AM-ACCOUNTANCY-SERVICES-BBB

বই পডুন, বই উপহার দিন

বিশ্বনাথ নিউজ ২৪ ডট কম :: জুন - ২৪ - ২০১৪ | ২: ১০ অপরাহ্ণ

Pic0

মিজানুর রহমান মিজান : ১৯৮০ সাল। সম্ভবত এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়। দিনটি ছিল সোমবার। দুপুরের খাবার সেরে শহরের একটি ছোট হোটেল থেকে বের হয়ে ফুটপাত ধরে এগুচ্ছি। কিছুদুর অগ্রসর হতেই দেখতে পেলাম ফুটপাতের উপর বেশ কতকগুলো অগোছালো হরেক রকম পত্র পত্রিকা ও বই নিয়ে হকার বসে আছে এবং ইত্তেফাক, সংবাদ, আজাদ বলে চিৎকার করে পথিকের দৃষ্টি খবরের কাগজের প্রতি আকৃষ্ট করার এ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে নিয়ম মাফিক। আমার বরাবরই একটি অভ্যাস রাস্তা ঘাটে বা যে কোন স্থানে পড়ে থাকা কাগজের টুকরো দৃষ্টি গোচর হলেই কুড়িয়ে পড়া এবং পাঠান্তে কোন উচু বা ভাল স্থানে ঝুলিয়ে রাখা। অভ্যাস বশত: সে দিন ও প্রতিটি বইয়ের প্রতি অনুসন্ধিৎসু নেত্রে চেয়ে আছি আমার মনের মত বই এর সন্ধান চালাচিছ। হঠাৎ চোখের কোনে ভেসে উঠল একটি পত্রিকা ‘‘বই”। সানন্দে হাত বাড়িয়ে পত্রিকাটি তুলে নিয়ে দেখি ৫ মাস পূর্বের পুরাতন পত্রিকা। তবু ও এক এক করে পাতা উল্টাচিছ তার ভিতরের কিছু স্বাদ গ্রহণের লোভ সামাল দেবার প্রচেষ্টায়। জানি না কিসের আকর্ষনে যে ওর প্রতি মন এত দুর্বল হয়েছিল , যার ফলশ্রুতিতে পকেটে হাত ঢুকিয়ে তার মুল্য পরিশোধ করতে কাল বিলম্ব করিনি।
পত্রিকাটি পাঠ করে নিজের মনের সবক’টি জানালা খোলে যায়। অনুভুত হয় নুতন জগতের , সন্ধান পেলাম মরু বুকে এক পশলা বৃষ্টির। পেলাম পেলবতা। পত্রিকাটির গুণাগুণ ব্যক্ত করা আমার দ্বারা সম্ভব হবে না। যেহেতু আমার ক্ষেত্রে বই সম্পর্কে শুধু অনুভুতিই জন্মে এবং আবেগের প্রসার হয় বৃদ্ধি তাৎক্ষণিক। সঙ্গত কারনে ইহাই আমার পিপাসিত প্রাণের অগ্রদূত। নুতন করে গড়ে তোলে একজন পাঠক রুপে। এর আগে যে গল্প , উপন্যাস , নাটক , কবিতা ও প্রবন্ধ ইত্যাদি পাঠ করিনি এমন নয়।
জ্ঞানার্জনে যখন হাটি হাটি পা পা , তখন কিন্তু পাঠ্য পুস্তক ছাড়া কিছুই ভাল লাগতো না। অষ্টম শ্রেণীতে পাঠরতাবস্তায় আমার এক বন্ধু , সহপাঠি এক দিন হামিদুল ইসলামের ‘‘একটি মেয়ের ভালবাসা” নামক বইটি জোর করে পড়ার জন্য দেয়। অবশ্য বইটি প্রথম বার আদ্যপান্ত পাঠ করে তেমন কিছুই অবগত, আয়ত্ব করতে পারিনি। যেহেতু বই এর প্রতি ছিল অনিহা, অনিচ্ছা। কিন্তু দ্বিতীয় বার যখন ওর তাগিদে ‘‘প্রেমের সমাধি” বইটি পড়ছিলাম। তখন থেকেই বই পাঠ করার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়ি , মনের একটি টান সৃষ্টি হয়ে যায়। সত্যি বলতে কি ? আবারো ‘‘একটি মেয়ের ভালবাসা ” বইটি পড়ার জন্য পাগল প্রায় হয়ে যাই, পড়ি। সে দিন থেকেই বই-ই আমার সর্বস্ব, সকল সময়ের বন্ধু হিসেবে মন কাননে স্তান লাভ করে। কিন্তু আর্থিক অসচছলতা হেতু কিছুটা ভাটা পড়ে যায়। তবে নিয়মিত না হলে ও অবসর মুহুর্তে সেই ছিল প্রাণের দোসর এক মাত্র সঙ্গী। তবু ও মন মানসিকতা গড়ে উঠেনি বই সংগ্রহের। কিন্তু তৎকালীন সময়ের সিলেট থেকে সাহিত্য বিষয়ক এক মাত্র সাপ্তাহিক সিরাজ চৌধুরী সম্পাদিত ‘‘সুর” ও সাপ্তাহিক জালালাবাদ পত্রিকা পাঠান্তে এবং নিজের লেখা প্রকাশে বই সংগ্রহের আকাংখা তীব্র হয়ে দেখা দেয়। সংগ্রহ করি বিভিন্ন প্রকার বই, পুস্তক, পত্র-পত্রিকা। সে অনুপ্রেরণা থেকেই গড়ে তুলি আমার পরম শ্রদ্ধেয় প্রয়াত পিতার নামে চাঁন মিয়া স্মৃতি পাঠাগার।
মধ্যখানে প্রবাস জীবন গ্রহণে স্থানীয় পত্রিকার সাথে ভাটা পড়লে ও চিত্রবাংলা অর্থ্যাৎ খবর গ্রুপ হয়ে উঠে লেখালেখি ও পাঠের কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু প্রবাসের ইতি টেনে স্বদেশে এসে লেখালেখি এমন কি পাঠের ক্ষেত্রে হয়েছিলাম একেবারে নিরুৎসাহ। মন চাইত না এদিকে যেতে। প্রায় চার বৎসরের মত থেকে যাই বনবাসে। কিন্তু আবারো একদিন হয়ে যাই উদ্দীপ্ত লেখক সুমনের পীড়াপীড়িতে আগ্রহী। নোঙর করা নৌকা চলমান ধীর লয়ে নদীর উজান ভাটির দিকে।
পত্রিকাই আমাকে শিক্ষা দান করে অনুষ্টান, বিবাহ, জন্ম দিন ইত্যাদিতে বই উপহারের। আমার সহপাঠি, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় স্বজনকে ও যে উৎসাহ প্রদান করছি বই উপহারের। তার জন্য ও পত্রিকার নিকট ঋনী। সেই সঙ্গেতো যাঁরা বই নামক পত্রিকার প্রকাশনার দায়িত্বে নিয়োজিত থেকে প্রাণের দোসর করার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন , তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ র’ল সালাম , মোবারকবাদ ও ফুলেল  শুভেচ্ছা। আপনাদের এ মহান ও মহৎ কর্ম প্রচেষ্টা সফল , সার্থক ও সমৃদ্ধি লাভ করুক যুগ থেকে যুগান্তরে। সাথে কামনা ও থাকছে, আমার তথা আমাদের অবসর বিনোদনের প্রতিটি মুহুর্ত পড়–ন , অন্যকে পড়তে উৎসাহিত করুন” এ শ্লোগান যেন হয় নিত্য সহচর। -লেখক : সভাপতি বিশ্বনাথ প্রেসক্লাব।

আরো সংবাদ