AM-ACCOUNTANCY-SERVICES-BBB

‘আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে অস্ত্র-গুলির ভয় দেখিয়ে টুকেরবাজার থেকে মুজিবকে অপহরন করা হয়’

বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডট কম :: আগস্ট - ১৯ - ২০১৪ | ১১: ১৯ পূর্বাহ্ণ

37308_mz

‘আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে অস্ত্র-গুলির ভয় এবং স্প্রে মেরে শহরতলীর টুকেরবাজার থেকে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিএনপি নেতা মুজিবুর রহমান মুজিবকে অপহরন করা হয়’ বলে জানিয়েছেন তার শ্যালক ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন।
নিখোঁজ হওয়ার সাড়ে তিন মাস পর গাজীপুরের টঙ্গীতে বিএনপি নেতা মুজিব ও তার গাড়ির চালক রেজাউল করিম সোহেলের সন্ধান মেলে । সোমবার সকাল ৭টার দিকে কে বা কারা বোরকা পরিয়ে এবং চোখ-মুখ বেঁধে তাকে গাজীপুরের টঙ্গী ব্রীজের কাছে রেখে যায় বলে ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসাইন জানিয়েছেন। শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় মুজিবকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ড্রাইভার রেজাউল করিম সোহেলও জীবিত আছেন বলে জানান তিনি।
সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার হারুনুর রশীদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘মুজিব আমাদের তত্বাবধানে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। এর বাইরে তিনি আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।’
মুজিব উদ্ধার হওয়ার পর ‘নিখোঁজ’ মুজিব উদ্ধার কার্যক্রমের সমন্বয়ক সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হেমায়েতুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঢাকায় গেছে। তিনি বলেন, ‘মুজিবকে ইউনাইটেড হাসপাতালের ইমার্জেন্সীতে ভর্তি করা হয়েছে। শুনেছি, টঙ্গী থেকে মুজিবের এক চাচা ও ভাতিজা তাদেরকে গুলশানে তার শ্যালকের বাসায় নিয়ে যায়। ঘটনাটি আমাদের কাছে রহস্যাবৃত মনে হচ্ছে।’
সুনামগঞ্জে বিএনপি’র গণঅনশন কর্মসূচি থেকে ফেরার পথে গত ৪ মে নিখোঁজ হন যুক্তরাজ্য বিএনপি’র উপদেষ্টা কমিটি ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মুজিবুর রহমান মুজিব ও তার গাড়ি চালক সোহেল। মুজিব যুক্তরাজ্য যুবদলেরও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। এ ঘটনায় মুজিবের পরিবারের পক্ষে মুজিবুর রহমানের ভাগ্নি জামাতা, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ আব্দুল মজিদ কলেজের অধ্যক্ষ মো. রবিউল ইসলাম সুনামগঞ্জ সদর থানায় একটি জিডি করেন। পরে এটিকে নিয়মিত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে পুলিশ।
আলাপকালে মুজিবের শ্যালক ব্যারিস্টার আনোয়ার জানান, সোমবার সকাল ৭টায় মুজিবকে কে বা কারা বোরকা পরিয়ে এবং চোখ-মুখ বেধে ফেলে টঙ্গী ব্রীজের কাছে রেখে যায়। এ সময় অবশ্য তারা তার তাদের বাধন খুলে দেয়। এরপর মুজিব ও তার ড্রাইভার একটি সিএনজি অটোরিক্সাযোগে গুলশানে তার বাসায় যান। সেখান থেকে বিকাল ৪টার দিকে হেলথ চেক আপের জন্য মুজিবকে ইউনাইটেড হাসপাতালে আর ড্রাইভার সোহেলকে সুনামগঞ্জে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তবে, মুজিবের ব্যবহৃত প্রাইভেট কারের সন্ধান এখনো মেলেনি বলে জানান তিনি।
ব্যারিস্টার আনোয়ার বলেন, সোমবার সকালে তিনি যুক্তরাজ্য থেকে ঢাকায় শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে গাড়ীতে থাকতেই খবর পান আমার ভগ্নিপতি, বিএনপি নেতা মুজিবুর রহমান মুজিব ও তার গাড়ী চালক সোহেল আমার গুলশানের বাসায় পৌঁছেছেন। তখন সময় দুপুর ১২টা। আমি সরাসরি বাসায় যাই। দেখতে পাই জীর্ণ শীর্ণ দেহে মুজিব ও সোহেল দুজনে শুয়ে আছেন বিছানায়। মুজিবকে তাৎক্ষণিকভাবে গুলশানে অবস্থিত ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করি ও তাদের ফিরে আসার বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করি। খবর পেয়ে বেলা আড়াইটার দিকে গুলশান জোনের একজন সহকারী কমিশনারের নেতৃত্বে বেশ কিছু সাদা পোষাকের পুলিশ ইউনাইটেড হাসপাতালে আসে।
ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে টেলিফোনে জানান, মুজিব শারিরীকভাবে দুর্বল হলেও তারা আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এ সময় ডাক্তারদের অনুমতি নিয়ে গুলশান জোনের এক পুলিশ কর্মকর্তা কথা বলেন মুজিবুর রহমানের সাথে।
গুলশান থানার ওসি রফিকুল ইসলাম সোমবার রাত রাত ১২টায় জানান, ‘মুজিব হাসপাতালে ভর্তি আছেন, এর বাইরে তিনি আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।’
খবর পেয়ে মুজিবের স্বজনরা সোমবার রাতেই সিলেট থেকে ঢাকা পৌছেছেন।
যেভাবে নিখোঁজ হন মুজিব: ৪মে সুনামগঞ্জে বিএনপি গণঅনশন কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে সেখান থেকে বিকাল ৪টার দিকে সিলেট নগরীর শামীমাবাদের বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন বিএনপি নেতা মুজিব ও গাড়ি চালক। পথে টুকেরবাজার এলাকায় আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তার প্রাইভেট কারের গতিরোধ করে বলে  জানান ব্যারিস্টার আনোয়ার। তারা প্রথমে ড্রাইভার ও গাড়ির কাগজপত্র চেক করে। তারা বলে, গাড়ির লাইসেন্স ভুয়া। এই অজুহাতে তারা মুজিব ও ড্রাইভারকে মাইক্রোবাসে উঠতে বলে। এমনকি তাদেরকে বাসায় পৌঁছে দেয়া হবে বলেও জানায়। মুজিব ও তার ড্রাইভার মাইক্রোবাসে উঠার সময় ধ্বস্তাধ্বস্তি শুরু অস্ত্র ও গুলি করার ভয় দেখায়। গাড়ি তুলে কিছুটা একটা স্প্রে করে। এরপর তারা আর কিছু বলতে পারেননি।
ব্যারিস্টার আনোয়ার জানান, গত সাড়ে ৩ মাস কোথায় কি অবস্থায় ছিলেন সে সম্পর্কে গুছিয়ে কোন তথ্য দিতে পারেননি মুজিব। তবে, আজ কিভাবে ফিরলেন সে সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন তিনি। মুজিব জানিয়েছেন, তিনি যাদের হাতে বন্দি ছিলেন তাদের কয়েক সোমবার সকালে বোরখা পরিয়ে টঙ্গি ব্রীজের কাছে একটি সিএনজি অটোরিক্সায় তুলে দেয় মুজিব ও গাড়ী চালক সোহেলকে। ব্রীজ পেরিয়ে আব্দুল্লাহপুর থেকে গুলশান পর্যন্ত আসেন ঐ অটোরিক্সাতেই। আশ্রয় নেন তার শ্যালকের বাসায়।
মুজিবের সন্ধান দাবিতে আন্দোলন: মুজিবুর রহমান মুজিব ও তাঁর গাড়িচালকের সন্ধানের দাবিতে বিক্ষোভ, মানববন্ধন, হরতালসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। একইভাবে গাড়ি চালকের সন্ধানের দাবিতে মিছিল-সমাবেশ ও পরিবহন ধর্মঘট করেন শ্রমিকেরা। ঘটনার পরই তাঁদের উদ্ধারে সুনামগঞ্জ, সিলেট, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। নিখোঁজের পরদিন ময়মনসিংহে মুজিবুরের মুঠোফোন কিছু সময়ের জন্য সচল ছিল। পরে পুলিশ সেখানে সাত দিন অবস্থান করে অভিযান চালিয়ে দুজনকে আটক করে। একইভাবে টাঙ্গাইলের মধুপুরগড়ে আরেকবার তাঁর মুঠোফোন সচল পাওয়ায় সেখানেও অভিযান চালানো হয়। সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ থেকে আটক করা হয়েছিল আরও চারজনকে। বর্তমানে সবাই জামিনে আছে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে পুলিশ সর্বশেষ গত ২৬ মে সিলেটে এক লন্ডন প্রবাসীর মালিকানাধীন মৎস্য প্রক্রিয়াজাত কোম্পানি ও তাঁর বাড়িতে অভিযান চালায়। ওই প্রবাসীর সঙ্গে মুজিবুরের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ছিল বলে পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশকে জানানো হয়েছিল। এরপর আর কোনো অভিযান হয়নি। নিখোঁজ মুজিবুরকে উদ্ধারে যুক্তরাজ্য পুলিশের দুটি দল বাংলাদেশে এসে কাজ করে গেছে।
মুজিবের লন্ডনের বাসায় চিরকুট, দুই দিনের মধ্যে হত্যার হুমকি: নিখোঁজ হওয়ার ৫ দিন পর  ৯মে মুজিবুর রহমান মুজিবের লন্ডনের ইলফোর্ডের বাসার লেটার বক্সে একটি চিরকুট পান তার স্ত্রী সালেহা বেগম।। চিঠিতে কেন এবং কারা তাকে অপহরণ করেছে তা উল্লেখ না থাকলেও বলা হয়েছিল- রোববার রাতে মুজিবুরকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে অপহরণ করে সিলেটের একটি বাসায় নিয়ে রাখা হয়েছে। তবে অপহরণকারীরা নিজেরা বাঁচতে আগামী দুই দিনের মধ্যেই অপর পার্টির কাছে তাকে হস্তান্তর করবে,না হলে তাঁকে হত্যা করবে বলে জানিয়েছে। নিখোঁজ বিএনপি নেতার শ্যালক ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন বিষয়টি জানিয়েছিলেন।
চিরকুটটি বাংলায় লেখা । ভুল বানানে চিরকুটটির লেখা ছিল এ রুপ- ‘‘ সানডে লেইট নাইট ৩ গুন্ডা ২টা সিএনজি দিয়া এক ঘরের মধ্যে রাখছে। ড্রাইভার আলাদা, তিনি আলাদা জায়গায় আছেন। অন্য পার্টির কাছে দেয়ার কথা ছিল,তারা সুযোগ পায়নি। সিলেট থেকে বের হবার সুযোগ পাইতেছে না। এখন তারা তাদের জান বাঁচাতে এক দুই দিনের মধ্যে মেরে ফেরতে চাইতেছে। তিনি বর্তমানে সিলেটের এক ঘরের মধ্যে আছেন’’।
শমসের মবিন চৌধুরীর শোকরিয়া: বিএনপি মুজিবুর রহমান মুজিব উদ্ধার হওয়ায় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেছেন-বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আল্লাহর অশেষ কৃপায় মুজিব প্রাণে বেঁচেছেন। বিবৃতিতে তিনি মুজিব ও তার গাড়ি  চালকের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ূ কামনা করেন।

আরো সংবাদ