AM-ACCOUNTANCY-SERVICES-BBB

সিলেটে মেয়র-পুলিশ মুখোমুখি!

বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডট কম :: জুলাই - ৫ - ২০১৪ | ১০: ২৭ অপরাহ্ণ

03 (3)

রফিকুল ইসলাম কামাল, সিলেট : সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও সিলেট পুলিশ প্রশাসন এখন কিছুটা হলেও মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। উভয় পক্ষের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ-উত্তেজনা। কোন নোটিশ বা আলোচনা ছাড়া নগরীতে ইজিবাইক ধরপাকড় এবং হকার নিয়ে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার দুপুরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে সিটি মেয়র পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নগরীতে অশান্তি সৃষ্টির জন্য পুলিশ পরিকল্পিতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তবে মহানগর পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি রমজানে নগরী যানজটমুক্ত রাখতে তারা কাজ করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রমজানের আগেই সিলেট নগরীতে ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন। সে লক্ষ্যে ইজিবাইক মালিক-চালকদের নিয়ে সিসিক মেয়র বৈঠকও করেন। বৈঠকে মেয়র ইজিবাইক চালকদেরকে রমজান মাসে নগরীর ভেতরে গাড়ি না চালানোর আহবান জানান। তিনি ইজিবাইক চালকদেরকে নগরীর বাইর সাইড মদীনা মার্কেট, শাহী ঈদগাহ, হুমায়ুন রশীদ চত্বর প্রভৃতি এলাকায় ইজিবাইক চালানোর আহ্বান জানান।

মেয়রের এমন আহবানে ইজিবাইক চালকরা মদীনা মার্কেট থেকে তালতলা পর্যন্ত তাদের গাড়ি চালানোর অনুমতি চান। তখন মেয়র বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে আশ্বাস দেন।

এই বৈঠকের পর গত বুধবার, তৃতীয় রমজানের দিন সিলেট নগরীতে ইজিবাইকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয় পুলিশ। তারা নগরীর বিভিন্ন জায়গায় ইজিবাইক চালানোয় চালকদেরকে বাধা প্রদান করে। এর পরদিন, বৃহস্পতিবার নগরীতে মিছিল ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ইজিবাইক চালকরা। তারা আন্দোলনের হুমকিও দেয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মেয়র আরিফ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে তারাবির নামাজ শেষে ইজিবাইক মালিক-চালকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। কিন্তু বৈঠকটি কোনোও সমঝোতা ছাড়াই শেষ হয়। এরপরপরই নগরী জুড়ে তান্ডবলীলা চালায় ইজিবাইক চালকরা। তারা শতাধিক গাড়ি ভাংচুর করে। তাদের হাতে আহত হন অন্তত ১০ জন।

মেয়র আরিফ জানান, এমন ঘটনার পর তিনি এসএমপি পুলিশ কমিশনার মিজানুর রহমানকে ইজিবাইক চালকদের সাথে বসে বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য বলেন। কিন্তু পুলিশ কমিশনার মেয়রের কথায় পাত্তা না দিয়ে বলেন,‘আপনি চাইলে ইজিবাইক চালকদের নিয়ে বসতে পারেন। আমি বসবো না।’ পুলিশ কমিশনারের এমন বক্তব্যে আরিফ একদিকে হতবাক হন, অন্যদিকে হন ক্ষুব্দ।

আরিফ আরো জানান, গত বুধবার নগরীতে ইজিবাইকের বিরুদ্ধে পুলিশ যে অ্যাকশন নিয়েছে, তা ছিল পুলিশের একক সিদ্ধান্ত। সিসিককে তারা বিষয়টি অবহিত করেনি।

এদিকে সম্প্রতি সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নগরীর ফুটপাথগুলো হকারমুক্ত হয়। রমজান শুরু হওয়ার আগে হকার্স নেতৃবৃন্দ সিসিক মেয়র আরিফের কাছে রমজানে অন্তত ফুটপাথে বসতে দেয়ার অনুরোধ জানান। মানবিক কারণে মেয়র হকারদেরকে ফুটপাথে বসার অনুমতি প্রদান করেন। তবে তিনি শর্ত জুড়ে দেন- কোনো হকার রাস্তায় বসতে পারবে না এবং সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তারা ফুটপাথে বসতে পারবে না। এরপর থেকে বসতে হবে। হকার্স নেতৃবৃন্দ মেয়রের এমন শর্ত মেনে নেন। এমনকি তারা তাদের নিজেদের মানুষজন দিয়ে আলাদা একটি স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করেন যাতে কোনো হকার রাস্তায় না বসেন। হকাররা মেয়রের শর্ত মেনেই ফুটপাথে বসা শুরু করে।

মেয়র অভিযোগ করেন- এরপর থেকে পুলিশ হকার্সদের স্বেচ্ছাসেবক টিমের বিভিন্ন সদস্যকে ছিনতাইসহ বিভিন্ন মামলায় আটক করা শুরু করে । এতে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্বে থাকা হকার্সরা ভয়ে তাদের দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকেন। ফলে নগরীতে আবারও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দেয়।

মেয়র অভিযোগ করেন, তিনি জানতে পেরেছেন- পুলিশের কতিপয় সদস্য নগরীর প্রায় ৩ হাজার হকার্সদের কাছ থেকে জনপ্রতি প্রতিদিন ১শ টাকা করে নিচ্ছে। এই পুলিশ সদস্যরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে হকারদেরকে রাস্তায় বসানোর পায়তাঁরা করছে। সিলেট নগরীকে পরিকল্পিতভাবে অস্থিতিশীল করতেই পুলিশ এমন কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন মেয়র।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রহমত উল্লাহ এ ব্যাপারে বলেন, রমজান উপলক্ষে সিলেট নগরীকে যানজটম্ক্তু রাখতেই ইজিবাইক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

আরো সংবাদ