুক মিয়ার পরিবারের ক্ষতি সাধন করার চেষ্টা করে ও বিভিন্ন সময়ে হুমকি প্রদান করে। একপর্যায়ে ফারুক মিয়ার ঘরে আগুন দেওয়ার পরিকল্পনা নেয় আরশ ও রেহেনা। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার ২দিন আগে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কামাল বাজারস্থ (আনন্দ বাজার) হুসিয়ার এন্টার প্রাইজ থেকে ২লিটার পেট্রোল ক্রয় করে নিয়ে আসে আরশ। ঘটনার দিন রাত আনুমানিক আড়াইটায় ঘটনাস্থলে গিয়ে রেহেনা বেগমের দরজায় কড়া নাড়ে আরশ। এসময় ঘর থেকে বের হয়ে রেহারা ও আরশ পরিকল্পনা অনুযায়ী ফারুক মিয়ার বসতঘরের দরজার ভাঙ্গা অংশ দিয়ে পেট্রোল ঢেলে দিয়াশলাই (ম্যাচ) এর কাটি দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং ঘটনার পর কয়েলের আগুন থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়েছে বলে তারা (আরশ ও রেহেনা) লোকমুখে প্রচার করতে থাকে।

উল্লেখ‌্য- ২০১৮ সালের ২৮ আগস্ট দিবাগত রাতে নিজ বসত ঘরে আগুনে দগ্ধ হন রহিমপুর পূর্বপাড়া গ্রামের ফারুক মিয়া (৫০), তার স্ত্রী চম্পা বেগম (৪৫), মেয়ে রিফা বেগম (১৮), ছেলে এমাদ উদ্দিন (১৪), ইমরান আহমদ (১২), নিজাম উদ্দিন (১০)। তাদের আত্মচিৎকারে পাশের ঘরে থাকা ফারুক মিয়ার পুত্র রাজু মিয়া ঘর থেকে বের হয়ে চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন এসে ঘরের দরজা ভেঙ্গে আহতদের উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। আহতদের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয় এবং সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২ সেপ্টেম্বর সকালে চম্পা বেগম মৃত্যুবরণ করেন। কয়েলের আগুন থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রতিবেশী লোদের এমন বক্তব্যের ভিত্তিতে ঘটনার পরদিন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ‘কয়েলের আগুণ থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়েছে’ বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে স্থানীয় সাংবাদিক, পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে সেই পুড়া কয়েলের ছাই ও অবশিষ্ট অংশ অক্ষত দেখতে পান এবং অগ্নিদগ্ধ পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য ও সন্দেহজনক লোকরা আত্মগোপন করায় ঘটনাটি রহস্যজনক মনে হয় এবং এবিষয়ে বিশ্বনাথ নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম-এ সংবাদ প্রকাশিত হয়। এঘটনায় নিহত চম্পা বেগমের ভাই, উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের টেংরা গ্রামের মৃত আবদুল মছব্বিরের পুত্র সফিক মিয়া বাদি হয়ে ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর অজ্ঞাতনামা অভিযুক্ত করে বিশ্বনাথ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-২১)। একপর্যায়ে পুলিশ নিশ্চিত হয় এটি হত্যার উদ্দেশ্যে একটি পরিকল্পিত অগ্নিসংযোগের ঘটনা, তাই সুষ্ট তদন্তের মাধ্যমে অগ্নিকান্ডের ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে চেষ্টা চালায়। এরপর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগীতায় প্রযুক্তির মাধ্যমে ভিকটিম ফারুক মিয়ার ছোট ভাই ফরিদ মিয়ার স্ত্রী ঘটনার মূল সন্দেহজনক রেহেনা বেগম (২৫) ও ভগ্নিপতি একই গ্রামের মৃত হুসন আলীর পুত্র আরশ আলী (৩৭) এর অবস্থান সনাক্ত করে পুলিশ। এরপর ৫ অক্টোবর মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলা থেকে রেহেনা বেগমকে ও ৯ অক্টোবর রাতে সিলেট নগরী থেকে আরশ আলীকে গ্রেপ্তার করে থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদে রেহেনা বেগম ও আরশ আলী ঘটনার দায় স্বীকার করে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিশ্বনাথ থানার এসআই স্বাধীন তালুকদার ডিসি কোর্স প্রশিক্ষণে চলে গেলে থানার এসআই মিজানুর রহমানকে এই মামলার পরবর্তী কার্যক্রম সম্পাদনের দায়িত্ব দেন থানার অফিসার ইন-চার্জ শামসুদ্দোহা পিপিএম। ঘটনার মূল সন্দেহজনক আরশ আলী ও রেহেনা বেগমের বিরুদ্ধে পেনাল কোর্ড ৩২৪/৩২৬/৩০৭/৩০২/৪৩৬/৪২৭/৫০৬ (২) ও ৩৪ ধারায় অভিযোগ প্রাথমিক ভাবে সত্যতা পাওয়ায় আরশ ও রেহেনাকে অভিযুক্ত করে গত ২৩ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দাখিল করেন এসআই মিজানুর রহমান। অভিযুক্ত আরশ আলী ও রেহেনা বেগম বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছেন।

আরো সংবাদ